পারস্পরিক সালাম বিনিময় করতে রাব্বুল আলামিন আমাদের উৎসাহিত করেছেন। করণীয় হিসেবে সালামের প্রত্যুত্তরে দোয়ামূলক প্রবৃদ্ধির কথাও জানিয়েছেন। কুরআনে আল্লাহ বলেছেন- ‘হে আমার গোলামগণ তোমাদেরকে কেউ যদি সালাম অর্থাৎ দোয়া করে তাহলে তোমরা তাকে বেশি করে দোয়া করো। যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে তত বা সমপরিমাণ দোয়া করো’ (সূরা : নিসা, আয়াত-৮৬)।
আল্লাহর এ বাণী থেকে সালাম আদান-প্রদানের অসাধারণ গুরুত্ব চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত। কুরআনে প্রমাণিত আল্লাহর প্রদত্ত নেয়ামত অবলম্বনে আমরা সালাম আদান-প্রদানের বিষয়টি পালন করতে সক্ষম হচ্ছি। আলোচ্য নেয়ামতগুলো হলো- হায়াত বা সময়, চলন শক্তি, দৃষ্টিশক্তি, বাকশক্তি, শ্রবণশক্তি, বোধশক্তি, ধর্মীয় জ্ঞান, আল্লাহর ভূমি, বাতাস, রোদ, খাদ্য, পানি, সুস্থতা, শ্বস-প্রশ্বাস ইত্যাদি ইত্যাদি। আমাদের মধ্যে একটি মারাত্মক ভ্রান্ত ধারণা আছে যে, সালাম সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যম; এটি আদৌ সত্য নয়। প্রমাণ হলো, রাসূল সা:কে আল্লাহ তায়ালা সালাম প্রদান করেছেন সম্মান হিসেবে নয় বরং দোয়া হিসেবে। তাছাড়া সালামের প্রতিটি শব্দ দোয়া সম্পৃক্ত অর্থাৎ সালাম (শান্তি), রহমত (দয়া), বরকত (অদৃশ্য বৃদ্ধি)। ফলে সালামের অর্থ হলো আল্লাহর তরফ থেকে আমাদের ওপর শান্তি, দয়া ও বরকত বর্ষিত হোক।
সালাম আদান-প্রদানের সবচেয়ে বড় উপকারিতা, প্রথমে সালাম প্রদানকারীগণকে সালাম অহঙ্কার হতে বিরত রাখে। যেমনি করে সালাত আল্লাহর গোলামগণকে সব পাপ হতে বিরত রাখে।
গর্ব, অহঙ্কার বা দম্ভ মানুষের জন্য অকল্যাণকর বা ক্ষতিকারক বলে আল্লাহ তায়ালা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা দিয়েছেনÑ নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা পছন্দ করেন না অহঙ্কারকারীকে’ (সূরা : নাহাল, আয়াত-২)।
তাছাড়া অন্যত্র আল্লাহ বলেছেন, আল্লাহ অহঙ্কারকারীকে পছন্দ করেন না (সূরা : লোকমান, আয়াত-১৮)।
চিন্তা করুন, কোনো জ্ঞানী ব্যক্তি কি সহ্য করবেন আল্লাহ তায়ালার অপছন্দনীয় হওয়া? অবশ্যই সহ্য করবেন না। আল্লাহর অপছন্দনীয় হওয়া মানে জাহান্নাম বাস। কাজেই মুমিন মুসলমানগণের উচিত অহঙ্কারমুক্ত জীবনযাপন করা এবং আল্লাহর পছন্দনীয় হওয়া।
আমাদের জানা আছে, ইবলিশ শয়তান, ফেরাউন, নমরুদ, কারুন, আবরাহা বাদশাহ, আবু লাহাব, আবু জেহেল, প্রমুখ অহঙ্কারী হওয়ার কারণে ইহকাল ও পরকালে অপদস্ত ও পরিণামে হবে জাহান্নামবাসী চিরকালের জন্য। পরিশেষে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী রাসূল সা:-এর মহামূল্যবান বাণী ‘বাদিউসসালাম বারিউম মিনাল কিবার’ অর্থাৎ আমার যে উম্মত অন্যকে প্রথম সালাম করল সে তার অহঙ্কার থেকে মুক্তি পেল। কত বড় সুসংবাদ ও অসাধারণ সুযোগ!
‘সালাম’ রাসূল সা:-এর অন্যতম শ্রেষ্ঠ সুন্নত। রাসূল সা: যখন মেরাজে গেলেন আল্লাহর সাথে কথোপকথন হলো, শুরুতেই আল্লাহর রাসূল সা: উচ্চারণ করলেন ‘আত্যাহিয়্যাতু’ অর্থাৎ হে আল্লাহ আপনার জন্য আমার সশ্রদ্ধ ও আন্তরিক অভিনন্দন, আপনার জন্য আমার আনুগত্য এবং দাসত্ব, আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। উত্তরে আল্লাহ তার প্রিয়তম বন্ধুকে জানালেন, ‘হে আমার নবী, আমার তরফ থেকে তোমার ওপর শান্তি, রহমত, বরকত বর্ষিত হোক’ আল্লাহ তাঁর রাসূলকে সালাম দিলেন। দুঃখের বিষয় এহেন সালাম আজ আমাদের মুমিন মুসলিম সমাজ থেকে বিদায় হওয়ার পথে। কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘যদি কেউ তোমাদের দোয়া করে তাহলে তোমরা তাদের আরো উত্তম দোয়া করো। আর তা যদি তোমার পক্ষে সম্ভব না হয় তাহলে সমপরিমাণ দোয়া করো।’ সালামের পূর্ণতা হলো ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু’ (অর্থাৎ আপনার ওপর শান্তি, রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক আল্লাহর তরফ থেকে)। মুমিন-মুসলিমগণের পরস্পরের প্রতি ছয়টি হক বা অধিকার আছে। তন্মধ্যে প্রথম এবং প্রধান হক হলো সালাম আদান-প্রদান করা। সালাম দেয়া সুন্নত কিন্তু সালামের জবাব দেয়া ওয়াজিব।
প্রত্যেক মুমিন অবশ্যই অনুধাবন করবেন সালামের গুরুত্ব, গভীরতা। আমরা আমাদের প্রত্যেক সালাত সম্পন্ন করি ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলে। জান্নাতবাসীগণকে অভিবাদন করা হবে সালাম জানিয়ে ‘সালামুন আলাইকুম তিবতুম ফাদখুলুহা খালিদুন’ অর্থাৎ আপনারা বেহেশতে প্রবেশ করুন চিরকালের জন্য। আল্লাহর তরফ থেকে আপনাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।
আসুন আমরা প্রতিজ্ঞা করি এবং সালামকে বেশি বেশি প্রচলন করার জন্য আন্তরিকভাবে সচেষ্ট হই। রাসূল সা:-এর আদেশ পালনার্থে ‘আফসুস সালাম’ অর্থ- সালামকে প্রসারিত করো। হে দয়ালু আল্লাহ! দয়া করে আমাদের সালামের ব্যাপকতা সৃষ্টির তাওফিক দান করুন। আমীন।
লেখক : সাবেক সভাপতি, ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকান্ট্যান্টস্ অব বাংলাদেশ