সরকারি হাসপাতালের বিপুল পরিমান ওষুধ পাচারের খবর পেয়ে সংবাদকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে ছয়টি বস্তাভর্তি ওষুধ পাচারের ছবি তোলায় ক্ষিপ্ত হয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার। তাদের নির্দেশে হাসপাতালের দুইটি গেট তালাবদ্ধ করে দশজন সংবাদকর্মীকে প্রায় দুইঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরবর্তীতে খবর পেয়ে অন্যান্য সংবাদকর্মীরা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার থানা পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে রাত সাড়ে দশটার দিকে অবরুদ্ধ সাংবাদিকদের উদ্ধার করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার দিবাগত রাতে জেলার গৌরনদী উপজেলা হাসপাতালে। অবরুদ্ধ থাকা অবস্থায় সংবাদকর্মীদের ফেসবুক লাইভে বিষয়টি দেখে হাসপাতাল কম্পাউন্ডে শত শত এলাকাবাসী জড়ো হয়ে রাতেই অভিযুক্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং আবাসিক মেডিক্যাল অফিসারকে প্রত্যহারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ইউএনও’র সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস পুরো ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আশ্বাস দিয়ে রাত একটার দিকে উত্তেজিত এলাকাবাসিকে শান্ত করেছেন। জানা গেছে, শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে আটটার দিকে উপজেলা হাসপাতালের পাশের নির্জনস্থানে বিপুল পরিমান ওষুধ পোড়ানো ও পাচারের খবর পেয়ে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। এসময় সংবাদকর্মীরা দেখতে পান ছয়টি বস্তা ভর্তি সরকারি ওষুধ হাসপাতাল থেকে পাচার করে নিয়ে যাচ্ছেন আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ মাজেদুল হক কাওসার ও তার বহিরাগত ৪/৫ জন সহযোগিরা। এসময় সংবাদকর্মীরা ছবি তুলতে গেলে মাজেদুল হক কাওসার ও তার সহযোগিরা পাচারের উদ্দেশ্যে নেয়া ২০২২ সাল পর্যন্ত মেয়াদের বেশ কিছু সরকারি ওষুধ ফেলে পালিয়ে যায়। কিছুসময় পর সংবাদকর্মীরা হাসপাতাল ত্যাগ করতে গিয়ে দেখতে পায় হাসপাতালের দুইটি গেট তালাবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। তাৎক্ষনিক বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করেন অবরুদ্ধ সংবাদকর্মীরা। ইউএনও ঘটনাস্থলে পৌঁছে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে থাকেন। পরবর্তীতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রাত সাড়ে দশটার দিকে তালা খুলে দেয়ার পর অবরুদ্ধ সংবাদকর্মীরা মুক্ত হন। পরবর্তীতে ইউএনও’র নির্দেশে থানা পুলিশ তল্লাশী চালিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ সাইয়্যেদ মোহাম্মদ আমরুল্লাহ এবং আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ মাজেদুল হক কাওসারের হাসপাতাল কোয়ার্টারের বাসার পাশের ঝোপ জঙ্গলের মধ্যথেকে বস্তাভর্তি পাচারকরা সরকারি ওষুধ ও ইনজেকশন জব্দ করেন। যার প্রত্যেকটির মেয়াদ রয়েছে আগামী ২০২২ সাল পর্যন্ত। স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিষয়টি ধামাচাঁপা দেয়ার জন্য অভিযুক্ত চিকিৎসকদের পক্ষালম্বন করে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছেন। এলাকাবাসীর দাবি, সরকারের মহতি উদ্যোগে গ্রামের অসহায়, দুঃস্থদের জন্য বিনামূল্যে ওষুধ বরাদ্দ করা হলেও গৌরনদী উপজেলা হাসপাতাল থেকে কোন ওষুধ সরবরাহ করা হয়না। কারণ বিভিন্ন কোম্পানীর ওষুধ লিখলে ওই কোম্পানীর প্রতিনিধিদের মাধ্যমে চিকিৎসকদের মোটা অংকের টাকা কমিশন দেয়া হয়। সরকারের নেয়া মহতি উদ্যোগ ম্লান করার ফলে হাসপাতালে বরাদ্দকৃত বেশ কিছু ওষুধের ডেট ওভার হয়ে গেছে। বাকি ডেট থাকা ওষুধ ও ইনজেকশন বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকের মাধ্যমে ব্যবহার করিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্যই পাচার করা হচ্ছিলো। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ সাইয়্যেদ মোহাম্মদ আমরুল্লাহ নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, স্টোর কিপার ডেট ওভার কিছু ওষুধ পুড়িয়ে ফেলেছে। বস্তাভর্তি পাচারকরা (ডেট থাকা) সরকারি ওষুধ উদ্ধার এবং সাংবাদিকদের জিম্মি করে রাখার ব্যাপারে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ মাজেদুল হক কাওসার পুরো ঘটনার দায়ভার স্টোর কিপার সাইদুল ইসলামের উপর চাঁপিয়ে দিয়ে নিজেকে নির্দোষ সাজানোর চেষ্ঠা করেন। তবে সাংবাদিকদের ধারন করা ভিডিও ফুটেজে ঘটনাস্থলে তার (মাজেদুল কাওসার) উপস্থিতি থাকার ব্যাপারে তিনি কোন কথা বলতে রাজি হননি। সার্বিক বিষয়ে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, সংবাদকর্মীদের অবরুদ্ধর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের উদ্ধার করা হয়েছে। পাশাপাশি বেশকিছু সরকারি ওষুধ জব্দ করা হয়। যার অধিকাংশরই ডেট রয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক তদন্তে হাসপাতালের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে শনিবার দিবাগত রাত ৮ টা ২৩ মিনিটের সময় হাসপাতাল থেকে অসংখ্য ওষুধের কার্টুন ট্রলি ভর্তি করে বাহিরে নেয়া হচ্ছে। পুরো ঘটনাটি সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করার পাশাপাশি একটি তদন্ত কমিটি গঠণ করা হয়েছে। কমিটির রির্পোট পাওয়ার পর যার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত হবে তার বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। অপরদিকে গ্রামের অসহায়, দুঃস্থদের জন্য জনবান্ধন সরকারের বরাদ্দ করা সরকারি ওষুধ পাচারের ছবি তুলতে গিয়ে হাসপাতালের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার রোষানলে সাংবাদিকদের অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বরিশালের সাংবাদিক সমাজ। অনতিবিলম্বে অভিযুক্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং আবাসিক মেডিক্যাল অফিসারকে প্রত্যহারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা না হলে সাংবাদিকরা তীব্র আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলেও হুশিয়ারী দিয়েছেন।