রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বাসায় ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ৩০ মিনিটে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে ১০ টা ৫০ মিনিটে নিজ বাসায় ফিরেন বিএনপি চেয়ারপারসন। এ দিকে এভার কেয়ারের ডিউটি ম্যানেজার মাসুম জানান, বেগম খালেদা জিয়ার সিটিস্ক্যানের রিপোর্ট ভালো।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ২০ মিনিটে বেগম খালেদা জিয়া এভার কেয়ার হাসপাতালের উদ্দেশে যাওয়ার জন্য তার নিজ বাসভবন ‘ফিরোজা’ থেকে বের হন। পরে হাসপাতালে গিয়ে তার সিটিস্ক্যান করান।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরে তার চিকিৎসক অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিক জনান, গত দু’দিনে ম্যাডামের অবস্থা আর বর্তমান অবস্থার রিপোর্ট করেছি। তাতে আমরা দেখেছি, উনার শারীরিক অবস্থা আলহামদুলিল্লাহ ভালো। উনার অক্সিজেন সেচুরেশন ভালো আছে। ব্লাডের রিপোর্টও ভালো আছে। তবে বুধবার রাতে উনার জ্বর ছিল, বৃহস্পতিবার সকালেও জ্বর ছিল ১০০ ডিগ্রির মতো। তবে উনি ভালো আছেন, স্টেবল আছেন।’ শুরু থেকেই খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের দেখভাল করছেন এফ এম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে একদল চিকিৎসক। এই চিকিৎসক বলেন, ‘করোনার পরিভাষায় ম্যাডাম এখন দ্বিতীয় সপ্তাহে আছেন। আর করোনার সব বড় সমস্যা হয় দ্বিতীয় সপ্তাহেই। তাই সে বিষয়েও আমরা সতর্ক আছি। আমরা এখন উনার সিটিস্ক্যান করাব।’
এ সময় কোথায় রেখে চিকিৎসা করা হবে জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার চিকিৎসক বলেন, ‘করোনায় বলা যায় না কখন কী অবস্থা হয়। তাই আমরা সিটিস্ক্যান করার পর বলতে পারব উনাকে বাসায় রাখব নাকি কয়েক দিনের জন্য হাসপাতালে নেব। সেটা পরে সিদ্ধান্ত নেব। তবে আমাদের সব প্রস্তুতি আছে।’
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মানসিক অবস্থা ভালো আছে। আর উনি নিজেই বলেছেন যে, উনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন সেটা ফিল করছেন না। তিনি বলেছেন, টেস্ট না হলে তো কিছু বুঝতামই না। তাতে বলা যায়, উনার মানসিক অবস্থা ভালো আছে।’ কোথায় সিটিস্ক্যান করা হবে জানতে চাইলে ডা. এফ এম সিদ্দিকী বলেন, ‘কোথায় করব তা আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছি। সময় মতো আপনাদের জানিয়ে দিব। তবে দ্রুত সময়ের মাঝে করব।’
স্ক্যানের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন, চিকিৎসা চলবে বাসায়: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সিটি স্ক্যানের (হাই রেজ্যুলেশন সিটি স্ক্যান) পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পেয়েছে তাঁর চিকিৎসক দল। গতকাল শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) প্রথম প্রহরে (বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে) এভার কেয়ার হাসপাতাল থেকে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন আসার পর মধ্যরাতেই ভার্চুয়াল পর্যালোচনা করেন চিকিৎসকেরা। পরে খালেদা জিয়ার জন্য সর্বসম্মতিক্রমে নতুন একটি ওষুধ যুক্ত করা হয়। বর্তমান শারীরিক অবস্থায় তাকে বাসায় রেখেই চিকিৎসা চলবে।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসক টিমের অন্যতম সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা বৃহস্পতিবার রাতেই ম্যাডামের সিটি স্ক্যানের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পাই। এরপর মধ্যরাতে চিকিৎসক টিমের সদস্যরা, ম্যাডামের পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান এবং লন্ডন ও নিউ ইয়র্কের একজন চিকিৎসকসহ সবাই মিলে ভার্চুয়াল পর্যালোচনা করা হয়। ওই পর্যালোচনার পর ম্যাডামের জন্য একটি নতুন ওষুধ যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়।’ এর আগে বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে এভার কেয়ার হাসপাতালে সিটি স্ক্যান করা হয় খালেদা জিয়ার। এ দিন রাত ১১টার দিকে সিটি স্ক্যান শেষে তিনি বাসায় ফেরেন। গত রবিবার (১১ এপ্রিল) করোনা টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ আসে খালেদা জিয়ার। ওই দিন বিকালে আনুষ্ঠানিকভাবে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। গতকাল শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে ডা. জাহিদ বলেন, ‘সিটি স্ক্যানের রিপোর্টে ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল এসেছে। যেটা আমরা প্রভিশনাল রিপোর্ট পাওয়ার পর গণমাধ্যমে জানিয়েছিলাম। ফাইনাল রিপোর্টেও তাই এসেছে।’
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া হাসপাতালে যেতে না চাওয়ায় বাসাতে রেখেই চিকিৎসা চলবে বলে জানান ডা. জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘ম্যাডামের শারীরিক অবস্থার ওপর আমাদের নিয়মিত অভজারভেশন চলছে। ঘণ্টায়-ঘণ্টায় আমরা আপডেট নিচ্ছি। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী হওয়ায় পরবর্তী চিকিৎসার বিষয়টিও আমাদের গ্রহণ করা আছে।’ গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত মেডিক্যাল পর্যালোচনা সভায় খালেদা জিয়ার চিকিৎসক টিমের প্রধান অধ্যাপক ডা. এফ এম সিদ্দিকী, সাকুর খান, অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, ডা. মামুন, লন্ডন থেকে ডা, জুবাইদা রহমান ও নিউ ইয়র্ক থেকে একজন চিকিৎসক অংশগ্রহণ করেন। নতুন গৃহীত চিকিৎসায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সম্মতি আছে বলে জানা গেছে চিকিৎসক টিমের সূত্রে। প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা (কারাদণ্ড) হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে তার ছয় মাসের মুক্তি হয়। পরে ওই বছরের সেপ্টেম্বরে তার মুক্তির সময় আরও ছয় মাস বাড়ায় সরকার। এ বছরের মার্চে তৃতীয়বারের মতো ছয় মাসের মেয়াদ বাড়ানো হয়।