শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:০৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
জব্দ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর রিট আরেক হত্যা মামলায় সাবেক বিচারপতি মানিককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে মানহানির মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান উৎপাদনে ফিরলো কর্ণফুলী পেপার মিল ২০৫০ সালের মধ্যে ৪ কোটি মানুষের মৃত্যু হবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণে দিল্লিতে মেয়ের সঙ্গে থাকছেন শেখ হাসিনা, দলবল নিয়ে ঘুরছেন পার্কে পিআইবির নতুন ডিজি ফারুক ওয়াসিফ, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি এম আবদুল্লাহ ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পোশাক শিল্প আইন আপনার হাতে তুলে নেয়ার কারো কোনো অধিকার নেই :স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দেয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বললেন মির্জা ফখরুল

অহঙ্কার পতনের মূল

নিজামুল ইসলাম নিজাম:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৬ মার্চ, ২০২১

অহঙ্কার তথা আত্মগৌরব একটি মারাত্মক ব্যাধি যা অন্তরের জন্য ক্যান্সার সমতুল্য। এই মারাত্মক ব্যাধি থেকে মুমিনকে সর্বদা দূরে থাকতে হবে এবং তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে। নচেৎ চিকিৎসাহীন রোগাক্রান্ত দেহের মতো আত্মারও অপমৃত্যু ঘটতে পারে। তাই দেহের সুস্থতার জন্য যেমন চিকিৎসা নেয়া জরুরি, ঠিক আত্মার সুস্থতার জন্যও চিকিৎসা নেয়া তার থেকেও বেশি জরুরি। সুতরাং ওই ব্যক্তি সফল, যে নিজের দেহের সংশোধনের পাশাপাশি অন্তরকেও অহঙ্কার নামক ভয়ঙ্কর রোগ থেকে সংশোধন করে নিয়েছে। পক্ষান্তরে যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহঙ্কার থাকবে, আখিরাতে তাদের পরিণতি নিতান্তই শোচনীয় হবে। এখানে কুরআন ও হাদিসের আলোকে সংক্ষিপ্তভাবে অহঙ্কারের পরিণতি তুলে ধরা হলোÑ অহঙ্কারী ব্যক্তিকে সবাই অপছন্দ করে। কেননা অহঙ্কার একটি নিন্দনীয় স্বভাব। অহঙ্কারী ব্যক্তির সাক্ষাতে সবাই সৌজন্যমূলক গাল বাঁকা করে হাঁসি দিলেও অন্তরে থাকে তার ব্যাপারে প্রচণ্ড ঘৃণা। তাই মহান আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতে দাম্ভিকতার সাথে চলাফেরা করতে নিষেধ করে বলেছেন, ‘আর জমিনে দম্ভভরে বিচরণ করো না; কেননা তুমি তো কখনোই পদভরে চলাফেরা করে ভূপৃষ্ঠকে বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনোই পর্বত সমান হতে পারবে না’ (সূরা বনি ইসরাইল-৩৭)। দাম্ভিক আচরণ যেমন মানুষের কাছে নিন্দনীয় তেমনি আল্লাহর কাছেও অপছন্দনীয়। এ জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা অন্য আয়াতে দাম্ভিকতার অসারতা প্রমাণ করে বলেছেন, ‘আর তুমি মানুষের প্রতি অবজ্ঞাভরে তোমার গাল বাঁকা করো না এবং জমিনে উদ্ধতভাবে বিচরণ করো না; নিশ্চয় আল্লাহ কোনো উদ্ধত, অহঙ্কারীকে পছন্দ করেন না’ (সূরা লুকমান-১৮)।
বর্ণিত ওই আয়াতে মানুষের সাথে গাল বাঁকা করার অর্থ হলো; অবজ্ঞা, তাচ্ছিল্য এবং অহঙ্কার নিয়ে মানুষের সাথে কথা না বলা। অর্থাৎ অবজ্ঞা, তাচ্ছিল্যভরে অন্যের সাথে কথা বলাই অহঙ্কারের পরিচয়। তাই আল্লাহ তায়ালা মানুষের সাথে এমন উদ্ধত আচরণ করতে নিষেধ করেছেন।
অহঙ্কারী ব্যক্তি দুনিয়াতে ধন-সম্পদ আর ক্ষমতার দাপটে মানুষের কাছে মর্যাদাবান হতে পারে কিন্তু আখিরাতে তাদের পরিণতি হবে অত্যন্ত শোচনীয়। যারা আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করে দুনিয়াতে দাম্ভিকতার সাথে চলাফেরা করে তাদের আখিরাতে শোচনীয় পরিণতি সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘নিশ্চয় যারা অহঙ্কারবশে আমার ইবাদত থেকে বিমুখ থাকে, তারা অচিরেই জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত হয়ে’ (সূরা মুমিন-৬০। অহঙ্কার দাম্ভিকতা বান্দার জন্য শোভা পায় না। কেননা, অহঙ্কারের একচ্ছত্র মালিক হলেন মহান আল্লাহ তায়ালা। সুতরাং আল্লাহ তায়ালার এই মহান সিফাত নিয়ে যারাই টানাটানি করেছে, তাদেরকেই আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন। যেমন, অধিক দাম্ভিকতার কারণে নমরুদ, কারুন, ফিরাউনের মতো বড় বড় নামধারী ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালা ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। সুতরাং যারাই নমরুদ, কারুন আর ফিরাউনের মতো অহঙ্কার দাম্ভিকতা নিজেদের স্বভাব বানিয়ে নেবে, তাদেরকেই আল্লাহ তায়ালা ধ্বংস করে দেবেন এবং পরকালীন শাস্তি তাদের জন্য নিশ্চিত করবেন। আল্লাহ তায়ালা হাদিসে কুদসিতে অহঙ্কারীদের ব্যাপারে কঠিন শাস্তির হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘(শুনে রাখো) অহঙ্কার হলো আমার চাঁদর এবং মহত্ত্ব হলো আমার লুঙ্গি। সুতরাং যে কেউ এর কোনো একটি নিয়ে আমার সাথে ঝগড়া করবে, আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব’ (আবু দাউদ-৪০৯০)। দাম্ভিক ব্যক্তি সর্বদা নিজেকে বড় মনে করে অথচ বাহ্যিক দৃষ্টিতে সবাই তাকে সম্মান করলেও আড়ালে সবাই তাকে ঘৃণা করে। অর্থাৎ দাম্ভিক ব্যক্তির উদাহরণ হলো ওই ব্যক্তির মতো, যে পাহাড়ের সর্বশেষ চূড়ায় উঠে নিজেকে সবার থেকে বড় মনে করে অথচ পাহাড়ের পাদদেশ থেকে তাকে অনেক ছোট দেখা যায়। পক্ষান্তরে, নম্র ও ভদ্র স্বভাবের মানুষের উদাহরণ হলো ওই ফলন্ত বৃক্ষের মতো, যে বৃক্ষে অধিক পরিমাণে ফল ধরা সত্ত্বেও উপরের দিকে না উঠে বরং মানুষের কল্যাণে নিচের দিকে হেলে যায়। যার কারণে মানুষের অন্তরে তার আকর্ষণ আরো বৃদ্ধি পায়। যারা ওই ফলবৃক্ষের মতো অন্যের কল্যাণে আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় নিজেকে ছোট করে দেয়, আল্লাহ তার মর্যাদা ও ভালোবাসা মানুষের অন্তরে আরো বৃদ্ধি করে দেন। এ ব্যাপারে রাসূল সা: বলেছেন, ‘কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে বিনীত হলে তিনি তার মর্যাদা আরো সমুন্নত করে দেন’ (মুসলিম-৬৪৮৬)।
অপর এক হাদিসে একে অপরের সাথে নরম ব্যবহার করতে রাসূল সা: বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা আমার কাছে এই মর্মে ওহি পাঠিয়েছেন যে, তোমরা বিনয়ী হও, যতক্ষণ না একে অপরের সাথে জুুলুম করে এবং অহঙ্কার করে’ (আবু দাউদ-৪৮৯৫)।
জাহান্নামের অধিবাসী হওয়ার জন্য খুব বেশি নয়, কিঞ্চিত পরিমাণ অহঙ্কারই যথেষ্ট। এ ব্যাপারে মুসলিম শরিফের ১১৬ নং হাদিসে রাসূল সা: বলেছেন, ‘যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহঙ্কার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ এ ছাড়া অন্য হাদিসে জাহান্নামিদের স্পষ্ট পরিচয় তুলে ধরে রাসূল সা: বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে জাহান্নামি লোকদের পরিচয় বলব না? তারা হলো- কর্কশ স্বভাব, শক্ত হৃদয় ও অহঙ্কারী ব্যক্তি’ (বুখারি-৬০৭১)।
আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন কিছু কিছু মানুষের ওপর গোস্বা হয়ে তাদের প্রতি দয়ার দৃষ্টিও দেবেন না। তাদের মধ্যে এক শ্রেণীর মানুষ হলো যারা দুনিয়াতে চলাফেরা করার ক্ষেত্রে দাম্ভিক তথা অহঙ্কারী ছিল। এ সম্পর্কে রাসূল সা: বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা কিয়ামত দিবসে সে ব্যক্তির দিকে (দয়ার) দৃষ্টি দেবেন না, যে ব্যক্তি অহঙ্কারবশত ইজার বা পরিধেয় বস্ত্র ঝুলিয়ে পরিধান করে’ (বুখারি-৫৭৮৮)।
সুতরাং, পায়জামা বা লুঙ্গি অথবা প্যান্ট পরিধান করার সময় অবশ্যই আমরা এ বিষয়ে সতর্ক থাকব, যাতে করে পরিধেয় বস্ত্র টাখনু তথা গিড়ার নিচে না নেমে যায়।
আমাদেরকে বিনয় নম্রতা স্বভাব অবলম্বন করে, কর্কশ ভাষা, দাম্ভিকতা, অহঙ্কারী স্বভাব পরিহার করতে হবে। কেননা, বিনয়-নম্রতা স্বভাব জান্নাতিদের বৈশিষ্ট্য আর কর্কশ ভাষা, দাম্ভিকতা রূঢ় স্বভাব জাহান্নামিদের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ যেন আমাদেরকে অহঙ্কারী স্বভাব পরিহার করে বিনয়-নম্রতা স্বভাব গ্রহণ করার তৌফিক দান করেন। আমীন। লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com