‘‘দিদির পাশে আগেও ছিলাম, আজীবন থাকব।’’ তৃণমূলে যোগ দিয়ে এ ভাবেই আনন্দবাজার ডিজিটালের সঙ্গে সাক্ষাৎকার শুরু করলেন অভিনেত্রী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রশ্ন: রাজনীতিতে যোগ দিয়ে কেমন লাগছে?
সায়ন্তিকা: খুব ভাল। বরাবরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন জানিয়ে এসেছি। তাঁর সঙ্গে প্রচারেও থেকেছি। কিন্তু দলে নাম লিখিয়ে যেন আজ থেকে দিদির পাশে পাকাপাকি ভাবে থাকার ছাড়পত্র পেলাম। এই আনন্দ এক কথায় বোঝানো খুব মুশকিল।
প্রশ্ন: রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি তো চলছিলই?
উত্তর: সত্যি বলব? খুব ভেবেচিন্তে কোনও দিনই কিছু করি না। অভিনয়কে পেশা হিসেবে বাছার সময়েও করিনি। এ বারও তাই-ই। কিছুটা সময়, কিছুটা পরিস্থিতি, কিছুটা কপালের উপরেও ছেড়ে দিই। তার পরে যেটা মনে হয়, সেটাই করি। এ বার মনে হল, এত গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনেও সরাসরি কাজ করব না? তখনই ভাবলাম লড়াইয়ে নামতে হলে, দিদির পাশে থেকেই তা করতে হবে।
প্রশ্ন: এখন কোথায় আছেন?
উত্তর: গড়বেতায় একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আছে। সেখানে যোগ দিতে যাচ্ছি।
প্রশ্ন: আপনার এই সিদ্ধান্ত জেনে মা-বাবা কী বলছেন?
উত্তর: ওঁরা খুশি। আশীর্বাদ করেছেন অন্তর থেকে। আমার প্রতিটা কাজেই ওঁদের সমর্থন পাই। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া।
প্রশ্ন: আর অভিনেতা বন্ধুরা? যাঁরা আগে দিদির সমর্থক ছিলেন, কিন্তু এখন আর নেই? তাঁরা কী বললেন?
উত্তর: আমার মন থেকে যা ইচ্ছে হয়, সেটাই করি। সে ঠিক, ভুল যা-ই হোক। কখনও কেউ কিছু বললেও তার থেকে সরে আসিনি। আসি না। এ ক্ষেত্রেও তা-ই। আর তাই, সবাই দল বেঁধে অন্য স্রোতে গা ভাসালেও, আমি যেখানে ছিলাম, সেখানেই আছি। একদম মন থেকে। প্রশ্ন: তারকা বন্ধুদের সঙ্গে বিরোধিতা শুধুই রাজনৈতিক মঞ্চে? উত্তর: ( হেসে ফেলে) বন্ধুত্বে কোনও বিরোধিতা হয় না।
প্রশ্ন: জিৎ কী বলছেন? তিনিও তৃণমূলে আসছেন?
উত্তর: জিৎদা আমার ভাল কাজে সব সময়েই সমর্থন জানান। এ ক্ষেত্রেও জানাবেন। ভুল হলে ধরিয়ে দেন। সেটাও দেবেন আগামী দিনে। আর ওঁর রাজনৈতিক চিন্তা-ভাবনা সম্পর্কে আমি কী করে বলব? যেটা ভাল বুঝবেন, সেটাই করবেন।
প্রশ্ন: আগামী নির্বাচনে কী ভাবে দিদির হাত আরও শক্ত করবেন?
উত্তর: এ ক্ষেত্রে আমার শিল্পী সত্ত্বা কাজে লাগবে। এত দিন আড়াই ঘণ্টা ধরে সিনেমার মাধ্যমে সকলকে আনন্দ দিয়েছি। নানা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তাঁদের কাছাকাছি এসেছি। মানুষ সব দুঃখ-কষ্ট ভুলে আমাদের কাজ দেখেছেন। এ বার দিদির দেখানো পথে চলে তাঁদের পাশে থাকব। তাঁদের জন্য কাজ করব।
প্রশ্ন: রাজনীতিতে এলে কাজের সুযোগ কি বেশি মেলে?
উত্তর: আমি মনে করি, কাজ বলতে আপাতত আমার প্রাথমিক দায়িত্ব দিদির কথা সারা রাজ্যে আরও বেশি করে ছড়িয়ে দেওয়া। সিনেমার জগতে কাজ করি বলে, সাধারণ মানুষ আমাদের চেনেন। ভালবাসেন। আশীর্বাদও করেন। আমি যদি সেই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে শাসকদলের কথা তাঁদের সামনে তুলে ধরতে পারি, তাঁরা শুনবেন। এতে মুখ্যমন্ত্রীর হাত যেমন শক্ত হবে, রাজ্যে ঘাসফুলও ফুটবে বেশি। দলের বাইরে থেকে প্রচার আর দলে নাম লিখিয়ে প্রচারের এটাই পার্থক্য। একই ভাবে, এমন কিছু করব না, যাতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে।
প্রশ্ন: নায়িকা রাজনীতিতে এলেই যে ট্রোলের শিকার হন? সামলাতে পারবেন তো?
উত্তর: ‘অভিনেত্রী’ সায়ন্তিকাও কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে ট্রোলের শিকার হয়েছেন। আমার চারপাশে যদি ১০০ জন মানুষ থাকেন, আমি চাইলেও কি তাঁরা সকলে আমাকে সমর্থন জানিয়েছেন এত দিন? একেবারেই না। রাজনীতিতেও সেটাই হবে। আমার সব কথা, বক্তব্য সকলের ভাল না-ই লাগতে পারে। তাঁরা সেটা জানাবেন। আমিও খোলা মনে নেব। সমালোচনা তো সংশোধনের প্রথম ধাপ। এতে আমার কাজ আরও ভাল হবে। প্রশ্ন: প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছে আছে? হলে কোথা থেকে লড়বেন?
উত্তর: একটাই ইচ্ছে, আমার অনুরাগীদের মধ্যে নিজের মতো করে দিদির কথা ছড়িয়ে দেব। বাকিটা দিদির দায়িত্ব। দল যে ভাবে কাজ করতে বলবে, সে ভাবেই করব। সদ্য তৃণমূলে যোগ দিলাম। দলীয় পতাকা নেওয়ার পরে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এসেছি গড়বেতায় যাব বলে। ফলে, সবটা আজকেই জেনে উঠতে পারিনি। তবে সকলে যদি বিশেষ প্রশিক্ষণ নেন, আমিও নেব। এবং প্রতি দিন একটু একটু করে জানব দলের কাজের নিয়ম। প্রশ্ন: কোন দল জিতবে? কে জিতবেন, যশ না নুসরত?
উত্তর: এই প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নেই। আমি জানি, বাংলার ভাগ্য নির্ধারণের এটাই উপযুক্ত সময়। রাজ্যবাসী জানেন, কোন দল, কোন প্রার্থী বাংলার জন্য শ্রেয়। মানুষ তাঁদেরই বেছে নেবেন। আমার তরফ থেকে সকলের জন্য রইল আন্তরিক শুভেচ্ছা।