ভাড়ায় হুইলচেয়ার এনে চলাচল করা দুই প্রতিবন্ধীকে হুইলচেয়ার ও আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। রোববার (৭ মার্চ) জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে হুইলচেয়ার হস্তান্তর করা হয়। এ সময় জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, ইতিমধ্যে বরিশালের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী জেলাকে কার্যত ভিক্ষুকমুক্ত করতে এক দিনের বেতন প্রধানমন্ত্রীর ফান্ডে জমা দিয়েছি। আমরা কাজ করছি যেন সুন্দর বরিশাল গঠন করা যায়। বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের সর্বস্তরের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য চিন্তা করেন। তিনি গরিব-অসহায়-দুস্থদের সহায়তায় প্রাধান্য দেন সবার আগে। সে জন্যই আজ এই প্রতিবন্ধী দুজনের প্রয়োজন অনুসারে সাহায্য করা সম্ভব হয়েছে। তিনি আরো বলেন, “আজ যে দুজন মানুষকে হুইলচেয়ার দিয়েছি, তারা বরিশালের লোক নন। প্রয়োজনের তাগিদে বরিশালে এসেছেন। আমরা তাদের দুঃখ-দুর্দশা জানতে পেরে পাঁচ হাজার টাকা ও দুটি হুইলচেয়ার দিলাম।” হুইলচেয়ার পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন প্রতিবন্ধী শহিদুল ও ফাতেমাকে দেখাশোনা করা আনোয়ারা বেগম। তিনি জেলা প্রশাসককে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আপনি আমাদের সারা জীবনের দুঃখ ঘোচালেন। দুটি হুইলচেয়ারের জন্য সারা দেশে ঘুরছি। আপনি না হলে আরও কত দিন এই দুঃখ থাকত তা জানি না। আনোয়ারা বলেন সাংবাদিকদের কারনে আজ হুইলচেয়ার পেয়েছি। যারা পত্রিকায় আমাদের কষ্ঠের কথা তুলে ধরেছে তাদের আল্লাহ রহমত করুক। আপনারা আমাদের কথা লিখেছেন বলেই আমরা আজ দুটি হুইলচেয়ার পেলাম। প্রতিবন্ধী শহিদুল ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনা আমাদের প্রতিবন্ধী ভাতা দিয়েছেন। দোয়া করি, আল্লাহ যেন তার প্রতি সদয় হন। তার জন্য ভালোভাবে আমাদের মানবজনম পার করতে পারি। জেলা প্রশাসনের প্রবেশন কর্মকর্তা সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, আমরা সব সময় চেষ্টা করছি প্রকৃত অসহায়দের সাহায্য করতে। তাদের হুইলচেয়ারের অভাবের বিষয়টি জানতে পেরে জেলা প্রশাসক স্যারের সঙ্গে আলাপ করায় তিনি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড কানিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ারা বেগমের ১৯ বছরের মেয়ে ফাতেমা আক্তার ও চাচাশ্বশুর শহিদুল ইসলাম বহুমাত্রিক শারীরিক প্রতিবন্ধী। অন্ধ, কালা, কুঁজো। এ ছাড়া তাদের শরীরে বাসা বেঁধেছে একাধিক রোগ। সুদূর গাইবান্ধা থেকে বরিশালে এসেছেন শহিদুল ইসলাম, আনোয়ারা বেগম ও ফাতেমা আক্তার। মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে হুইলচেয়ার কেনার জন্য। ২২ দিন আগে বরিশালে এলেও তাদের চলাচলের সাহায্যার্থে আরেক প্রতিবন্ধীর কাছ থেকে দিনে ৫০ টাকা ভাড়ায় হুইলচেয়ার এনে চলাচল করতে হতো। বরিশালের নদী বন্দর-সংলগ্ন স্টিমারঘাট এলাকায় পরিত্যক্ত একটি বেঞ্চের পাশে প্লাস্টিকের বস্তা বিছিয়ে বসবাস করছে পরিবারটি। শহিদুল ও ফাতেমা শারীরিক প্রতিবন্ধী। তাদের চলাচলের জন্য নেই হুইলচেয়ার। শেষে আরেক প্রতিবন্ধীর কাছ থেকে হুইলচেয়ার এনে কোনোরকমে চলছে দিন। বিনিময়ে দিতে হচ্ছে ৫০ টাকা করে ভাড়া। এই নিয়ে শনিবার (৬ মার্চ) পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি জেলা প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর হলে রোববার দুপুর সাড়ে ১২টায় হুইলচেয়ার ও নগদ অর্থ প্রদান করেন জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) নাজমূল হুদা, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট সুব্রত বিশ্বাস দাস, প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র বরিশালের কনসালট্যান্ট ডা. মননুজা রহমান প্রমুখ।