সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২১ পূর্বাহ্ন

এলএনজির গ্যাসের সংকট বাড়ছে

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

সারা দেশে গ্যাস সংকটের বিষয়টি স্বীকার করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে স্বাভাবিকের চেয়ে দাম দ্বিগুণ হওয়ায় স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা হয়নি। এলএনজির দাম টনপ্রতি ৩০ ডলার বেড়েছে। এ কারণে সরবরাহ লাইনে এলএনজি কম যাচ্ছে। দাম বেড়ে যাওয়ায় রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস লিমিটেড (আরপিজিসিএল) গত নভেম্বর ও ডিসেম্বরে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজির দুটি চালান বাতিল করেছে।
স্বাভাবিক সরবরাহের চেয়ে ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলএনজি) কম যাচ্ছে গ্রিডে। এমনিতে পাইপলাইনে কনডেনসেট জমে যাওয়ায় শীতকালে গ্যাসের চাপ ঠিক রাখতে কম্প্রেসার বাড়াতে হয় বিতরণ কোম্পানিগুলোকে। এবার সরবরাহে এই বড় ঘাটতির কারণে রাজধানীসহ আবাসিক থেকে শিল্প গ্রাহকরা গ্যাসের তীব্র সংকটে পড়েছেন। এ সংকট তীব্রতর হওয়ারই আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পেট্রোবাংলার হিসাব অনুযায়ী, দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। বর্তমানে ২ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়। এর সঙ্গে এলএনজি সরবরাহ করা হয় আরো ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু গত ডিসেম্বরে এলএনজির বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়ায় জানুয়ারিতে হঠাৎ করে জাতীয় গ্রিডে ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ কমে যায়। এতে প্রভাব পড়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার গ্যাসের আবাসিক গ্রাহক থেকে শিল্পেও। এরপর ফেব্রুয়ারিতে আরো ২০০ মিলিয়ন এলএনজি যোগ করে মোট ৪০০ মিলিয়ন এলএনজি সরবরাহ করা হয়। কিন্তু তাতেও সংকট কমছে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
পেট্রোবাংলার গ্যাস উৎপাদন প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বর্তমানে দেশে মোট গ্যাস উত্তোলন ও আমদানীকৃত এলএনজি মিলিয়ে প্রায় ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট (১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তথ্য) গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। সরবরাহ লাইনে ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস কম যাওয়ায় প্রভাব পড়েছে রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকায়। রাজধানীর আজিমপুর, পূর্ব রাজাবাজার, জিগাতলা, মোহাম্মপুর, আদাবর, ভাটারা, বাড্ডা, গেন্ডারিয়া, তুরাগ, উত্তরখান, দক্ষিণখান, মিরপুরের কিছু অংশ, পল্লবী ও পুরান ঢাকার কয়েকটি এলাকায় সংকট বেশি হচ্ছে।
একদিকে বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় এলএনজি কেনা স্থগিত, অন্যদিকে দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদনও কমে আসছে। এক বছর আগেও গ্যাসের সরবরাহ ছিল ৩ হাজার ১৬৭ মিলিয়ন ঘনফুট। এখন সেখান থেকে আড়াই মিলিয়ন ঘনফুট কমেছে। দেশের খনি থেকে উৎপাদন হ্রাস ও আমদানীকৃত এলএনজি মিলিয়ে মোট সরবরাহ কমেছে ১০ শতাংশ।গ্যাস উত্তোলন-আমদানির এক বছরের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশীয় কোম্পানিগুলোর আওতায় থাকা গ্যাস কূপগুলো থেকে বর্তমানে ৮৩৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দৈনিক উত্তোলন করা হচ্ছে। যা ২০২০ সালের একই সময়ে ছিল ৯১৯ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল) উৎপাদন করছে ৬৫৯ মিলিয়ন
ঘনফুট; সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমিটেডের (সিজিএফসিএল) উৎপাদন ৯৬ মিলিয়ন ঘনফুট এবং বাপেক্সের উৎপাদন ৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট। যেখানে এক বছর আগেও বিজিএফসিএলের উৎপাদন ছিল ৭০৮ মিলিয়ন ঘনফুট, সিজিএফসিএলের ১১১ মিলিয়ন ঘনফুট ও পেট্রোবাংলার ছিল ৮০ মিলিয়ন ঘনফুট।
সংশ্লিষ্ট গ্যাস কোম্পানিগুলো বলছে, বহু পুরনো কূপ থেকে এখনো গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। ওয়ার্কওভার (হার্ডওয়্যার সংস্কার বা পরিবর্তন) না করায় গ্যাসের চাপ কমে আসছে। এর মধ্যে তিতাসের বেশ কয়েকটি কূপে ওয়েল হেড কম্প্রেসার বসিয়ে গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।
এ পরিস্থিতিতে এলএনজির বাজারে উত্থান-পতন থেকে ধারণা নিয়ে আগামীতে গ্যাস উত্তোলনে মনোযোগ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম। তিনি বলেন, গ্যাসভিত্তিক যেসব কলকারখানা গড়ে উঠছে তাতে এলএনজির মতো উচ্চমূল্যের জ্বালানির লোভ দেখিয়ে লাভ নেই। ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তবে জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব আনিসুর রহমান বলেন, এলএনজি নিয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা দুই বছরের। শুরুতেই স্পট মার্কেট থেকে আমরা কম মূল্যে এলএনজি কিনতে পেরেছিলাম। এখন দাম বেড়ে যাওয়ায় কম কেনা হচ্ছে। তবে শীত মৌসুম চলে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলেই মনে করছেন তিনি। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকার এলএনজি আমদানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। মোট ৭৬ কার্গো গ্যাস আমদানির লক্ষ্যে এরই মধ্যে ৩৫ কার্গো আমদানি করা হয়েছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com