সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ১১:২১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
দিল্লি বিমানবন্দরে বাংলাদেশী গার্মেন্টসের রফতানি বাড়ায় ভারতীয়দের আপত্তি নকলায় বিএনপির ৪ নেতানেত্রীকে বহিষ্কার পালিয়ে বাংলাদেশে এলেন আরও ৮৮ বিজিপি সদস্য ১২ দিনে পানিতে ডুবে ১২ শিশুর মৃত্যু অর্থবছরের ছয় মাসে রাজস্ব আহরণ প্রায় ১৪ শতাংশ বেড়েছে: অর্থমন্ত্রী চাঁদপুর সেচ প্রকল্প বাঁধের মাটি ইটভাটায় ব্যবহারের অভিযোগ বরিশালে ৮ ঘন্টা বন্ধ থাকার পর অভ্যন্তরীন ও দুরপাল্লার বাস চলাচল শুরু : অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আপনাদের সহায়তায় সুস্থ জীবন চাই শ্রীমঙ্গলে সদ্যপ্রতিষ্ঠিত নূরে মদিনা মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা ও লেখাপড়ার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে মতবিনিময় সভা ফুলপুরে চেয়ারম্যান প্রার্থী হাবিবের মিছিল

অগ্নিঝরা মার্চ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২ মার্চ, ২০২১

মহান স্বাধীনতার স্মৃতিবাহী মাস, দুর্বার আন্দোলনে উত্তাল মার্চের তৃতীয় দিন। ১৯৭২ সাল থেকে দিনটি ঐতিহাসিক স্বাধীনতার ইশতিহার পাঠ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। ঊনিশশ’ একাত্তর সালের এই দিনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বিক্ষোভ ও প্রতিবাদে উত্তাল ছিলো। এ দিন থেকে হরতাল পালন শুরু হয়। এদিনই ঢাকার ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ আয়োজিত বিশাল সমাবেশে গোটা জাতির মুক্তির আকাক্সক্ষার সনদ তথা স্বাধীনতার ইশতিহার পাঠ করা হয়। এছাড়া উক্ত সমাবেশেই জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি নির্বাচন করা হয় বলে রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদীর ‘৭১ এর দশ মাস’ গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে ৬ মার্চের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিতের প্রতিবাদে সারা দেশে সর্বাত্মক অর্ধদিবস হরতাল পালিত হয়। স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া কর্তৃক ৩ মার্চ থেকে অনুষ্ঠিতব্য পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দ্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করার প্রতিবাদে পূর্ব পাকিস্তানের আমজনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। ১৯৭০ সালের নির্বাচন পরবর্তী পরিষদের অধিবেশনকে জনগণ অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক পর্যায়ের লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছিল। অন্যদিকে অধিবেশন স্থগিত করার পদক্ষেপ প্রকৃতপক্ষে ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের প্রদেশ পূর্ব পাকিস্তানকে সর্বতোভাবে অবজ্ঞার নামান্তর। স্বাধীনতার আওয়াজও উঠেছিল একই কারণে। উত্তেজিত জনতা বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানী পতাকায় অগ্নিসংযোগ করে।
একাত্তরের এই দিনে ঢাকা ছিল প্রতিরোধের নগরী। পাকিস্তানি শাসকদের কারফিউ অগ্রাহ্য করে ঢাকাসহ সর্বত্র অসংখ্য মিছিল হয়েছে। সংবাদপত্রে যাতে দুর্বার আন্দোলনের খবর প্রকাশিত হতে না পারে সে জন্য সামরিক জান্তা সেন্সরশিপ আরোপ করেছিল। এই দিন আন্দোলনরত বাঙালিদের ওপর গুলী চালায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর গুলীতে চট্টগ্রাম ও খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রাণ হারান বীর বাঙালিদের কয়েকজন। বর্বর এ ঘটনার প্রতিবাদে রাজধানী ঢাকাসহ জেলা শহরগুলোর রাজপথে নেমে আসেন হাজার হাজার জনতা।
অগ্নিগর্ভ মার্চের বাঙালির প্রবল আন্দোলনে দিশাহারা হয়ে পড়ে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা। বাঙালির এই আন্দোলন কঠোরভাবে দমন করার ব্যাপারে নীলনকশা করতে থাকে সামরিক জান্তা ও তাদের দোসররা। বিশ্বের কাছে স্বাধীনতার জন্য বাঙালির এই বাঁধভাঙ্গা আন্দোলন-সংগ্রামের খবর যাতে কোনোভাবেই যেতে না পারে সেজন্য তৎপর হয়ে ওঠে পাকিস্তানী জেনারেলরা। শুধু সেন্সরশিপ আরোপই নয়, কোনোভাবেই যাতে বাঙালির আন্দোলন-সংগ্রামের খবর ছাপা না হয় সে জন্য প্রতিটি সংবাদপত্রের অফিসে ফোন বা সশরীরে গিয়ে হুমকি-ধমকিও দেয়া হয়।
হরতালে উত্তাল সেই আন্দোলনের অংশ হিসেবে একাত্তরে আজকের দিনে পল্টন ময়দানে আয়োজিত জনসভায় স্বাধীনতাকামী মানুষের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভাষণ দিয়েছিলেন। একই দিন ছাত্র ও যুব নেতাদের নিয়ে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। এর থেকে ‘পূর্ব পাকিস্তান’ শব্দটি বাদ দেয়া হয়। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের ঘোষণা ও কর্মসূচি সংবলিত এক নম্বর ইশতিহার প্রকাশ করা হয়। স্বাধীনতার ইশতিহার পাঠ করেন তৎকালীন স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা, অবিভক্ত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এবং পরবর্তীতে বিএনপি নেতা ও সাবেক মন্ত্রী শাজাহান সিরাজ।
ইশতিহারে বলা হয়, দেশের প্রতিটি গ্রাম, মহল্লা, থানা, মহকুমা ও জেলায় স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করতে হবে। গ্রামে গ্রামে, এলাকায় এলাকায় গঠন করতে হবে মুক্তিবাহিনী। এই ইশতেহার পাঠের মধ্যদিয়েই স্বাধীনতার ঘোষণা, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের আহ্বান, জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীতের অনুমোদনসহ স্বাধীনতার পূর্ণাঙ্গ কর্মসূচি ঘোষণা করে উপস্থিত লাখ লাখ মানুষের অনুমোদন নেয়া হয়।
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান ৩ মার্চে প্রধান কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের এক বৈঠক আহ্বান করেন। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান সংবাদপত্রে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, এমন কতিপয় লোকের সঙ্গে আমাদের বৈঠকে বসার আহ্বান জানানো হয়েছে, যাদের চক্রান্তের কারণে নিরীহ, নিরস্ত্র, কৃষক, শ্রমিক ও ছাত্রকে প্রাণ দিতে হয়েছে। এদিন পাঞ্জাব পাকিস্তান ফ্রন্ট (পিপিএফ) ভুট্টোর ভূমিকার চরম নিন্দা করেন। তারা বাংলার জনগণের প্রতি অত্যাচার বন্ধের আহ্বান জানান।
বাংলা একাডেমি প্রকাশিত আসাদ চৌধুরীর ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক গ্রন্থেও উল্লেখ করা হয়- “৩ মার্চে ইয়াহিয়ার দশনেতার বৈঠকের প্রস্তাব বঙ্গবন্ধু প্রত্যাখ্যান করেন। ঐদিন বিকেলে ৬ মার্চ পর্যন্ত সকাল ৫টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার ঘোষণাপত্র প্রকাশিত হয়। এ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়েছিলো আ স ম আব্দুর রব, আবদুল কুদ্দুস মাখন, নূরে আলম সিদ্দিকী এবং শাজাহান সিরাজকে নিয়ে।”
অন্যদিকে, ইয়াহিয়া খান এদিনও পশ্চিম পাকিস্তান থেকে অবাঙালি সেনা পাঠানো অব্যাহত রাখেন। একই সাথে এদিন দুপুরের দিকে চট্টগ্রামে প্রচন্ড গোলযোগ হয়। অবাঙালি ঘাঁটিগুলোতে সেনাবাহিনীর স্পেশাল গ্রুপ (কমান্ডো) এবং গুপ্তচররা আগে থেকেই অবস্থান নিয়েছিল এবং এসব জায়গা থেকে নিরস্ত্র জনতার ওপর গুলী চালানো হয়। শুধু তাই নয়, অনেক স্থানে মারাত্মক অস্ত্র নিয়ে সরাসরি আক্রমণও পরিচালনা করা হয়। এমনকি এদের মেয়েরা বাড়ির ছাদ থেকে গরম পানি ঢেলে দেয় জনতার ওপর।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com