রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৬ অপরাহ্ন

২৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

তালা ভেঙে প্রবেশকারীদের অবিলম্বে হল ত্যাগের নির্দেশ

দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় বন্ধের পর আগামী ২৪ মে (পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর) থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ১৭ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আবাসিক হল খুলে দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ভার্চুয়ালি এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। গত বছরের ১৭ মার্চ করোনার প্রাদুর্ভাব রুখতে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কয়েক ধাপে বাড়ানোর পর ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়। করোনার প্রাদুর্ভাব কমে আসায় চলতি বছরের শুরু থেকেই বিভিন্ন মহল থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়ার দাবি আসতে থাকে। এ নিয়ে আন্দোলনে নামে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
সর্বশেষ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর ফটকের তালা ভেঙে প্রবেশ করেন। এরপর ঢাবি, রাবিসহ আরও কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে বিশ্বের অনেক দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। আমাদেরও গত ১৭ মার্চ থেকে সব স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া না হলেও দেশের সব পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগামী ২৪ মে থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণি-ক্লাস কার্যক্রম শুরু করা হবে। এর আগে ১৭ মে থেকে সব আবাসিক হল খুলে দেয়া হবে।
দীপু মনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণি-ক্লাস চালুর আগ পর্যন্ত অনলাইনে ক্লাস চলমান থাকলেও কোন ধরনের পরীক্ষা নেয়া যাবে না। শ্রেণি-ক্লাস খোলার পর পরীক্ষা নেয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার আগে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও আবাসিক হলগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাজ শেষ করতে হবে। ক্যাম্পাস ও হলে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে সংস্কার কাজ করারও পরামর্শ দিয়েছেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় খোলার আগে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের করোনার টিকাদান নিশ্চিত করা হবে। টিকা প্রদানের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণি-ক্লাস শুরু করা হবে। ইতোমধ্যে তাদের টিকাদান কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তালা ভেঙ্গে হলে প্রবেশ করলেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পর এবার তালা ভেঙ্গে হলে প্রবেশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের শিক্ষার্থীরা। গতকাল সোমবার দুপুর ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা হলে প্রবেশ করেন।
শিক্ষার্থীরা জানায়, করোনা মহামারির কারণে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছেন। কিন্তু সব শিক্ষা কার্যক্রম চালু আছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাদে সব প্রতিষ্ঠান খোলা আছে। তাহলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন খোলা হচ্ছে না- এমন চিন্তা থেকে তারা হলে প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে হলের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মোনায়েম বলেন, ১২টার দিকে হলে শিক্ষার্থীরা প্রবেশ করেছে। আমরা প্রভোস্ট স্যারের রুমের সামনে অবস্থান করছি। স্যার অনলাইন ক্লাসে আছে। স্যার ক্লাস শেষ করলেই আমরা স্যারের সাথে কথা বলবো। হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার এ ব্যাপারে বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। দেখছি কী করা যায়।
এদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হল খোলার দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও সোমবার শিক্ষার্থীরা হল খোলার দাবিতে আন্দোলন করছেন। এর আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আজ সোমবার সকাল ১০টার মধ্যে হল ছাড়তে প্রশাসনের দেয়া নির্দেশনাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন হলে ওঠা শিক্ষার্থীরা। নিরাপত্তার কারণে তাদের গেরুয়াসহ আশপাশের এলাকায় যাওয়া সম্ভব নয় বলে তারা হলে থাকার কথাই জানিয়ে দিয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, শিক্ষার্থীদের বোঝানো হয়েছে হল ছেড়ে দেয়ার জন্য। তারা যদি চলে যায় তাহলে ভালো, কিন্তু যেতে না চাইলে পরে আলোচনা করে কী করা যায়, সে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এর আগে রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। সোমবার সকাল ১০টার মধ্যে তাদের হল ছাড়তে বলা হয়েছিল। অন্যথায় ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছিল।
জাবিতে হলে হলে প্রভোস্টদের অভিযান : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আবাসিক হলগুলো খালি করতে প্রভোস্টদের অভিযান শুরু হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সর্বশেষ কবরে জানা যায়, গতকাল সোমবার সকাল সোয়া ১১টায় প্রভোস্টদের নেতৃত্বে এই অভিযান শুরু হয়। এসময় প্রভোস্টদের সাথে হলের অন্যান্য দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকরা ছিলেন। এর আগে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সকাল ১০টা পর্যন্ত সময় বেধে দিয়ে রোববার রাতে নোটিশ জারি করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে শিক্ষার্থীরা এখনো যার যার হলে অবস্থান করছে।
আ ফ ম কামালউদ্দিন হলের প্রভোস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান অভিযান পরিচালনার সময় বলেন, ‘আমরা সরকারের নির্দেশনা জানাতে এসেছি। আইন ভঙ্গ করে হলে অবস্থান করা যাবে না। শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করছি যাতে তারা আইন মেনে হল ছেড়ে দেন।’ শিক্ষার্থীরা কোথায় যাবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা বাড়ি চলে যেতে পারেন। গেরুয়া এলাকার বিকল্প তো হল হতে পারে না।’ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি জানান, ‘গেরুয়া এলাকার সমস্যার ব্যাপারে আমরা কথা বলছি। আর আশুলিয়া থানায় মামলা করেছি।’ ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আরো জানান, ‘প্রত্যেক প্রভোস্ট তার নিজ নিজ হলে অভিযান করছে, শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলছে। সবাইকে অনুরোধ করছি হল ছেড়ে দেয়ার জন্য। তারপর প্রশাসনের অন্যদের সাথে বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’ অন্যদিকে, শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই হল ছাড়বে না বলে প্রভোস্টকে জানিয়ে দিয়েছে।
সকাল ১১টায় প্রভোস্ট কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের জানানো হয়, প্রতি হলে প্রভোস্টদের নেতৃত্বে অভিযান চালানো হবে। প্রভোস্টরা শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করবেন ও বুঝাবেন যাতে তারা আইন মেনে হল ত্যাগ করে।’
উল্লেখ্য, শনিবার এলাকাবাসীর সাথে সংঘর্ষের পর শিক্ষার্থীরা তালা ভেঙ্গে হলে অবস্থান নেয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের এমন পদক্ষেপে সিন্ডিকেটের আইনের লঙ্গন হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তি দেয়। রোববার (ভারপ্রাপ্ত) রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সোমবার সকাল ১০টার মধ্যেই শিক্ষার্থীদের নিজ উদ্যোগে হল ত্যাগ করতে বলা হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা হলেই অবস্থান করছে।
তালা ভেঙে প্রবেশকারীদের অবিলম্বে হল ত্যাগের নির্দেশ: দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হলের ফটকের তালা ভেঙে প্রবেশ করার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। অবিলম্বে এসব শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগ করার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। গতকাল সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ভার্চুয়ালি এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন।
ডা. দীপু মনি বলেন, এক শ্রেণির মানুষ বর্তমান সরকারকে নানাভাবে ঝামেলায় ফেলার চেষ্টা করলেও তারা ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমানে তাদের মতাদর্শের কিছু শিক্ষার্থীদের দিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধ থাকা আবাসিক হলের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করতে উসকিয়ে দেয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, কেউ কেউ বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতির নেয়ার জন্যও হলে ওঠার চেষ্টা করছে। সব বিষয় বিবেচনা করে আগামী ২৪ মে (পবিত্র ঈদুর ফিতরের পর) থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ১৭ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আবাসিক হল খুলে দেয়া হবে।
প্রথমে জোর করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা আবাসিক হলগুলোর ফটকের তালা ভেঙে প্রবেশ করেন। এরপর ঢাবি, রাবিসহ আরও কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে হল খোলার দাবিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। সবশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও জোর করে হলে প্রবেশ করে অবস্থান নেন। এমন পরিস্থিতিতে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে পবিত্র ঈদুর ফিতরের পর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্লাস-পরীক্ষা চালুর কথা জানালেন শিক্ষামন্ত্রী। সেই সঙ্গে জোর করে হলে প্রবেশ করা শিক্ষার্থীদের অবিলম্বে তিনি হল ত্যাগের নির্দেশ দেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও আবাসিক হলগুলো দীর্ঘ এক বছর থেকে বন্ধ রয়েছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বর্তমানে সেগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে হবে। ক্যাম্পাস ও আবাসিক হল খোলার পরে সবাই যাতে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে পারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সে ব্যবস্থা করতে হবে। দীপু মনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর সবার সুরক্ষায় শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের করোনা ভ্যাকসিন প্রদান করা হবে। এজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। দ্রুত সেটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। বর্তমানে শিক্ষকদের টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com