গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার টেপিরবাড়ী গ্রামের যুবক হামিদ মিয়া। গতবছর ইউটিউবে চাষ পদ্ধতি দেখে তিনি প্রথমবারের মতো চুয়াডাঙ্গা থেকে এক কৃষকের কাছ থেকে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে বীজ এনে নিজের ১০ শতাংশ জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করেন বেবী তরমুজ। এবং সফলও হয়েছিলেন। এবার বেশ বড় পরিসরে বেবী তরমুজের চাষ করেন। প্রায় দুই হাজার চারা রোপণ করেন ফেব্রুয়ারি মাসে। এখন তার মাচায় দুলছে সোনালী ও সবুজ রংয়ের শতশত বেবী তরমুজ।
এই মৌসুমে অন্যান্য জাতের তরমুজের বাজার দরের সঙ্গে এই তরমুজের দরও সমানতালে পাল্লা দিয়ে চলছে। বর্তমান বাজারে প্রতি কেজি বেবী তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা দরে। কৃষক হমিদ বর্তমানে তাই বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরেছেন দুই লাখ টাকা। গেল বছর স্বল্প পরিসরে তিনি বিক্রি করেছিলেন ৬০ হাজার টাকার।
গতকাল রোববার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে হামিদ মিয়ার তরমুজ ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, মাটি থেকে ১৫-২০ সেন্টিমিটার উঁচু লম্বা মাদা (বেড) তৈরি করে মালচিং পেপার দিয়ে শক্ত করে ঢেকে দেয়া হয়েছে। চার হাত অন্তর অন্তর একটি বেড। এভাবে প্রায় ৩৫ শতাংশ জমিতে তৈরি করা হয়েছে ৩০টি বেড। এর ওপরে ছাউনির মতো ঘুরিয়ে মাচা দেয়া হয়েছে। সে মাচায় ঝুলে রয়েছে শত শত বাদামি ও সবুজ রংয়ের বেবী তরমুজ। এসব তরমুজ বেশ রসালো ও সুমিষ্ট। কচি অবস্থায় তরকারি অবস্থায় রান্না করেও খাওয়া যায়।
কৃষক হামিদ মিয়ার ভাষ্যমতে,তিনি ইউটিউবের মাধ্যমে এ জাতের তরমুজ চাষ দেখে অনেকটা শখের বশে চাষ শুরু করেন। এটি চাষে মাচা তৈরি ছাড়া তেমন কোনো খরচ হয়নি। এটি একটি লাভজনক ফসল। তীব্র গরমে শরীরে পানির জোগান দেয়ায় অনেকে সরাসরি তার ক্ষেত থেকে তরমুজ কিনতে আসেন। পাশাপাশি চাষ পদ্ধতিও জেনে যান। স্থানীয় কৃষি বিভাগ তাকে সবসময় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
প্রথমবারের মতো জেলার কাপাসিয়া উপজেলার দরদরিয়া গ্রামে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে প্রায় চার বিঘা জমিতে আগাম জাতের এ তরমুজ চাষ করেছিলেন কৃষক আকবর হোসেন। তিনি বলেন, তিনি প্রথমবারের মতো তরমুজ চাষে সফল হয়েছেন। প্রথম বছরেই তার আয় হয়েছে প্রায় তিন লাখ টাকা। সামনের বছর দ্বিগুণ চাষের পরিকল্পনা রয়েছে তার। তার মতে, নদীর তীরবর্তীসমূহ এলাকায় পতিত থাকা জমিতে তরমুজ চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
গাজীপুর জেলা কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগের তথ্যমতে, গাজীপুরের মাটি অত্যন্ত উর্বর। এখানে সব ধরনের ফসলই উৎপাদন হয় তবে এতোদিন অধরা রয়েছিল তরমুজ চাষ। গত কয়েক বছর ধরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কৃষকরা তরমুজের আবাদ করে আসছেন। জেলায় শুধু মাত্র কাপাসিয়া ও শ্রীপুর উপজেলায় তরমুজের আবাদ হয়।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি বছর জেলার এ দুটি উপজেলায় ১.৪ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ করেছেন প্রায় অর্ধশত কৃষক। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৩ মেট্রিক টন। চাষকৃত বেবী তরমুজের মধ্যে রয়েছে ‘সুইট ব্ল্যাক বা কালো জাত ও নতুন ‘গোল্ডেন ক্রাউন’ বা হলুদ জাতের তরমুজ। এসব জাতের তরমুজ সারা বছর ধরেই আবাদ করা যায়। আকারে ছোট হওয়ায় স্থানীয়রা একে ‘বেবী তরমুজ’ বলেই অভিহিত করেন। প্রতিটি তরমুজের ওজন হয় ২-৩ কেজি। জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক মাহবুব আলম বলেন, গাজীপুরের দুটি উপজেলায় এখন পর্যন্ত এ জাতের তরমুজের চাষ হচ্ছে। কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে নানা ধরনের কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহার করে বিষমুক্ত এই ফল স্থানীয়ভাবে চাষ করে কৃষকরা ভালো দামও পাচ্ছেন। লাভজনক বিবেচনায় কৃষকদের মধ্যে প্রতিনিয়ত আগ্রহ তৈরি হয়েছে এই জাতের তরমজু চাষ নিয়ে। আমাদের আশা, কৃষি অর্থনীতিতে ছোঁয়া লাগবে।