আলজেরিয়ায় ফ্রান্সের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রামের নেতা আমীর আবদুল কাদেরের সম্মানে ফ্রান্সে একটি ভাস্কর্য স্থাপনের প্রকল্পকে প্রত্যাখ্যান করেছে তার পরিবার। বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সিকে আমীর আবদুল কাদেরের নাতি মোহাম্মদ বুতালিব বলেন, ‘আমরা ফ্রান্সে আমীরের ভাস্কর্য স্থাপন প্রত্যাখ্যান করছি, যেখানে তিনি বন্দী ও কারারুদ্ধ ছিলেন।’ ফরাসি ঐতিহাসিক বেনজামিন স্তোরা গত ২০ জানুয়ারি উপনিবেশ ও আলজেরিয়ার লড়াইয়ের স্মৃতি বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল ম্যাক্রনের কাছে একটি প্রতিবেদন দেয়ার পর আমীর আবদুল কাদেরের পরিবারের এই মন্তব্য এলো। ওই প্রতিবেদনে ফ্রান্সে আবদুল কাদেরের সম্মানে তার একটি ভাস্কর্য স্থাপনের সুপারিশ করা হয়।
আমীর আবদুল কাদের (১৮০৮-১৮৮৩) ১৯ শতকে আলজেরিয়ায় ফরাসি ঔপনিবেশিক আগ্রাসনের প্রতিরোধ লড়াইয়ের অন্যতম নেতা। মোহাম্মদ বুতালিব বলেন, ‘আমরা ফরাসি প্রতিবেদনের সুপারিশের প্রত্যাখ্যানে ভার্চুয়াল আবেদনের জন্য স্বাক্ষর সংগ্রহের প্রস্তুতি নিচ্ছি… কেননা এটি ফ্রান্সের স্বার্থে নেয়া হচ্ছে, আলজেরিয়ার নয়।’
তিনি বলেন, ‘আলজেরিয়ার আমীরের নাম সারাবিশ্বেই পরিচিত এবং তার রাজনৈতিক ও প্রতিরোধের অবস্থানের মর্যাদায় ফ্রান্সে কোনো ভাস্কর্য তৈরির প্রয়োজন নেই, যে দেশটি ১৩২ বছর তার নিজের দেশকে দখল করে রেখেছিল।’ বুতালিব বলেন, ‘ফ্রান্স দাবি করে আমীর আবদুল কাদের ভ্রমণের জন্য সেখানে গিয়েছিলেন, কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো তিনি সেখানে বন্দী হয়ে গিয়েছিলেন। ওই দেশে তিনি কারাগারে বন্দী ছিলেন এবং অন্য বন্দীরা তাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল।’ মোহাম্মদ বুতালিব আলজেরিয়ার কর্তৃপক্ষের কাছে আলজেরীয় প্রতিরোধ সংগ্রামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক নিয়ে ইতিহাসের বিকৃতকরণে ফ্রান্সের প্রচেষ্টায় বাধা দেয়ার আহ্বান জানান। ইতোমধ্যে ফ্রান্সে আমীর আবদুল কাদেরের ভাস্কর্য স্থাপনের সুপারিশের বিরুদ্ধে ভার্চুয়াল আবেদনে ঐতিহাসিক, গবেষক, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদসহ এক হাজার ছয় শ’র বেশি লোক স্বাক্ষর করেছেন।
আলজেরীয় কর্তৃপক্ষের মতে ১৮৩০ থেকে ১৯৬২ পর্যন্ত আলজেরিয়ায় ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনকালে ৫০ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়। এই সময় দেশটিতে বিপুল লোক বাস্তুচ্যুত হয় এবং ঐতিহাসিক ও প্রতœতাত্ত্বিক বিভিন্ন দলিলসহ বিপুল সম্পদ ফ্রান্সে পাচার করা হয়।
আমীর আবদুল কাদেরকে আলজেরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তিনি একাধারে একজন লেখক, কবি, দার্শনিক, রাজনীতিবিদ এবং যোদ্ধা। ১৮৪৭ সালে তাকে বন্দী করে ফ্রান্সে নিয়ে যাওয়া হয় এবং ১৮৫২ সাল পর্যন্ত তিনি সেখানেই কারারুদ্ধ ছিলেন। পরে মুক্তি পেয়ে তিনি উসমানিয়া সালতানাতের রাজধানী ইস্তাম্বুল আসেন এবং সেখান থেকে বর্তমান সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে এসে বসবাস শুরু করেন। ১৮৮৩ সালে ৭৬ বছর বয়সে তিনি দামেস্কেই ইন্তেকাল করেন। আলজেরিয়ার স্বাধীনতার পর ১৯৬৫ সালে তার লাশ সিরিয়া থেকে আলজেরিয়ায় নিয়ে আসা হয় এবং রাজধানী আলজিয়ার্সে দাফন করা হয়। সূত্র : ইয়েনি শাফাক