পাল্টে গেছে লকডাউনের চিত্র
আবারো করোনার মৃত্য শতাধিক অতিক্রম করেছে। ৫ দিনে শতের নিচে থেকে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরো ১০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ১১ হাজার ৫৩ জনে। নতুন করে রোগী শনাক্ত হয়েছে ২৯২২ জন। মোট শনাক্ত ৭ লাখ ৪৫ হাজার ৩২২ জনে দাঁড়িয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় ৪ হাজার ৩০১ জন এবং এখন পর্যন্ত ৬ লাখ ৫৭ হাজার ৪৫২ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। গতকাল রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে আরো জানানো হয়, ৩৫০টি পরীক্ষাগারে গত ২৪ ঘণ্টায় ২১ হাজার ৪৪৮টি নমুনা সংগ্রহ এবং ২১ হাজার ৯২২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৫৩ লাখ ৪৫ হাজার ৫০১ টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৮ দশমিক ২১ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
মার্কেট খোলার আগেই পাল্টে গেছে লকডাউন: করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত ‘কঠোর’ লকডাউনের একাদশতম দিন পার হয়েছে। চলবে চতুর্দশতম দিন পর্যন্ত। তার মধ্যেই গতকাল রোববার থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শপিংমল, বিপণিবিতানসহ দোকানপাট খুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। আর এতে করেই পাল্টে গেছে লকডাউনের চিত্র। রাজধানীর রাস্তায় বিভিন্ন যানবাহনের চাপে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট, প্রচুর মানুষের আনাগোনা সর্বস্তরে। রোববারের আগেই সার্বক্ষণিক খোলা থাকছে অলি-গলি, পাড়া-মহল্লার ছোট বড় দোকান। চেকপোস্টগুলো চলছে ঢিলেঢালাভাবে, ঢাকামুখী মানুষের ভিড়ে আটকে আছে পদ্মার কাঁঠালবাড়ি ও দৌলতদিয়া ফেরিঘাট। সব মিলিয়ে লকডাউনের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে চলাচল শুরু করেছে মানুষ। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। গত শনিবার সরকারি ছুটির দিন থাকার পরও রাজধানীর রাস্তায় ছিল প্রচুর যানবাহন ও মানুষের ভিড়। বিভিন্ন এলাকায় চেকপোস্টের ব্যারিকেড দেয়া দেখলেও সেগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যদের তেমন একটা দেখা যায়নি। গণপরিবহন না থাকলেও প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, সিএনজি অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, প্রচুর পরিমাণ রিকশা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছোট-বড় ট্রাক ও পিকআপ ভ্যান চলাচল করছে। দুপুরের পর থেকে দেখা গেছে, নানা বয়সের নারী-পুরুষের আনাগোনা, যা লকডাউন চলাকালে এর আগে খুব বেশি দেখা যায়নি। এদিকে অলি-গলি, পাড়া-মহল্লার ভেতরে থাকা জামাকাপড়ের দোকানসহ বিভিন্ন ধরনের দোকান ইতোমধ্যেই খুলে দিয়েছে। কয়েক দিন আগেও তারা লুকিয়ে শাটার অর্ধেক নামিয়ে দোকান খোলার চেষ্টা করলেও গতকাল দুপুরের পর থেকে পুরোপুরি খুলে দিয়েছে। শুধু দোকানই খোলেনি, সেখানে ক্রেতাদেরও ভিড় দেখা গেছে।
মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট এলাকায় দেখা যায় বেশ কিছু কাপড়ের দোকানে কেনাবেচা চলছে। একদিন আগেই দোকান খোলার কারণ জানতে চাইলে একজন বলেন, ‘আর পারছি না। সারা বছরের মধ্যে রমজান মাসেই একটু কেনাবেচা হয়ে থাকে। কিন্তু গত বছর থেকে আমাদের সব ব্যবসা বন্ধ। বোনাস দূরের কথা শ্রমিকদের বেতন পর্যন্ত দিতে পারছি না। কাল রোববার থেকে যেহেতু সরকার দোকান খোলার অনুমতি দিয়েছে। তাই এক বেলা আগে খুললে খুব বেশি অপরাধ হবে না’।
ওই দোকানের পাশের পান ব্যবসায়ী আল আমিন বলেন, দোকান খোলার আগে থেকেই কিছু কিছু ক্রেতা ঘুরে দোকান খুলবে কি না খবর নিয়ে যান। তিনি বলেন, কে বলেছে মানুষের হাতে টাকা নেই। এক শ্রেণীর মানুষের হাতে বর্তমানে প্রচুর টাকা। আর এক শ্রেণীর মানুষ নিঃস্ব। যাদের হাতে টাকা নেই, তারা দোয়া করছেন, ঈদের আগে যেন দোকান না খোলে। কারণ দোকান খুললেই স্ত্রী-সন্তানকে কিছু কিনে দিতে হবে। কিন্তু তার কাছে হয় তো সেই টাকা নেই। অপর এক শ্রেণীর মানুষের হাতে এত টাকা যে তারা দোকান কবে খুলবে সেই খবর নিতে কয়েকবার করে ঘুরে যান।
এ দিকে লকডাউনের শুরুর দিকের তুলনায় গতকাল সড়কে ব্যক্তিগত যানের উপস্থিতি বেড়েছে। এমনকি অনেকেই মুভমেন্ট পাস ছাড়াই চলাচল করছেন। ব্যক্তিগত কাজের মধ্যে হাসপাতাল ও বাজারের উদ্দেশ্যে বেশি যাচ্ছেন তারা। রাজধানীর মালিবাগ, শান্তিনগর ও কাঁটাবন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারের ভেতরে মাস্ক পরলেও সামাজিক দূরত্ব না মেনেই চলছে কেনাকাটা। বাজারে লোক উপস্থিতি বেশি হওয়ায় সেসব এলাকায় প্রচুর রিকশা সমাগম রয়েছে। এসব এলাকার প্রধান সড়কের তুলনায় সংযোগ সড়কগুলোর ভেতরেও অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে। বাজারে একজন ব্যাংকার বলেন, কাজের জন্য আমাদের তো বের হতেই হয়। তাই চেকপোস্টে কড়াকড়ি না থাকলেও মুভমেন্ট পাস সঙ্গে রাখি সব সময়। তবে ইদানীং বাইরে বের হওয়ায় বেশির ভাগই মুভমেন্ট পাস নিচ্ছেন না।
অন্য দিকে দোকান ও শপিংমল খোলার খবরে রাজধানীর কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছে গ্রামে যাওয়া মানুষ। দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকামুখীরা ভিড় করছেন পদ্মার কাঁঠালবাড়ি, দৌলতদিয়া, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ফেরিঘাটে। কঠোর লকডাউনে যাত্রী চলাচল কিছু দিন ধরে কম থাকলেও গতকাল মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট দিয়ে দক্ষিণবঙ্গ থেকে ঢাকায় ফেরা মানুষের সংখ্যা বাড়তে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন আমাদের মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি।
বিআইডব্লিউটিসি শিমুলিয়া ঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) ফয়সাল আহমেদ জানান, গতকাল যাত্রীদের সংখ্যা বাড়লেও অত্যধিক চাপ পড়েনি। বহরে থাকা ১৭টি ফেরির মধ্যে বর্তমানে নৌরুটে পাঁচটি ফেরি সচল রয়েছে। এসব ফেরি দিয়ে লকডাউনের আওতামুক্ত জরুরি পণ্য ও ব্যক্তিগত যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে।
রংপুর অফিস জানায়, সর্বাত্মক লকডাউনের ১১তম দিনে গতকাল শনিবার রংপুর মহানগরীর হাটবাজার ও রাস্তায় স্বাভাবিক পরিস্থিতি দেখা গেছে। সকাল থেকেই মহানগরীর প্রধান সড়কসহ অলিগলির রাস্তায় হাজার হাজার রিকশা, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, সাইকেল ও ব্যক্তিগত গাড়ির দখলে চলে যায়। মেট্রোপলিটন পুলিশ নগরীর বিভিন্ন প্রান্তে চেক পোস্ট বসিয়েও কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না যানবাহন চলাচলে। অন্য দিকে নগরীর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন মাছের আড়ত, সিটি বাজার, ধাপবাজারসহ সবখানেই দেখা গেছে ক্রেতা-বিক্রেতায় টইটম্বুর। কারো মুখে মাস্ক নেই। নগরীর জেলা পরিষদ সুপার মার্কেটের সামনে মোবাইলসহ বিভিন্ন ধরনের ভ্রাম্যমাণ দোকান দিয়ে দিব্যি চলছে বিকিকিনি। বের হওয়া মানুষজনের দাবি পেটের তাগিদেই লকডাউন মানতে পারছেন না তারা।