অনার্স শেষ বর্ষ এবং মাস্টার্সের পরিক্ষার্থীদের হলে ওঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আগামী ১৩ মার্চ আবাসিক হলগুলো খোলাকে সামনে রেখে চলছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষার কাজ।
প্রশাসন জানিয়েছে, হলে প্রবেশের সময় পরিক্ষার্থীদের অবশ্যই তাদের পরীক্ষার প্রবেশপত্র দেখাতে হবে। সরেজমিনে দেখা যায়, স্বাস্থ্যবিধির পাশাপাশি হলগুলোর ওয়াশরুম, ডাইনিং থেকে শুরু করে সার্বিকভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। কিছু হলে হলের মাঠও সংস্কার করা হচ্ছে। এছাড়া কয়েকটি হলে বিভিন্ন প্রয়োজনে আসা শিক্ষার্থীদের রুমও পরিষ্কার করা হচ্ছে। করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের এক বছর পর সেশনজট কমিয়ে আনতে পরীক্ষার্থীদের জন্য আগামী ১৩ মার্চ থেকে হল খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ঢাবি প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে গত ৩১ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর আগে গত জুলাই থেকে অনলাইনে পাঠদান শুরু হয় এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরে করোনার কারণে পরীক্ষা বন্ধ থাকায় বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারার আশঙ্কায় শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেয়ার দাবি জানায়। গত ডিসেম্বরে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, অনার্স শেষ বর্ষ এবং মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা সকলেই একসঙ্গে হলে উঠতে পারবে না। তাদেরকে পরীক্ষার তারিখ অনুযায়ী কয়েকটি শিডিউলে ভাগ করা হবে। একটি শিডিউলের পরীক্ষা শেষ হলে তারা হল ছাড়ার পর পরবর্তী শিডিউলকে হলে ওঠানো হবে। ‘পরীক্ষা শুরু হওয়ার সাত দিন আগে হলে উঠতে পারবে শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষা শেষ হলে তাদের হল ত্যাগ করতে হবে। অনার্স ও মাস্টার্সের পরীক্ষা শেষ হলে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এছাড়া হলে প্রবেশের জন্য শিক্ষার্থীদেরকে তাদের পরীক্ষার প্রবেশপত্র দেখাতে হবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কন্ট্রোলার অফিস থেকে হলগুলোকে একটা লিষ্ট দেয়া হবে। লিস্ট দেখে পরিক্ষার্থীদের হলে ওঠানো হবে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর একেএম গোলাম রাব্বানী বলেন, শুধুমাত্র অনার্স শেষ বর্ষ এবং মাস্টার্সের পরিক্ষার্থীদের জন্য সীমিত পরিসরে হল খুলে দেয়া হবে। অন্য কোনো শিক্ষার্থী হলে উঠতে পারবে না। শিক্ষার্থীদের হলে ওঠানোর জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। পরীক্ষা শুরু হওয়ার সাত দিন আগে একজন শিক্ষার্থী হলে উঠতে পারবে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই তাকে হল ত্যাগ করতে হবে। অনার্স শেষ বর্ষ ও মাস্টার্সের পরীক্ষা শেষে ক্রমান্বয়ে অন্য শিক্ষার্থীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন, আমারা হলের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করেছি। তবে এখনো আমাদের মূল অভিযান শুরু হয়নি। এছাড়া আমরা হলের রুম ডাইনিং পরিষ্কার করেছি। সোমবার এ বিষয়ে আমাদের একটা মিটিং আছে। মিটিং পরবর্তী আরো বেশি করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় জোর দেয়া হবে।
ফজলুল হক মুসলিম হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শাহ্ মো. মাসুম বলেন, হলে যত প্রকার আবর্জনা ছিলো তা আমরা পরিষ্কার করেছি। এছাড়াও হলের মাঠ পরিষ্কার করে তার ওপর মাটি দেয়া হয়েছে। সাথে একটি নার্সারি স্থাপনের কাজ চলছে। মশক নিধন, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ইত্যাদির ব্যাবস্থা করা হচ্ছে।
স্যার এ এফ রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান বলেন, হলে প্রত্যেক রুম পরিষ্কারের কাজ চলছে। এছাড়া ডাইনিং, রিডিং রুম, ওয়াশরুম পরিষ্কার করা হয়েছে। যেহেতু হলে সীমিত পরিসরে পরিক্ষার্থীদের ওঠানো হবে, তাই পরিক্ষার্থীদের বিবেচনায় ডাইনিং এ কতজন কাজ করবে তার তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরীন বলেন, শিক্ষার্থীরা তাদের জিনিসপত্র নেয়ার জন্য যখন যে রুমে আসে, সেই রুম আমারা তার উপস্থিতিতে পরিষ্কার করছি। আমরা আশা করছি খুব দ্রুতই আমরা রুম পরিষ্কারের কাজ শেষ করতে পারবো। স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে আমরা আগে থেকেই কাজ করছি, হলে পর্যাপ্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার, দৃশ্যমান যায়গায় মাস্ক পরিধান ইত্যাদি ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া আমাদের হলে এক রুমে দুই জনের বেশি থাকতে পারবে। ছোট রুমে একজনকরে শিক্ষার্থী থাকবে।
রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, আমরা প্রত্যেকটা বিল্ডিং, রুম, বারান্দা এবং লাইব্রেরি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করছি। এছাড়া ক্যান্টিন পরিষ্কারের কাজ চলছে। পাশাপাশি আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, থার্মাল স্ক্যানার মজুদ রেখেছি।