রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:০৯ অপরাহ্ন

কওমি মাদরাসা খালি করতে কড়া নিদের্শ: কী করবে হেফাজত

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২১

কওমি মাদরাসা খালি করতে জেলা প্রশাসকদের কড়া নির্দেশ দিয়েছে সরকার। জেলা পর্যায়ে যেসব মাদরাসায় এতিমখানা আছে সেইসব মাদরাসার অনেকগুলোতে শুধু এতিমখানা ছাড়া মাদরাসার বাকি ছাত্রদের এরই মধ্যে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। রোববার হাটহাজারীতে হেফাজতের বৈঠকের পর সংগঠনটির আমির মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, ‘লকডাউনে মসজিদ-মাদরাসা বন্ধ করা যাবে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘নুরানী, হেফজখানা, কওমি দ্বীনি মাদরাসা বন্ধ রাখা যাবে না। যেখানে কুরআন-হাদিস পাঠ করা হয়, যেখানে হেফজখানায় ছাত্ররা কুরআন পাঠ করে সেখানে করোনা আসবে না।’ করোনার সময় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও মাঝখানে কওমি মাদরাসা খুলে দেয়া হয়। কিন্তু গত ৬ এপ্রিল কওমি মাদরাসাসহ সব ধরনের মাদরাসা পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আদেশে এতিমখানা এই আদেশের বাইরে রাখা হয়।
আলিয়া মাদরাসাগুলো আগে থেকেই বন্ধ থাকলেও নতুন নির্দেশের পর কওমি মাদরাসাগুলো বন্ধে গড়িমসি করে। আর দেশের কওমি মাদরাসাগুলো সরকারের কোনো শিক্ষা শিক্ষা বোর্ডেও অধীন নয়। তারা তারা বেফাকের অধীনে পরিচালিত হয়। এতে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নাই। কওমি মাদরাসাগুলো হেফাজতের নিয়ন্ত্রণে।
বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কায়সার আহমেদ বলেন, ‘কওমি মাদরাসা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নাই। আলিয়া মাদরাসা আগে থেকেই বন্ধ আছে। তারপরও আমরা নতুন করে তাদের সরকারি আদেশের কথা জানিয়ে দিয়েছি।’
কওমি মাদরাসাগুলো খালি করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে জেলা প্রশাসকদের। তাদের লিখিত নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। দেশে সবচেয়ে বেশি কওমি মাদরাসা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, এবং নারায়ণগঞ্জে। হাটহাজারী মাদরাসা হলো কওমি মাদরাসার কেন্দ্র। এই মাদরাসায় ১৪ হাজারের বেশি ছাত্র আছে।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান জাানান, ‘শুধু এতিমখানার রেজিস্টার্ড ছাত্র ছাড়া আর সবাইকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের যানবাহনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যার সেখানে বাড়ি সেখানে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাটহাজারী মাদরাসায় ২২০ জন এতিম আছেন। তাদের সেবার জন্য আরো ৬০ জনের মতো লোক আছেন। এখন শুধু তারাই মাদরাসায় আছেন। সোমবার সকালে ছাত্রদের সর্বশেষ দলটিকে গ্রামের বাড়িকে পাঠানো হয়।
তিনি জানান, তারা যানবাহনের অজুহাত দিয়েছিল। পরিবহনের ব্যবস্থা করায় তারা আর কোনো আপত্তি করেনি। দেশের অন্যান্য এলাকার কওমি মাদরাসাগুলোতে কার্যত খালি করে ফেলা হয়েছে।
হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়েজী জানান, কওমি মাদরাসার এতিমখানা এবং হেফজখানা খোলা আছে। আর সব বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তিনি দাবি করেন, ‘এপর্যন্ত মাদরাসার কেউ করোনায় আক্রান্ত হননি।’ তিনি মাওলানা বাবুনগরীর কথাকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, ‘আমরা কুরআন-হাদিস পড়ার সাথে স্বাস্থ্যবিধিও মানি। ফলে মাদরাসায় করোনা হয় না।’ এদিকে কওমি মাদরাসা বন্ধের ফলে আয়ের একটি পথ বন্ধ হয়ে গেছে। রোজার মাসেই কওমি মাদরাসাগুলোর আয় সবচেয়ে বেশি। নোমান ফয়েজী বলেন, ‘অনেকেই এই সময় নামাজ পড়ান, তারাবিহ পড়ান। এজন্য আমরা চেয়েছিলাম কওমি মাদরাসা খোলা থাকুক।’
নানামুখী চাপে হেফাজত: নানামুখী চাপে বেকায়দায় পড়েছে হেফাজতে ইসলাম। কেন্দ্রীয় যুগ্মমহাসচিব ও ঢাকা মহানগরী সাধারণ সম্পাদক মামুনুল হকের সোনারগাঁওয়ের রিসোর্ট কা-ে সমালোচনার মুখে পড়া কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকসহ নেতাকর্মী গ্রেফতার, মাদরাসা বন্ধ করে দেয়া এবং সর্বশেষ সাবেক আমির আল্লামা শফীকে ‘হত্যার’ অভিযোগে বর্তমান আমির জুনায়েদ বাবুনগরীসহ ৪৩ জনকে অভিযুক্ত করে পিবি আইয়ের প্রতিবেদনে অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে হেফাজত। তবে এসব ঘটনায় নেতকর্মীরা চুপ করে বসে থাকবে না বলে সতর্ক করেছে হেফাজত। হেফাজত আমির জানিয়েছেন, নেতাকর্মীদের ওপর এভাবে জুলুম চলতে থাকলে আমরা নিশ্চুপ ঘরে বসে থাকব না। দেশবাসীকে সাথে নিয়ে শান্তিপূর্ণ দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হবো।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকায় আগমনের প্রতিবাদে গত ২৬, ২৭ ও ২৮ মার্চ ঢাকা, চট্টগ্রাম, বাহ্মহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হেফাজতের সাথে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ও সরকারি দলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় হেফাজতের ২০ জনের মতো কর্মী-সমর্থক নিহত, অনেক নেতাকর্মী আহত ও বেশকিছু নেতাকর্মী গ্রেফতারের শিকার হয়। এরপরই নারায়ণগঞ্জে যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হকের রিসোর্ট কা- ঘটে। সেখানে মামুনুল হককে হেনস্তা ও পরে তাকে উদ্ধারে হেফাজত কর্মীদের হাতে রিসোর্ট ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। মামুনুল হকসহ হেফাজত নেতারা তার সাথে থাকা মহিলাকে বৈধ স্ত্রী দাবি করলেও সরকারের পক্ষ থেকে সে দাবি নাকচ করে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মামুনুল হক ও তার স্ত্রীর বেশকিছু ফোন কল ফাঁস হওয়ায় ব্যক্তিগত জীবনের বিভিন্ন ঘটনা জনসমক্ষে চলে আসে। এতে খানিকটা অস্বস্তিতে পড়েছে হেফাজত। যদিও মামুনুল হকের পক্ষ থেকে এসব ঘটনাকে পরিকল্পিত অপপ্রচার বলে দাবি করা হয়েছে।
এ দিকে এসব ঘটনার মধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নেতাকর্মী গ্রেফতারের মুখে পড়েছে হেফাজত। গত রোববার হাটহাজারিতে বৈঠক থেকে ফেরার পথে হেফাজতের কেন্দ্রীয় সহ-অর্থ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগরের সহসভাপতি মুফতি ইলিয়াস হামিদিকে আটক করে র‌্যাব। একই সময় হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদীও নিখোঁজ হয়ে যান বলে হেফাজত নেতারা প্রচার করতে থাকেন। তবে গতকাল পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাকে আটক করা হয়েছে। তাকে আটকের পর ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়। সেখান থেকে ২০১৩ সালের ৬ মে পল্টন থানায় করা এক মামলায় আটক দেখিয়ে পুলিশ তার ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। আদালত শুনানি শেষে তার ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। এ ছাড়া ঢাকার জুরাইন থেকে হেফাজতের আরেক নেতা মাওলানা ইকবাল হোসাইনও আটক হয়েছেন।
এ দিকে করোনার কারণে সরকার কওমি মাদরাসাসহ সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে। এতেও খানিকটা বেকায়দায় পড়েছে মাদরাসাকেন্দ্রিক এ সংগঠনটি। রমজানের এ সময়ে মাদাসাকেন্দ্রিক বিভিন্ন কর্মকা- পরিচালনায় সমস্যায় পড়েছে হেফাজত। এজন্য গত রোববারের বৈঠক থেকে হেফাজতের নেতারা কওমি মাদরাসা বন্ধ না করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
করোনার সময় লকডাউনেও কওমি মাদরাসা বন্ধ করা যাবে না বলে হেফাজত নেতারা বললেও তাতে পাত্তা দিচ্ছে না সরকার। সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসকেরা কাজ করছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘সরকারের সিদ্ধান্ত বহাল আছে। এর কোনো পরিবর্তন হবে না।’ এখন কী করবে হেফাজত?




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com