সর্বশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপে সাকিব আল হাসান যা করেছিলেন, তা ছিল অতিমানবীয়। তবে মানুষ তাঁর নিজ সামর্থ্যের সীমা পেরিয়ে তেমন অতিমানবীয় কীর্তির সৌধ সব সময় গড়তে পারে না। জীবদ্দশায় এমন সময় আসেও খুব কমই। যেমন ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের সময় এসেছিল সাকিবের। এই অলরাউন্ডারের আবারও বাংলাদেশ দলে তাঁর প্রিয় ব্যাটিং পজিশন তিন নম্বর ফিরে পাওয়ার লগ্নে ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল পোষণ করেন ঠিক এ রকম মনোভাবই। বিশ্বাসও করেন যে বারবার ওরকম রানপ্রসবা সময় আসবে না। তাই মহাতারকাকে নিয়ে প্রত্যাশায় বাঁধও দিয়ে রাখছেন দলের বাঁহাতি ওপেনার। সাকিবের কাছ থেকে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের আশা তাঁর অবশ্যই আছে। তাই বলে আবার এমন কিছুর প্রত্যাশাও নেই, যা দেখেছিলেন ২০১৯ বিশ্বকাপে।
নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে দেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ দিয়েই গত জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছিলেন সাকিব। ফিরেই জেনেছিলেন ব্যাটিং অর্ডারে একটু পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁকে। প্রিয় তিন নম্বর থেকে সরিয়ে সেই জায়গাটি দেওয়া হয়েছে তরুণ নাজমুল হোসেন শান্তকে। যদিও তিন ম্যাচে ১, ১৭ ও ২০ রান করার পর নিউজিল্যান্ড সফরে আর ওয়ানডেই খেলা হয়নি নাজমুলের। ক্যারিবীয় সিরিজে চারে খেলা সাকিব তিন ম্যাচে একটি ফিফটিও করেছিলেন। প্রথম ওয়ানডেতে ১৯ রানে আউট হওয়ার পর দ্বিতীয় ম্যাচে খেলেছিলেন অপরাজিত ৪৩ রানের ইনিংস। পারিবারিক কারণে নিউজিল্যান্ড সফরের সময় তিনি ছুটিতে থাকায় কিউইদের বিপক্ষে তিনে খেলা সৌম্য সরকারও দিতে পারেননি আস্থার প্রতিদান। তিন ম্যাচে করেন ০, ৩২ ও ১ রান। পর পর দুটি পরীক্ষা ব্যর্থ হওয়ার পর সৌম্য কোনোমতে দলে টিকে গেলেও জায়গা হারিয়েছেন নাজমুল। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সাকিবের তিনে ফেরা তাই অবধারিতই ছিল। তামিমও কাল এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে নিশ্চিত করলেন তা, ‘সাকিব তিন নম্বরেই ব্যাট করবে।’
সাকিবের তিনে ফেরা মানে যে কারো গত বিশ্বকাপ পারফরম্যান্সের কথা মনে পড়ে যেতে বাধ্য। আট ম্যাচে দুই সেঞ্চুরি ও পাঁচটি ফিফটিসহ ৮৬.৫৭ গড়ে ৬০৬ রান! বাঁধাই করে রাখার মতো পরিসংখ্যানের এক চিরকালীন ফ্রেমই! কিন্তু চিরকালই যে সাকিবের ব্যাট পারফরম্যান্সের ওরকম ফুল ফোটাবে না, সেই বাস্তবতাই যেন মনে করিয়ে দিতে চাইলেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক, ‘প্রত্যাশা অবশ্যই বেশি থাকবে। তবে মনে রাখতে হবে, সাকিব বিশ্বকাপে যা করেছে, তা ছিল বিরল। আমি তো চাইব প্রতি ম্যাচেই অমন হোক। সে-ও চাইবে। তবে প্রতি ম্যাচে তো সম্ভব না।’ প্রতিটি সিরিজেই তাই সাকিবের অতিমানবীয় কীর্তির আশায় নেই তামিম। তিনি বরং আশায় শুধুই ভালো পারফরম্যান্সের। ‘একটি ছেলে ৮-৯ ম্যাচে ৬০০ রান করে ফেলেছে, এমনটি তো সচরাচর দেখি না। আমি নিশ্চিত সে ভালো করবে। ও এখানে ভালো করেছেও। সে সেটি চালিয়েও যাবে। তবে যদি বিশ্বকাপের কথা চিন্তা করে দেখেন যে ওই ৬০০টা রান, এভাবে ক্রিকেট খেলাটা একটু কঠিন। ওরকম (২০১৯ বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স) না হলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমি নিশ্চিতভাবেই আতঙ্কিত হব না।’