ক’দিন হলো রজব মাসের আগমন ঘটেছে। রজব মাস হিজরি মাসগুলোর মধ্যে একটি বিশেষ ও মহিমান্বিত মাসের নাম। এ মাস আসে রমজানের আগমনী বার্তা নিয়ে। করোনা মহামারীর এই দুর্যোগ সময়ে রজবের মতো মহিমান্বিত মাসগুলো আমাদের জন্য রহমতস্বরূপ। ইসলাম আগমনের পর বছরে ১২ মাসের মধ্য থেকে রজবসহ চারটি মাসকে আল্লাহ তায়ালা ‘আশহুরে হুরুম’ তথা সম্মানিত মাস বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা বারটি, যা আল্লাহর কিতাব (অর্থাৎ লাওহে মাহফুজ) অনুযায়ী সেই দিন থেকে চালু আছে, যেদিন আল্লাহ আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন। এর মধ্যে চারটি মাস মর্যাদাপূর্ণ। এটিই দ্বীনের সহজ-সরল দাবি। সুতরাং তোমরা এ মাসগুলোর ব্যাপারে নিজেদের প্রতি জুলুম করো না (সূরা তওবা : ৩৬)।
ইমাম আবু বকর জাসসাস রহ: বলেন, ‘এসব মাসে ইবাদতের প্রতি যত্নবান হলে, বাকি মাসগুলোয় ইবাদত করা সহজ হয়। আর এ মাসগুলোতে গোনাহ থেকে বেঁচে থাকলে অন্য মাসেও গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা সহজ হয়’ (আহকামুল কুরআন : ৩/১৬৩)।
রাসূল সা: এ মাসকে খুবই গুরুত্ব দিতেন। ফলে রজবের চাঁদ দেখা গেলেই তিনি কিছু বিশেষ আমল শুরু করতেন। হাদিস শরিফে এসেছে, হজরত আনাস রা: সূত্রে বর্ণিত, যখন রজব মাস শুরু হতো, নবী করিম সা: তখন এ দোয়াটি বেশি বেশি পড়তেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজাবা ওয়া শাবান, ওয়াবাল্লিগনা রমাদান।’ অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসকে বরকতময় করুন এবং আমাদেরকে রমজান মাস পর্যন্ত পৌঁছে দিন’ (সুনানে নাসাঈ : ৬৫৯)।
গোনাহের কারণে কলুষিত অন্তরাত্মাকে তওবার মাধ্যমে ধুয়েমুছে পরিষ্কার করে নিতে হবে রজব মাসে। হজরত আবু বকর বলখি রহ: বলেন, ‘রজব ফসল রোপণের মাস। শাবান ফসলে পানি সেচ দেয়ার মাস। আর রমজান হলো ফসল তোলার মাস।’ তিনি আরো বলেন, ‘রজব মাস ঠাণ্ডা বাতাসের মতো, শাবান মাস মেঘমালার মতো। আর রমজান মাস হলো বৃষ্টির মতো’ (লাতায়েফুল মাআরেফ : ১৪৩)।
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজব মাস থেকেই রমজানের প্রস্তুতি নিতেন। বেশি নফল রোজা ও ইবাদতে কাটাতেন রজব ও শাবান মাস। তাই আমাদেরও কর্তব্য হলো রাসূলের এসব সুন্নাহ অনুসরণ করে রজব মাসের হক আদায় করা এবং বেশি বেশি নফল নামাজ ও রোজা রাখা।
লেখক : শিক্ষক, জামিয়া আরাবিয়া কাসেমুল উলূম, কুমিল্লা
২