শরীরকে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা থেকে রক্ষা করতে চাইলে প্রত্যেক মানুষের জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ শরীরে পানির অভাব হলে মানসিক শ্রান্তি, মাথা ব্যথা, ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, পেশীর সমস্যা, নিম্ন রক্তচাপের মতো আরও নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। বিশেষজ্ঞরা সবসময় বলেন দৈনিক অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করতে। একজন পূর্ণবয়স্ক নারীর শরীরে পানির পরিমাণ থাকতে হবে ৪৫-৬০% আর একজন পূর্ণবয়স্ক পুরুষের শরীরে পানির পরিমাণ থাকতে হবে ৫০-৬৫%। পানিশূন্যতা দূর করার জন্য যে খাবার গুলো খাওয়া অত্যন্ত জরুরি, আমাদের আজকের আয়োজনে তা তুলে ধরা হলো।
শসা: প্রায় ৯৫ শতাংশ পানি থাকে শসাতে। খুবই কম ক্যালোরি সম্পন্ন শসা এবং এতে আছে ভিটামিন কে, পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম। তাই এটি ওজন নিয়ন্ত্রণসহ ডিহাইড্রেশন দূরীকরণেও দারুণ ভূমিকা রাখে। পানিশূন্যতা প্রতিরোধে শসা গুরুত্বপূর্ ভূমিকা রাখে।
তরমুজ: প্রায় ৯২ শতাংশ পানি থাকে তরমুজে। ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধের খুবই কার্যকর একটি উৎস এটি। ভিটামিন এ ও সি, ম্যাগনেসিয়াম, ফাইবার এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর তরমুজ ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং ওজন কমানোর জন্য খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখে।
পানি: পানিশূন্যতা দূর করতে পানি পান করা যেতে পারে। এই আবহাওয়ায় গরম বা ঠান্ডা পানি পান করতে সমস্যা হলে ঠান্ডা ও গরম পানি মিলিয়ে নিতে পারেন। খেয়াল রাখতে হবে খুব বেশি গরম পানি বা ঠান্ডা পানি শরীরের জন্য ক্ষতিকারক।
স্ট্রবেরি: স্ট্রবেরি পানিশূন্যতা প্রতিরোধের খাবার হিসেবে অতি জনপ্রিয়। এতে ৯১ শতাংশই পানি থাকে। এতে আছে ফাইবার, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও মিনারেলস। ডিহাইড্রেশন, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার ইত্যাদি থেকে দেহকে রক্ষা করে। এছাড়াও ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং ইমিউন সিসটেমকে ফিট রাখাতেও স্ট্রবেরির তুলনা নেই।
কমলা: কমলাতে ৮৮%- পানি থাকে। একটা কমলায় পানি থাকে আধা কাপ। তাছাড়াও এতে আছে ভিটামিন সি, পটাসিয়াম এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস। ডিহাইড্রেশন ছাড়াও কমলা কিডনিতে পাথর হওয়াও রোধ করে।
টক দই: প্রায় ৮৮ ভাগই পানি থাকে টক দইয়ে। তাছাড়া আছে ভিটামিনস ও মিনারেলস যা হাড়কে মজবুত রাখতে সহায়তা করে। প্রচুর প্রোটিন আছে এতে। টক দই ডিহাইড্রেশন, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং ওজন কমানোর জন্য উৎকৃষ্ট একটি খাবার।
টমেটো: ৯৪ শতাংশই পানি আছে টমেটোর মধ্যে। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিনস, মিনারেলস এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস। টমেটো প্রোস্টেট ক্যান্সার এবং হৃদরোগ প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর। তাই সুপ, সালাদ, তরকারি ইত্যাদিতে প্রতিদিন কমবেশি টমেটো রাখার চেষ্টা করুন।
ফুলকপি: ফুলকপি পুষ্টিকর এবং হাইড্রেটিং একটি সবজি। এতে ৯২% পানি আছে। তাই ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে এটি দারুণ কাজ করে । তাছাড়া এতে আছে প্রচুর ভিটামিনস ও মিনারলস যা ব্রেইন ও মেটাবোলিজম ভালো রাখে।
বাঁধাকপি: ৯২ শতাংশই পানি আছে বাঁধাকপিতে। এতে আছে ভিটামিন সি ও কে, বিভিন্ন মিনারেলস এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস যা ইনফ্লামেশন, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং কিছু ক্যান্সারের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। আর ডিহাইড্রেশন দূরীকরণে এই সবজির জুড়ি নেই।
ডাব: ডাবে থাকে ৯৫% পানি । ডাবের পানিকে বলা হয় খুবই কার্যকর ও সুস্বাদু একটি উৎস ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে। তাছাড়া এতে পটাশিয়াম, সোডিয়াম ও ক্লোরাইডও আছে। ব্যায়ামের পর ডাবের পানি একটা এনার্জি ড্রিংকের মতো কাজ করে। তাছাড়া এটি ব্লাড প্রেশার কমায় বলে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য খুবই ভালো। হৃদরোগ ও কিডনিতে পাথর প্রতিরোধ।
স্যুপ: এই মৌসুমে খাওয়া যেতে পারে প্রচুর স্যুপ। মাংসের সাথে নানা মৌসুমি সবজির মিশিয়ে তৈরি করতে পারেন স্যুপ। স্যুপে যে প্রচুর পানি থাকে সেটা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না।