এ বছর খেতে পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ায় ভোলার চরাঞ্চলে তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে হাসি ফুটেছে চাষিদের মূখে। খেত থেকে তরমুজ সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করার সময় লকডাউনের ঘোষণায় চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন চাষিরা। তবে কৃষি বিপণন অধিদফতরের পরামর্শে ভোলাসহ সারাদেশের বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজারের তরমুজ বিক্রি করে লাভবান চাষিরা।
সরেজমিনে গিয়ে কৃষকদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ায় এ বছর ভোলার চরাঞ্চলে বিভিন্ন জাতের তরমুজের ভালো ফলন হয়েছে। খেতগুলোতে তরমুজ সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন চাষিরা।
কিন্তু গত বছরের মত এ বছরও সারাদেশে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়া গত ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন করা হয় সারাদেশ। এতে তরমুজ বিক্রি নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন চাষিরা। আর ওই সময় ভোলা কৃষি বিপণন অধিদফতরের পরামর্শে চাষিরা তরমুজ পরিবহনের গাড়িগুলো ‘জরুরি কৃষি পণ্য সরবরাহ’ স্টিকার লাগিয়ে ভোলাসহ রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশালসহ সারাদেশের পাইকারি বাজারে তরমুজ বিক্রি করছেন চাষিরা।
ভোলা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামের তরমুজ চাষি কোহিনুর বেগম ও মো. কামাল হোসেন জানান, এ বছর তিনি দেড় লাখ টাকা খরচ করে দুই কানি অর্থাৎ ৩২০ শতাংশ জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। লকডাউনের মধ্যে খেত থেকে তরমুজ সংগ্রহ চিন্তিত ছিলাম, তখন ভোলা কৃষি বিপণন অধিদফতর থেকে তরমুজ পাইকারি বিক্রির বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের পরামর্শে আমরা তরমুজ বিক্রি করছি।
তারা আরো জানান, এ পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ টাকার তরমুজ পাইকারি ও খুচরা বাজারে বিক্রি করছেন। এখনও দেড় থেকে দুই লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবেন।
চরফ্যাশন উপজেলার নুরাবাদ ও দুলারহাট এলাকার তরমুজ চাষি মো. বাবলু ও হারিছ জানান, গত বছর করোনার কারণে বাজারে তরমুজ বিক্রি করেও দাম পাইনি। যার কারণে অনেক লোকসান গুণতে হয়েছে। কিন্তু এ বছর করোনার মধ্যেও বাজারে তরমুজের ভালো দাম পাচ্ছি। তরমুজের শত ২০ থেকে ২৪ হাজার টাকা বিক্রি করছি। এতে আমরা গত বছরের লোকসান পুষিয়ে উঠতে শুরু করেছি।
ভোলার শহরের খাল পাড় এলাকার তরমুজের পাইকারি আড়তদার মো. কামরুল জানান, সারাদেশের বিভিন্ন পাইকারি বাজারে তরমুজ পরিবহনের মাধ্যমে বিক্রি করার জন্য কৃষি বিপণন অধিদফতর আমাদের স্টিকার দিয়েছে। তরমুজ পরিবহনে ওই স্টিকার লাগিয়ে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশালসহ সারাদেশের বিভিন্ন পাইকারি বাজারে আমরা তরমুজ বিক্রি করছি।
তিনি আরো জানান, তাদের সহযোগীতার কারণে আমরা তরমুজ পাইকারি বিক্রি করে যেমন লাভবান হচ্ছি, তেমনি আমাদের কাছে তরমুজ বিক্রি করে চাষিরা অধিক লাভবান হচ্ছেন।
ভোলা কৃষি বিপণন অধিদফতরের কর্মকর্তা মো. মোস্তফা সোহেল জানান, এ বছর ভোলার সাত উপজেলায় ৫ হাজার ৫৫৬ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। আর হেক্টর প্রতি ৫৫ মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদন হয়েছে। কৃষি বিপণন অধিদফতরের মহা-পরিচালকের নির্দেশে চাষিদের তরমুজ বিক্রি করার জন্য আমরা সর্বাত্মক সহযোগীতা করেছি। তরমুজ চাষি ও পাইকারি বিক্রেতাদের গাড়িতে আমরা ‘জরুরি কৃষি পণ্য সরবরাহ’ স্টিকার লাগিয়ে দিচ্ছি। এতে চাষি ও পাইকারি আড়তদাররা কোন প্রকার সমস্যা ছাড়াই সারাদেশের বিভিন্ন বাজারে ন্যায্য মূল্যে তরমুজ বিক্রি করতে পারছেন। তিনি আরো জানান, বাজারের তরমুজের চাহিদা ও মূল্য ভালো থাকায় কৃষকরা ভালো মূল্য পাচ্ছেন। এতে গত বছরের লোকসান পুষিয়ে উঠছেন বলে কৃষকরা আমাদের জানিয়েছেন।