দেশে করোনার ভারতীয় ধরনে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে ভারতফেরতদের করোনা শনাক্তের হার। সর্বশেষ দেশে আরো তিনজনের শরীরে করোনার ভারতীয় ধরন শনাক্ত হয়েছে। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনোম সেন্টার ল্যাব থেকে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এদিকে ঈদের ছুটির পর নমুনা পরীক্ষা বাড়ায় রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। গত দুদিন হাজারের ঊর্ধ্বে রোগী শনাক্ত হয়েছে। আর টানা তিনদিন মৃতের সংখ্যা ৩০ ছাড়িয়েছে। চলতি মাসেই দেশে ১১ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরন শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনোম সেন্টার ল্যাব থেকে পাঁচজনের এবং ঢাকায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ছয়জনের তথ্য জানানো হয়েছে। ভারতফেরতদের করোনায় আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে। মঙ্গলবারও সাতক্ষীরায় ১১ জন ভারতফেরত বাংলাদেশী করোনা পজিটিভ হয়। এর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় ভারতফেরতদের করোনা শনাক্তের কথা জানা যায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, গত বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৪৭৮টি পরীক্ষাগারে ২০ হাজার ৫২৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে ১ হাজার ৬০৮ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটির সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ায় মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৮৩ হাজার ৭৩৭। এ পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫৭ লাখ ৫৫ হাজার ৪৪৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। সর্বশেষ ৩৭ জন কভিড-১৯ পজিটিভ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ফলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ২৪৮-এ।
গত বুধবার নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯২ দশমিক ৬৫ ও মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আরো ১ হাজার ৯২৩ জন করোনা রোগী সুস্থ হওয়ায় মোট সুস্থতার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ২৬ হাজার ১৩২।
গত একদিনে মারা যাওয়া ৩৭ জনের মধ্যে ২৪ জন পুরুষ ও ১৩ জন নারী। এদের মধ্যে ২৬ জন সরকারি হাসপাতালে, ১০ জন বেসরকারি হাসপাতালে ও একজন বাড়িতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। বয়স বিবেচনায় তাদের ২৪ জন ষাটোর্ধ্ব ছিলেন। বাকিদের মধ্যে সাতজন ৫১-৬০ বছরের মধ্যে, দুজন ৪১-৫০ বছর, তিনজন ৩১-৪০ বছর ও একজন ২১-৩০ বছর বয়সী। বিভাগভিত্তিক হিসেবে মৃতদের ১৬ জন ঢাকা বিভাগের, ১৫ জন চট্টগ্রাম, দুজন করে চারজন খুলনা ও সিলেট এবং একজন করে দুজন রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা। এ পর্যন্ত মৃত ১২ হাজার ২৪৮ জনের মধ্যে ৮ হাজার ৮৫৮ জন পুরুষ এবং ৩ হাজার ৩৯০ জন নারী।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, কোনো দেশে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা, তা বুঝতে পারার একটি নির্দেশক হলো রোগী শনাক্তের হার। টানা অন্তত দুই সপ্তাহের বেশি সময় পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা হয়। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর প্রথম করোনা রোগীর মৃত্যুর তথ্য দেয় সরকার। গত ২৭ এপ্রিল আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে সাত লাখ পেরিয়ে যায়। এর মধ্যে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালে ৭ এপ্রিল সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৬২৬ জন কভিড-১৯ পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়। মৃত্যু চলতি মাসে ১২ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে গত ১৯ এপ্রিল একদিনে সর্বোচ্চ ১১২ জনের মৃত্যু হয়। এদিকে দেশে আরো তিনজনের শরীরে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরন শনাক্ত হয়েছে। মঙ্গলবার যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনোম সেন্টার ল্যাব থেকে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। নতুন আক্রান্ত এ তিনজন ভারত থেকে ফিরে যশোর ও নড়াইলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে ছিলেন।
এ পর্যন্ত ভারতীয় ধরনে আক্রান্ত হওয়া সবার মধ্যে করোনার ভ্যারিয়েন্ট বি১.৬১৭.২-এর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। ভারতের এ ধরন বেশ উদ্বেগজনক। এ ধরন এরই মধ্যে বিশ্বের ৬০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ডাবল মিউট্যান্ট না হলেও এটি উদ্বেগজনক। এটি ২০ শতাংশ বেশি সংক্রমণ ঘটাতে পারে, এমনটি বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।