মাধবদীতে বেশ কিছু তাঁত শিল্প ও পাওয়ারলোম কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। চালু বেশ কিছু বৃহৎ শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কাপড় প্রস্তুতকারক তাঁত ও পাওয়ারলোম কারখানা বন্ধ হলে সেই সাথে বন্ধ হবে ডাইং, ফিণিশিং কারখানাও। বেকার হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন বিশাল শ্রমিক সমাজ। মাধবদী, শেখেরচর বাবুরহাট এলাকা স্বাধীনতা পূর্ব সময় থেকেই তাঁত ও পাওয়ারলোমে তৈরি কাপড় উৎপাদন ও বৃহৎ বিপনন কেন্দ্র হিসেবে বাংলার ম্যানচেষ্টার নামে খ্যাতি অর্জন করেছে। এখানকার কাঠের তৈরি হস্ত তাঁত ও পাওয়ারলোম সেই তখন থেকেই পুরো ম্যানচেস্টার এলাকায় কাপড়ের প্রসিদ্ধ এলাকা হিসেবে সুনামের সাথেই মাথা উচু করে জায়গা করে নিয়েছে অসংখ্য বস্ত্র কারখানা পাওয়ারলোম। কর্মসংস্থান হয়েছে লক্ষাধিক বেকার নারী-পুরুষের। এখানকার তাঁত ও পাওয়ারলোমে তৈরি কাপড় স্বনামধন্য দেশীয় পোশাক তৈরি প্রতিষ্ঠান আড়ং, অঞ্জন’স সহ বেশ কিছু বড় বড় পোশাক তৈরি প্রতিষ্ঠানে উন্নত টেকসই কাপড় সরবরাহ হয় এখান থেকে। এবং প্রায় এক যুগ আগে থেকেই বিশ্বের প্রায় ১০টি দেশে সম্মানজনক ভাবে রপ্তানী হচ্ছে এখানকার তাঁত ও পাওয়ারলোমে তৈরি কাপড় ও কিছু সংখ্যক তৈরি পোশাক। যে কোন কারখানা বা পণ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান যাদের শ্রমে উন্নয়নের উচ্চশিখরে আরোহণ করে সে শ্রমজীবী মানুষের জীবনে উন্নয়নের ছোয়া লাগেনা এখনও। তাদের প্রতি মালিক পক্ষের অবহেলা নির্যাতন ছাড়াও নারী/পুরুষের মজুরি বৈষম্যও দূর হয়নি কখনো অথচ প্রতিটি বৃহৎ উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের মূল ইতিহাসের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় অবহেলিত নি¤œ শ্রেণীর শ্রমিকদের শরীরে ঘাম আর বুকের তাজা রক্তই মিশে আছে বেশী প্রতিটি উৎপাদিত পণ্যে। কিন্তু যুগ যুগ পেরোলেও সেই শ্রমিকদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। তাদের ন্যায্য মজুরিও নির্ধারিত হয়নি আজও। আর তাই মালিক পক্ষের ইচ্ছা মাফিক কাজ করেও শঙ্কাগ্রস্ত থাকতে হয় প্রতিটি শ্রমিককে। কারন লিখিত কোন নিয়োগ চুক্তি না থাকায় যখন তখন ছাটাই বা বের করে দিলেও কিছুই করার থাকেনা। মালিকদের কাছে কারখানা বন্ধের কারন জানতে চাইলে তারা বলেন মাধবদীতে সম্প্রতি অনেক কারখানায় কাঁচামাল তুলা, রং, সুতা খুচরা যন্ত্রাংশ সংকট চলছে, সরবরাহ কম এসব কারনে প্রায় ৩’শতাধিক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে আরো ৫০/৬০টি বৃহৎ কারখানা বন্ধ করে দেয়ার মৌখিক নোটিশে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে এসব কারখানায় কর্মরত শত শত শ্রমজীবী মানুষ। দু’দিন পূর্বে স্থানীয় বিভিন্ন টেক্সটাইল মিল সহ বেশ কিছু কারখানায় মালিক পাওয়া না গেলেও দায়িত্বশীল ম্যানেজার বা পরিচালকদের সাথে কথা বলার সময় তারা জানান কারখানা বন্ধ বা খোলা রাখা একান্তই মালিকের ব্যাপার আর বর্তমানে কাপড়ের বিশাল স্টক রয়েছে কারখানায় বাজারে বিক্রি কম, সুতার মূল্য প্রতিদিনই বাড়ছে। সুতার মুল্যের সাথে সাথে শ্রমিক বিল, কর্মচারী বিল, বিদ্যুৎ বিল সবকিছু মিলিয়ে তৈরী কাপড়ের যা মূল্য দাড়ায় তাতে বর্তমান সময়ে লোকসসান দিয়ে বিক্রি করা ছাড়া কোন উপায় থাকেনা। সে তুলনায় বিক্রি খুবই কম এ কারনেই মিল বন্ধ রাখতে হতে পারে। শুধু মাধবদী নয় নরসিংদী সদর উপজেলার সকল কারখানায়ই শ্রমিকদের কোন লিখিত নিয়োগ নেই। দিনে এবং রাতে উৎপাদনের উপর মজুরি। আর তাই যখন তখন শ্রমিক ছাটাই বা বহিস্কার অথবা কারখানা বন্ধ করলেও কোন অভিযোগ করার জায়গা নেই শ্রমিকদের। এখানে তাদের কোন সংগঠনও নেই। তবে প্রায় প্রতিটি কারখানার শ্রমিকরাই মানবিক কারনে হঠাৎ করে বা বিনা নোটিশে কারখানা বন্ধ না করার জন্য মালিকদের প্রতি আকুতি জানিয়েছেন কর্মরত বিশাল শ্রমজীবী মানুষ।