সুইডেনের ভি-ডেম ইনস্টিটিউটের রিপোর্ট
ভ্যারাইটিস ডেমোক্রেসি বা ভি-ডেম ইনস্টিটিউটের উদারনৈতিক গণতন্ত্র ইনডেক্সে (এলডিআই) বিশ্বের ১৭৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে ১৫৪তম অবস্থানে। সংস্থাটির এ বছরের গণতন্ত্র প্রতিবেদনে বাংলাদেশের স্কোর শূন্য দশমিক এক। শূন্য দশমিক ৮৮ স্কোর নিয়ে এই সূচকে প্রথমস্থানে রয়েছে ডেনমার্ক। এই রিপোর্টেই ভারতকে ‘নির্বাচনী স্বৈরাচার’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
এই বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বর্তমান শাসন ব্যবস্থাকে ‘নির্বাচিত একনায়কতন্ত্র’ বিভাগে রাখা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে হংকংসহ, বাংলাদেশ, হাঙ্গেরি, ফিলিপাইন, তানজানিয়ার মতো জনবহুল দেশগুলো একনায়কতান্ত্রিক দলের অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা কয়েকটি বড় ও প্রভাবশালী দেশও আছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, এলডিআইতে যেসব দেশের লক্ষণীয় পতন হয়েছে তার মধ্যে অন্ততপক্ষে ১৫টি দেশে ‘নির্বাচিত একনায়কতন্ত্র’ চলমান। ২০১০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে গণতন্ত্রের অবস্থার তুলনা করে দেয়া এই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বাংলাদেশ ‘ক্রমশ স্বৈরতান্ত্রিক হচ্ছে’। ভি-ডেমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের প্রতিনিধিত্বকারী দেশ ভারত ‘নির্বাচিত একনায়কতন্ত্রের’ দেশে পরিণত হয়েছে। সেখানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের প্রতি হুমকি আরো বাড়ছে। উল্লেখ্য, ১৭৮৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ২০২টি দেশের ডেটাসেটের ওপর ভিত্তি করে ভি-ডেমের প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
মোদি জমানায় ভারত ‘নির্বাচনী স্বৈরাচার’ দেশে পরিণত হয়েছে: গত ২০১৪ সালে কেন্দ্রে বিজেপি জমানা শুরু হওয়ার পর থেকেই ভারতের গণতন্ত্র ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে। সংবাদমাধ্যমের উপর সরকারি নজরদারি, দেশদ্রোহ আইন প্রয়োগের প্রসঙ্গ টেনে ভারতের ‘বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্র” এর তকমা কেড়ে নিল সুইডেনের ভি-ডেম (ভ্যারিয়াস ডেমোক্রেসি) ইনস্টিটিউট। সম্প্রতি ‘অটোক্রেটাইজেশন গোওজ ভাইরাল’ নামে পঞ্চম বার্ষিক গণতন্ত্র রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ওই প্রতিষ্ঠান। সেই রিপোর্টেই ভারতকে ‘নির্বাচনী স্বৈরাচার’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
১৭৮৯ সাল থেকে এই রিপোর্ট তৈরি করছে ‘ভি-ডেম’। তালিকায় রয়েছে ২০২টি গণতান্ত্রিক দেশ। কোন দেশের গণতন্ত্র কতটা সফল, ০ থেকে ১-এর মধ্যে একটি নম্বর দিয়ে তা মাপা হয়। শেষবার ২০১৩ সালে সর্বোচ্চ নম্বর ০.৫৭ পেয়েছিল ভারত। ২০২০ সালের শেষদিকে তা কমতে কমতে দাঁড়িয়েছে ০.৩৪ নম্বরে। রিপোর্ট বলছে, ভারতেও এখন পাকিস্তানের মতো স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা চলছে। এমনকি বাংলাদেশ, নেপালের চেয়েও খারাপ হয়েছে পরিস্থিতি। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর এখনও পর্যন্ত সাত হাজারের বেশি মানুষের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের মামলা দেওয়া হয়েছে। সরকারের সমালোচনা করা জন্যই যে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে, তাও লেখা হয়েছে ওই রিপোর্টে। নাগরিক সমাজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া এবং সমাজকর্মীদের বিরুদ্ধে বে আইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধী আইন প্রয়োগের বিষয়টিও উল্লেখ করেছে ভি-ডেম।
রিপোর্ট অনুযায়ী লিবারাল ডেমক্রাসি ইন্ডেক্স-এ ভারতের প্রায় ২৩% অবনতি হয়েছে। গত দশ বছরে বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে আকস্মিক পতনের মধ্যে এটি অন্যতম বলে উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে।
পতনের কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র আজ বিপন্ন। গণতন্ত্রের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্যে আজ নিষেধাজ্ঞা। মত প্রকাশের স্বাধীনতাও নেই। রিপোর্টে বলা হয়েছে ভারত তার ১৩০ কোটি নাগরিকসহ এখন নির্বাচনী স্বৈরাচারের দেশে পরিণত হয়েছে। ভারতের সঙ্গে এই একই তালিকায় রাখা হয়েছে হাঙ্গেরি ও তুরস্ককে। ২০১৪ সালে ভ্যারাইটিজ অফ ডেমোক্রাসি ইন্সিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন সুইডেনের বিখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী স্ট্যাফান লিন্ডবার্গ। প্রতি বছর বিশ্বের ২০২টি দেশের ৩ কোটি ডেটা পয়েন্ট-এর উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন দেশের গণতন্ত্রের মান প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি। চলতি সপ্তাহেই প্রায় একইরকম একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। মার্কিন সংগঠন ফ্রিডম হাউজের রিপোর্ট-এ ভারতের ‘স্বাধীন’ বৈশিষ্ট্যটি লোপ করা হয়। সেখানে বলা হয়েছে ভারত এখন ‘আংশিক স্বাধীন’ দেশ। তার রেশ কাটার আগেই এই নতুন রিপোর্টে অস্বস্তিতে মোদী সরকার। এটি নিয়ে স্বভাবই সরব হয়েছে মোদী সরকার।