ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি এবং বাংলাদেশ ছাত্র-যুব-শ্রমিক অধিকার পরিষদের সমন্বয়ক নুরুল হক নুর বলেছেন, ‘আমাকে গুম করার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত হুমকি দেওয়া হচ্ছে রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার জন্য। এদেশে রাজনীতি করতে এসে কি আমরা পাপ করলাম? নাকি এদেশে জন্ম নেওয়া পাপ?’
গতকাল সোমবার ( ১২ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিক সমাজ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
নুরুল হক নুর বলেন, ‘মোদিবিরোধী বিক্ষোভ থেকে আটককৃত অনেকেই এমন আছে যে তারা ছোটখাটো চাকরি করতো। কিংবা কেউ ছাত্র, সাধারণ মানুষ। তাদের অনেককেই ধরে নিয়ে গেছে। যেদিন আমাকে গুম করার অপচেষ্টা করা হয়েছিল, সেদিন আটক হয় মার্কেটিংয়ে চাকরি করে একটা ছেলে। সে আমার লাইভ দেখে সেখানে গিয়েছিল, সেই ছেলেটিও এখন কারাগারে। এরকম অসংখ্য নিরীহ নিরপরাধ মানুষকে শুধু একটা কারণে মামলা দেওয়া হয়েছে। কারণ তারা মোদিবিরোধী প্রতিবাদ করেছিল এবং পরবর্তীতে আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘২৫ মার্চ গ্রেফতার করেছিল ৪০ জনের মতো। ২৭ তারিখে আমাদের ভাষানী অনুসারী পরিষদের শান্তিপূর্ণ প্রোগ্রাম ছিল। সেখান থেকে আমাদের আট জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমাকে গুম করার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত হুমকি দেওয়া হচ্ছে রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার জন্য। সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ না করার জন্য। রাজনীতি না করার জন্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনের সময়েও সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলাম আমাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। খালেদা জিয়ার মতো নেতাকে জেলে নিয়ে পুরলে তোমার মতো নুরুকে খাইতে ১০ সেকেন্ড সময়ও লাগবে না- এমন কথাও শুনেছি। আমরা কি রাজনীতি করতে এসে পাপ করে ফেললাম, নাকি এদেশে জন্ম নেওয়া পাপ? আমি বলছি আপনারা যদি প্রমাণ করতে পারেন, এই ছেলেগুলা সহিংসতার সঙ্গে জড়িত, আপনারা আমাকে ফাঁসি দিন, মেনে নেবো। আমি বলতে পারি আমাদের পরিষদের কর্মীরা কোনও অপরাধের সঙ্গে জড়িত না। সহিংসতা এড়াতে আমরা সেদিন কর্মসূচি দিয়েছিলাম পল্টনে। আমরা যখন জানতে পারলাম সেখানে ছাত্রলীগ-যুবলীগ সশস্ত্র অবস্থান নিয়েছিল, আমরা লোকেশন চেঞ্জ করে নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে মিছিল শুরু করি। আমাদের ইচ্ছা ছিল একটা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ দেখানো। আজ সরকার কারও কথা শুনছে না, কারও মতামত নিচ্ছে না। যে কারণে আজ দেশে এই অবস্থা।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আজ তারা প্রতিপক্ষকে কখনও জঙ্গি হিসেবে তুলে ধরছে, উগ্রবাদী হিসেবে তুলে ধরছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকলেও ধরে ধরে ছেলেগুলোর নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। যতবারই আমরা নমনীয় হতে চেষ্টা করেছি, সহিংসতা এড়াতে চেষ্টা করেছি, বারবারই আমরা রক্ষা পাই নাই। অনেকের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ছেলের বাবা-মাকে হুমকি দিচ্ছে, এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে। দেশটা কি আজ তাহলে দুর্বৃত্তদের দখলে চলে গেছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে বলবো বর্তমান যে পরিস্থিতি, অতীত ভুলে যান। সবাইকে রাজনীতি করার, মিছিল মিটিং করার সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করেন। এটা আপনার প্রতি অনুরোধ।’
আটককৃতদের কারাগারে গুরুতর নির্যাতন করা হচ্ছে দাবি করে নুর বলেন, ‘আমাদের গ্রেফতারকৃতদের সঙ্গে দেখা করে আমরা জানতে পেরেছি তাদের চোখে কাচামরিচ ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। অনেককে গোপনাঙ্গে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়েছে। কিশোর-মোশতাকের সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটেছিল। কারাগারে নির্যাতন করার কি কোনও আইনি বিধিবিধান আছে? নখের মধ্যে পিন ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে যেন তারা রাজনীতি না করে। এইভাবে যদি মানুষকে নির্যাতন করেন নিপীড়ন করেন, মানুষ রাজনীতি ছেড়ে দেবে। ছেড়ে দিয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে বাঁচার জন্য যা প্রয়োজন সে তাই করবে। তখন কে কোন দিক থেকে আক্রান্ত হন সেটা বলা যাবে না। সুতরাং সামনে রমজান মাস আমি অনুরোধ করবো আমাদের পরিষদের যাদের হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলখানায় আছে সবাইকে মুক্তি দিন।’ এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, গণফোরামের সাবেক নেতা রেজা কিবরিয়া, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট রাখাল রাহাসহ গ্রেফতারকৃত কর্মীদের পরিবারের সদস্যরা।