রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০১ অপরাহ্ন

সুন্দরবন উপকূলে চিংড়ি ছেড়ে তরমুজ চাষ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ৩১ মার্চ, ২০২১

সুন্দরবন উপকূলের লোনা পানির জনপদে চাষ হচ্ছে তরমুজ। কয়েক বছর আগেও লবণাক্ততার জন্য সবুজ প্রকৃতি ফিরিয়ে আনা ছিল কৃষকের কাছে দুরাশা। চিংড়ি চাষই ছিল সম্বল। কিন্তু বর্তমানে খুলনার পাইকগাছাসহ উপকূলীয় এলাকায় চাষ হচ্ছে তরমুজ। বিস্তীর্ণ প্রান্তরজুড়ে তরমুজের সবুজ গাছ। ফুল-ফলে ভরে গেছে কৃষকের স্বপ্নের ক্ষেত। চৈত্রের তপ্ত রোদে দিনের বেশির ভাগ সময় পার করছেন ক্ষেত পরিচর্যায়। উৎপাদন ও দাম ভালো পাওয়ায় খুলনার পাইকগাছা উপজেলায় গতবারের চেয়ে এবার দ্বিগুণ পরিমাণ জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়ায় কৃষক ও কৃষি অধিদফতরের প্রত্যাশা- পাইকগাছায় এবার বাম্পার ফলন হবে তরমুজের। উপজেলার দেলুটি, গড়ইখালী ও কপিলমুনি ইউনিয়নের বিভিন্ন তরমুজের ক্ষেত ঘুরে মনে হয়েছে সেখানকার নতুন বিপ্লবের সাক্ষী হতে মাঠে নেমেছেন তারা।
উপজেলা কৃষি অধিদফতর জানায়, গত বছর উপজেলায় সাড়ে ৫০০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছিল। এবার সেখানে আবাদ হয়েছে দ্বিগুণ; প্রায় ১১ শত হেক্টর জমিতে। এবার ব্যাপক হারে ড্রাগন, সুইট ড্রাগন, পাকিজা, বিগ ফ্যামিলি, কালো মানিকসহ বিভিন্ন প্রজাতির তরমুজ চাষ হয়েছে। চলতি বছর উপজেলার দেলুটিতে এক হাজার এবং গড়ইখালীতে এক শত হেক্টর এবং কপিলমুনিতে পরীক্ষামূলকভাবে এক একর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে। বিঘাপ্রতি ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা হিসাবে প্রতি হেক্টরে খরচ পড়ে এক লাখ ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা। সঠিকভাবে চাষ করলে হেক্টর-প্রতি ৪০ থেকে ৪৫ মেট্রিক টন ফলন হবে বলে আশা করছেন তারা, যা বিক্রি হতে পারে প্রায় দুই লাখ টাকা। সে অনুযায়ী উপজেলাব্যাপী প্রায় ২২ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রির আশা করা হচ্ছে।
সুন্দরবন উপকূলবর্তী খুলনার লবণাক্ত পাইকগাছা উপজেলার জমি ছিল এক ফসলি আমন চাষের উপযোগী। কয়েক বছর আগেও এখানে ছিল লবণ পানির চিংড়ির চাষ। অব্যাহত লোকসানের মুখে পর্যায়ক্রমে লবণ পানি বন্ধের পর শুরু হয় তিল ও মুগ চাষ। তবে উপজেলার গড়ইখালী ও দেলুটি অঞ্চলের জমি একটি ফসলের পর বছরের বাকিটা সময় পতিত অবস্থায় অনাবাদি থাকত। গত কয়েক বছরে অতিবৃষ্টির কারণে লোকসানের মুখে কৃষি বিভাগের পরামর্শে তিল চাষ বাদ দিয়ে কৃষকরা ঝুঁকে পড়েন তরমুজ চাষে। তবে দক্ষিণের লোনা পানিতে বদ্ধ কৃষিকে মূল স্রোতে ফেরাতে কৃষকের পাশাপাশি নিরলস পরিশ্রম করছে পাইকগাছার কৃষি বিভাগ। অব্যাহত সফলতায় শুধু দেলুটি আর গড়ইখালীই নয়, সম্প্রসারিত হয়েছে উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নেও।
তরমুজচাষিরা জানান, এ এলাকার তরমুজ খুব মিষ্টি ও আকৃতিও ভালো। বাজারে এর চাহিদাও বেশি। গত মৌসুমে করোনায় সরবরাহ বা বাজারজাত করতে না পারায় দাম পাননি চাষিরা। তবে এবার সেই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তারা।
তারা বলেন, অনেকে ১০-১২ বিঘা পর্যন্ত জমিতে এবার তরমুজের চাষ করেছেন। অঞ্চল ভেদে ফুল ও ফল আসতে শুরু করেছে। কোনো কোনো এলাকায় কিছু দিনের মধ্যে তরমুজ ওঠাতে পারবে। তবে চলতি মৌসুমের অনাবৃষ্টি ভোগান্তিতে ফেলেছে তাদের। এক দিকে বৃষ্টি না হওয়া অন্য দিকে মিষ্টি পানির অভাবে এবার ক্ষেতে ঠিকমতো সেচ দিতে পারছেন না তারা। এ ব্যাপারে তারা সরকারের সংশিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষেরও সহায়তা কামনা করেন।
পাইকগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জাহাঙ্গীর আলম জানান, কৃষক তাদের উচ্চমূল্যের ফসল যাতে লাভজনক অবস্থায় ঘরে তুলতে পারেন সে জন্য কৃষি বিভাগ সব সময়ই সহযোগিতা করছে। শুষ্ক মৌসুমে পানি সমস্যার সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com