করোনা প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার পর থেকেই শারীরিক উপস্থিতিতে দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে বিচারকাজ বন্ধ রয়েছে। তবে বিশেষ ব্যবস্থায় সীমিত পরিসরে ভার্চুয়ালি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বেশ কয়েকটি বেঞ্চে বিচারকাজ চলে আসছিল।
করোনা শনাক্তের হার কম হওয়ার প্রেক্ষাপটে বর্তমানে হাইকোর্ট বিভাগের আরও বেশকিছু বেঞ্চ বাড়ানো হয়েছে। এ অবস্থায় আদালতে ভার্চুয়াল শুনানির দিন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। সার্বিক পরিস্থিতি দেখে অ্যাটর্নি জেনারেল ও বারের সম্পাদকের সঙ্গে আলাপ আলোচনার করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।’
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল নিয়মিত আদালত খুলে দেয়া এবং হাইকোর্টের আরও বেঞ্চের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানালে গতকাল রোববার (২৩ মে) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এসব কথা বলেন।
ঈদুল ফিতর ও সরকার ঘোষিত ছুটির পর আপিল বিভাগের প্রথম কার্যদিবস শুরু হলো আজ। বিচারিক কাজের শুরুতেই প্রধান বিচারপতি ভার্চুয়াল কোর্টে যুক্ত সবাইকে ঈদ মোবারক জানান।
এ সময় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‘আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে ঈদ মোবারক জানাচ্ছি।’
এরপর তিনি বলেন, ‘বর্তমান করোনা পরিস্থিতি একটু উন্নতি হচ্ছে বলে আমাদের মনে হচ্ছে। এ হিসেবে আদালত খোলার ব্যাপারে আইনজীবীদের একটা দাবি রয়েছে। আগেও বলেছি, আপনারা বলেছিলেন পরিস্থিতি মূল্যায়ন করবেন। আমরা প্রত্যাশা করবো একটা পজিটিভ দিক।’ তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘পরিস্থিতিতো মূল্যায়ন করা হচ্ছে। এটাতো দেখতে পারছেন (কোর্ট বাড়ানো হয়েছে)। পরিস্থিতি মূল্যায়ন করি নাই এটা কি বলা যাবে?’ তিনি বলেন, ‘শোনেন, আজকে জনকণ্ঠে দেখলাম বর্ডার এরিয়াতে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে দেখা যাচ্ছে ব্যাপকভাবে। সার্বিক পরিস্থিতি দেখেই আগাচ্ছি।’
অ্যাটর্নি জেনারেল ও বারের সম্পাদকের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেই কোর্ট বাড়ানো হবে বলেও প্রধান বিচারপতি বলেন।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু থেকেই সকল আদালত বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে জরুরি বিষয় নিষ্পত্তির জন্য সীমিত পরিসরে কিছু কোর্ট খোলা রাখা হয়। প্রথমদিকে হাইকোর্ট বিভাগে চারটি বেঞ্চে বিচারকাজ চলছিল। এরপর পর্যায়ক্রমে কোর্ট সংখ্যা বাড়ানো হয়। বর্তমানে ১৩টি হাইকোর্ট বেঞ্চে বিচারকাজ চলছে।
এদিকে, শারীরিক উপস্থিতিতে অধস্তন আদালত খুলে দিতে প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন জানিয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে। তার প্রেক্ষিতে বিচারিক আদালতে শারীরিক উপস্থিতির মাধ্যমে আত্মসমর্পণের সুযোগ দিয়ে শনিবার (২২ মে) বিজ্ঞপ্তি জারি করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব অনুসরণ করে ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্তরা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল বা মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল বা সাইবার ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করতে পারবেন। এসব আদালতের বিচারক এজলাস কক্ষে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনসহ শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব বজায় নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করবেন।