মার্চের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ছাত্র-শিক্ষক-নাগরিক সমাজের ব্যক্তিবর্গ। গতকাল শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় রাজশাহী মহানগরীর জিরো পয়েন্টে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে আজ আমাদের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা মেধাহীন প্রজন্ম হিসেবে গড়ে উঠছে। আমাদের সবাইকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে ও জোরালো দাবি জানাতে হবে।’ মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা জানায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শুধু আমরা নই, আমাদের অভিভাবকরাও দিন দিন দুশ্চিন্তা ও অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছে। অবিলম্বে আমাদের দাবি মেনে নিন। মানববন্ধনে অন্যান্য বক্তারা বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কারণে শুধু শিক্ষার মানই নয়, একইসঙ্গে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যেও ব্যাঘাত ঘটছে। তাই ঈদের আগে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হোক।
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন মুক্তিযোদ্ধা নুর হোসেন মোল্লা, অ্যাডভোকেট আবুল হাসনাত বেগ, রাজশাহী ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের সভাপতি হারুনুর রশীদ, রাজশাহী মহানগর ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি আব্দুল্লাহ বিন আফতাব, সাহেববাজার বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি অশোক কুমার সাহা, রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সমন্বয়ক আবদুল মজিদ অন্তর, যুব অধিকার পরিষদের সদস্য মহিবুল প্রমুখ। এসময় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, পেশাজীবী, ব্যবসায়ী, সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনটি সঞ্চালনা করেন অ্যাডভোকেট মুরাদ মোর্শেদ। এরপর দুপুর ১২টায় একই স্থানে চলমান পরীক্ষা কার্যক্রম স্থগিতের প্রতিবাদে ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক : করোনাভাইরাসের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে কিনা- সেই
বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চলছে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক। শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে এই আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শুরু হয়। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বৈঠক চলছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। বৈঠকে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন উপস্থিত রয়েছেন। এছাড়া বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আব্দুল মান্নান, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. কামাল হোসেন, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত রয়েছেন। বাংলাদেশে গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পর ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এরপর করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি ধাপে ধাপে বাড়িয়ে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত করা হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া যায় কিনা- সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে বসে সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গত ২২ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভা বৈঠকে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনার কথা জানিয়ে ওইদিন প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘সরকার খোলার (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান) পরিবেশটা প্রিভিউ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা ৫-৬ দিনের মধ্যে একটা মিটিংয়ে বসে যাব। এটা আন্তঃমন্ত্রণালয় মিটিং হবে।’ এরই মধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হলে ফেরার আন্দোলন শুরু করেছে। কোনো কোনো স্থানে শিক্ষার্থীদের তালা ভেঙে হলে প্রবেশের ঘটনাও ঘটে। এই পরিস্থিতিতে ২২ ফেব্রুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী ঘোষণা দেন, আগামী ২৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠদান কার্যক্রম শুরু হবে।