চৈত্র মাস থেকে বৃষ্টিপাত হওয়া, অনুকুল আবহাওয়া এবং রোগ-বালাই ও পোকা মাকড়ের আক্রমন তেমন না থাকায় চলতি মৌসুমে মৌলভীবাজারে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। উৎসবমূখর পরিবেশে কৃষকরা মাঠ থেকে পাকা বোরো ধান তুলছেন বাড়িতে। কৃষি বিভাগ বলছে, গত মৌসুমে ধানের ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় চলতি মৌসুমে অতিরিক্ত ২ হাজার ৮শ ১৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদ হয়েছে। তবে, আগাম বন্যা ও ঝড়-বৃষ্টিসহ চলমান করোনা পরিস্থিতির কারণে কিছুটা শ্রমিক সংকটে রয়েছেন কৃষকরা। ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ থেকে দেশের অন্যতম প্রধান হাওর হাকালুকিসহ অন্যান্য হাওরে একযোগে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। হাওর এলাকায় কৃষকদেরকে উৎসাহ যোগাতে রাজনগর উপজেলার সোনাটিকি গ্রামে ধান কাটার উদ্বোধন করেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান। এসময় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ কাজী লুৎফুল বারীসহ কৃষি বিভাগের অন্যান্য কর্মকর্তা ও স্থানীয় কৃষকরা উপস্থিত ছিলেন। এয়াড়া, কৃষিবিদ কাজী লুৎফুল বারী কৃষকদের ধান কর্তনে উৎসাহ যোগাতে প্রতিদিন চষে বেরাচ্ছেন জেলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৫৬ হাজার ৩শ ৪৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে- যা গত মৌসুমের চেয়ে ২ হাজার ৮শ ১৫ হেক্টর বেশী। এর মধ্যে রয়েছে মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় ১০ হাজার ৫৩ হেক্টর, রাজনগর উপজেলায় ১৩ হাজার ৬শ ৩০ হেক্টর, কুলাউড়া উপজেলায় ৭ হাজার ৯শ ১২ হেক্টর, জুড়ী উপজেলায় ৫ হাজার ৭ শ ৭০ হেক্টর, বড়লেখা উপজেলায় ৪ হাজার ৯শ ৪০ হেক্টর, কমলগঞ্জ উপজেলায় ৪ হাজার ২শ ৮৮ হেক্টর ও শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ৯ হাজার ৬শ ৫২ হেক্টর জমি। ২০১৯-২০২০ সালে জেলায় মোট খাদ্যের চাহিদা ছিল ৪ লাখ ৭ হাজার ১শ ৩৬ মেট্রিক টন। গত ৩ মৌসুমে উৎপাদন হয়েছে ৬ লাখ ৩৮ হাজার ৪শ ৬০ মেট্রিক টন- যা থেকে জেলার চাহিদা মিটিয়ে ২ লাখ ৩১ হাজার ৩শ ২৪ মেট্রিক টন উদ্বৃত্ত রয়েছে। মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী লুৎফুল বারী জানান, আবহাওয়া অনুকুল এবং রোগ-বালাই ও পোকা মাকড়ের আক্রমন কম থাকায় এবছর বোরো ধানের বাম্পার ফল হয়েছে। ইতোমধ্যে হাওর এলাকায় ৩৭ ভাগ ও অন্যান্য এলাকায় ৮ ভাগ বোরো ধান কর্তন হয়েছে। বর্তমান অনুকুল আবহাওয়া অব্যাহত থাকলে ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে পুরো ধান ঘরে তোলা সম্বব হবে। তিনি আরও জানান, কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি বিভাগ কর্তৃক চলতি বোরো মৌসুমে বিশেষ কর্মসূচির আওতায় বিনামূল্যে ২৫ হাজার কৃষককে ৫০ কেজি হাইব্রিড জাতের বীজ দেয়া হয়। পৃথকভাবে ১ হাজর ৮শ কৃষককে প্রণোদনার ১ কেজি করে হাইব্রিড বীজ ও সাথে সার প্রদান করা হয়। রমজান মাস থাকায় বোরো ধান কাটতে শ্রমিক সংকট যাতে না হয়, সেজন্য চা বাগানের শ্রমিকদেরকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। মাঠে কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও রিপার মেশিন দিয়ে ধান কাটা হচ্ছে। প্রাকৃতিক দূর্যোগে ফসল যাতে নষ্ট না হয় সে জন্য বোরো চাষিদেরকে দ্রুত ধান কেটে ঘরে তোলার জন্য আগাম সতর্কতা জানিয়ে মাইকিং করা হয়েছে। কৃষকদের দাবী- সরকারী উদ্যোগে হাইব্রিড ধানের বীজসহ বালাই নাশক, উন্নতমানের ধান মাড়াই মেশিন, ডিজেল ইঞ্জিন, পাওয়ার টিলারসহ খুচরা যন্ত্রাংশ কম মূল্যে সরবরাহ করার পাশাপাশি বিদেশ থেকে উন্নতমানের কম্বাইন হারভেস্টার, রিপার, রাইস প্লান্টার মেশিন আমদানী করে ভুর্তুকির আওতায় না নিয়ে সরাসরি কৃষকদের মধ্যে কমমূল্যে সরবরাহ করলে উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে।