একটি দেশের ভবিষ্যৎ হলো সে দেশের তরুণ সমাজ। এ ভবিষ্যৎকে নষ্ট করারা অপকৌশল হচ্ছে অপসংস্কৃতিকে উৎসাহিত করে বাস্তবে তা প্রয়োগ করা। আমাদের সমাজের তরুণ-তরুণীদের ওপর অপসংস্কৃতির কুপ্রভাব অতি গভীর ও ব্যাপক। তারা সংস্কৃতির নামে, অপসংস্কৃতির চর্চায় মেতে উঠেছে। সিনেমার নাচ, গান পোশাক, এসব বেশির ভাগ সময় উদ্ভটভাবে সন্নিবেশিত হয়ে থাকে। তরুণরা অপসংস্কৃতিতে আকৃষ্ট হচ্ছে। তার কারণ এতে চমক ও উত্তেজনা রয়েছে, যা ক্ষণিকের জন্য তাদের কাছে আনন্দের মনে হয়ে থাকে। এতে একটা মোহ কাজ করে, এতেই যুবসমাজ ব্যাকুল হয়ে পড়ে। তরুণরা চঞ্চল, তারা চায় সদা নতুনত্বের সাথেই চলতে। এই এগিয়ে যাওয়াতে তারা যে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে তা তারা উপলব্ধি করতে পারছে না। সংস্কৃতি মূলত একটি দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার, একটা জীবনবোধ বিনির্মাণের কৌশল। এটি একটি মানুষের জীবনে শৈল্পিক প্রকাশ, সমাজজীবনে স্বচ্ছ দর্পণ। এ সংস্কৃতির দর্পণে তাকালে কোনো সমাজের মানুষের জীবনাচরণ স্পষ্ট দেখা যায়। অন্য কথা, সমাজের মানুষের জীবনাচরণ থেকেই একটা সংস্কৃতির জন্ম হয়ে থাকে। তবে সংস্কৃতি এমন কিছু নয় যে, তা এক ছাঁচেই তৈরি হবে, অথবা এর পরিবর্তন করা যাবে না। বরং সমাজ ও জীবন পরিবর্তনে এবং সময়ের ধারায় এ সংস্কৃতি পরিবর্তিত হতে পারে। এমন কি অন্য কোনো সংস্কৃতির সংস্পর্শে এসে পারস্পরিক বিনিময় করার মাধ্যমে নতুন নতুন উপাদান সংগ্রহ করে নিজেকে সমৃদ্ধ করা যেতে পারে। অন্যদিকে ভিনদেশী সংস্কৃতির তোড়ে নিজস্ব সংস্কৃতির অস্তিত্ব হারিয়েও ফেলতে পারে। আর দুর্ভাগা পরিণতি যে সমাজের হয় সে সমাজেই সংস্কৃতির বন্ধ্যাত্বের জন্ম হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের সমাজেও তাই ঘটছে। সুস্থ সংস্কৃতি যেমন সুস্থ ও সুন্দর পথ দেখায় তেমনি অসুস্থ সংস্কৃতি মানুষকে অসুস্থ পথে নিয়ে যায়।
বর্তমানের তরুণরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ : তাদের মাঝে সুস্থ সংস্কৃতি প্রবেশ করাতে হলে, যারা নাটক, সিনেমা তৈরি করছেন তাদেরকে সুস্থতার প্রতি যতœবান হতে হবে। তারা যদি ভালো কিছু তৈরি করেন যার মাধ্যমে তরুণদের মগজ থেকে উত্তেজিত চিন্তাভাবনা দূরীভূত হবে এবং এর মাধ্যমেই ফিরে আসতে পারে সুস্থ, সুন্দর এবং স্বাভাবিক একটি সংস্কৃতি। এসব দিক যত দিন আমাদের সুস্থ সংস্কৃতিতে প্রবেশ না করবে তত দিন অবধি এ সমাজ দেশের তরুণ প্রজন্ম অসুস্থই থেকে যাবে। সুস্থ সংস্কৃতি চর্চা করার জন্য অতিব জরুরি ইসলামী সংস্কৃতির চর্চা। কারণ এর মাধ্যমেই এনে দিতে পারে সুস্থ সংস্কৃতি, আর একটি সুস্থ সমাজ গড়ে তুলতে মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে সংস্কৃতির সুস্থতা। রাসূল সা: বনি কুরাইজাহর সাথে যুদ্ধের দিন হাসান ইবনে সাবিত রা: বলেছিলেন (কবিতা আবৃতি করে) মুশরিকদের দোষত্রুটি তুলে ধরো। এ ব্যাপারে জিবরাইল আ: তোমার সঙ্গী। হাসান ইবনে সাবিত রা:কে রাসূল সা:-এর কবি বা ইসলামের কবি বলা হতো। কারণ, কাফির কবিরা যেমন আল্লাহর রাসূল ও ইসলামের বিরুদ্ধে কুৎসা ও বদনাম করত, তেমনি তিনিও কবিতা ও সাহিত্যের মাধ্যমে কাফিরদের জবাব দিতেন’ (সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর-৪১২৪)। সাবিত রা:-এর জন্য মসজিদে নববীতে একটি কাব্য পাঠের মিম্বারও করা হয়েছিল। আজ বিশ্বব্যাপী যার আচরণ শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে সবার কাছে, তিনি আদর্শ সংস্কৃতির শিক্ষক। তাঁর জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র, পদচারণা শ্রেষ্ঠত্বের দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন যা ধারণে আমরা তাঁর শ্রেষ্ঠ উম্মতের মর্যাদার অধিকারী হতে পারব। রাসূল সা: বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি উত্তম চরিত্রের পূর্ণতা বিধানের জন্য প্রেরিত হয়েছি’ (কানজুল উম্মাল)।
মুসলিম পিতার আদর্শকে অনুসরণ : ইবরাহিম আ: মুসলিম জাতির পিতা এবং আল্লাহর বন্ধু। আমাদেরকে সৎকর্মপরায়ণ হতে হলে অবশ্যই ইবরাহিম আ:-এর আদর্শ অনুসরণ করতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘তার চেয়ে দ্বীনে আর কে উত্তম যে সৎকর্মপরায়ণ হয়ে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং একনিষ্ঠভাবে ইবরাহিমের মিল্লাতকে অনুসরণ করে? আর আল্লাহ ইবরাহিমকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছেন’ (সূরা নিসা : ১২৫)।
মুনাফেকির উৎসবের জন্ম : অপসংস্কৃতি ও অশ্লীলতা মুনাফেকির জন্ম দেয়। মুসলিম উম্মতের জন্য চরিত্র ধ্বংস করতে এটুকুই যথেষ্ট। চরিত্র রক্ষার তাগিদে প্রতিটি ব্যক্তির দায়িত্ব ও কর্তব্য উত্তম সংস্কৃতি আঁকড়ে ধরা, দেশ ও উম্মতের কল্যাণে তৎপরতা চালানো যাতে ইসলামী সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ে। জাবের রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘গান-বাজনা মানুষের অন্তরে মুনাফেকি উৎপন্ন করে’ (বায়হাকি)। সুস্থ সংস্কৃতির জন্য অবশ্যই ইসলামী সংস্কৃতির চর্চা করতে হবে। লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক