সেচে সংকট সামাল দিতে এরমধ্যেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগ আলাদা বৈঠক করেছে। এরমধ্যে একটি বৈঠকে সেচে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যটিতে সেচে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি তেল সরবরাহ নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এবার সেচের জন্য বিদ্যুতের মোট চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৪১১ মেগাওয়াট। এরমধ্যে উত্তরবঙ্গের রাজশাহী এবং রংপুরে সেচের বিদ্যুৎ চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ১৯২ মেগাওয়াট, যা মোট সেচের বিদ্যুৎ চাহিদার ৪৯ ভাগ। দেশের প্রধান ধান উৎপাদন ক্ষেত্র উত্তরবঙ্গে বিদ্যুতের সঞ্চালন ব্যবস্থা সন্তোষজনক না হওয়ার পাশাপাশি রয়েছে তিস্তার পানি সংকট। সব মিলিয়ে সেচের আগে চাষির কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। যদিও সরকার বলছে, সেচ সফল করতে নেওয়া হয়েছে সব উদ্যোগ।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, এবার দেশে মোট সেচকাজে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ২ হাজার ৪১১ মেগাওয়াট। এরমধ্যে রংপুরে সর্বোচ্চ ৬৪১ মেগাওয়াট। এরপর রাজশাহীতে ৫৫১ মেগাওয়াট। ময়মনসিংহ অঞ্চল ৫১২ মেগাওয়াটের চাহিদা নিয়ে রয়েছে তৃতীয় স্থানে। এছাড়া খুলনা এলাকায় ৩২৭, কুমিল্লায় ১৬২, ঢাকায় ১৪৬, সিলেটে ৩০, চট্টগ্রামে ২৬ এবং বরিশালে ১২ মেগাওয়াটের চাহিদা রয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র বলছে, রাজশাহী, রংপুর ও ময়মনসিংহ এলাকায় এখনও সঞ্চালনে সমস্যা রয়েছে। ফলে এসব জায়গায় সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখতে সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিলেও একেবারে লোডশেডিংমুক্ত রাখা যাবে না।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) সূত্র বলছে, বোরোতে মোট আবাদি জমির মধ্যে ১৫ লাখ তিন হাজার ৮৫৮ হেক্টর জমি ভূগর্ভের ওপরের পানি ব্যবহার করে। যা মোট বোরো আবাদের মধ্যে ২৬ শতাংশ। অন্যদিকে ভূগর্ভের পানি ব্যবহার করে ৭৩ শতাংশ জমি, যার পরিমাণ ৪০ লাখ ৮৩ হাজার ৬২৪ হেক্টর।
দেশে ব্যবহৃত মোট জ্বালানির প্রায় ৭৩ দশমিক ১১ ভাগ ডিজেল। ডিজেলের ১৮ ভাগ ব্যবহৃত হয় কৃষি খাতে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রমতে, ২০২০-২০২১ সালের কৃষিসেচ মৌসুমে ডিজেল চালিত যন্ত্রের জন্য ডিজেল ও লুব অয়েলের (নভেম্বর ২০২০ থেকে মে ২০২১ পর্যন্ত) প্রাক্কলিত চাহিদা যথাক্রমে ১৯ লাখ ৩৯ হাজার ৩৭০ মেট্রিক টন (ডিজেল) ও ৫১ হাজার ৩৪ মেট্রিক টন (লুব অয়েল)। ডিজেলসহ অন্যান্য জ্বালানি পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। বিপিসি/বিপণন কোম্পানি পর্যায়ে প্রায় ৮৪ ভাগ জ্বালানি তেল নৌপথে, ৯ ভাগ রেলপথে এবং ৭ ভাগ সড়ক পথে পরিবহন হয়ে থাকে।
বিদ্যুৎ জ্বালানি এবং খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, পরিকল্পিতভাবে সেচ মৌসুমে সারাদেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও ডিজেল সরবরাহ অব্যাহত রাখা হবে। কৃষিতে সারা বছর জ্বালানি তেলের চাহিদা থাকলেও সেচ মৌসুমে এটা বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চলে ডিজেলের চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। যেকোনও মূল্যে কৃষিক্ষেত্রে জ্বালানি তেল সময় মতো সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। পিজিসিবির নির্বাহী পরিচালক মাসুম আলম বকশি বলেন, উত্তরাঞ্চলের বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ওই এলাকায় দুটি তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে গেলে আমরা এবারের গ্রীষ্মের চাহিদা পূরণ করতে পারবো। তিনি বলেন, রংপুর ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি সমস্যা রয়েছে।