শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:২৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
জব্দ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর রিট আরেক হত্যা মামলায় সাবেক বিচারপতি মানিককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে মানহানির মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান উৎপাদনে ফিরলো কর্ণফুলী পেপার মিল ২০৫০ সালের মধ্যে ৪ কোটি মানুষের মৃত্যু হবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণে দিল্লিতে মেয়ের সঙ্গে থাকছেন শেখ হাসিনা, দলবল নিয়ে ঘুরছেন পার্কে পিআইবির নতুন ডিজি ফারুক ওয়াসিফ, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি এম আবদুল্লাহ ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পোশাক শিল্প আইন আপনার হাতে তুলে নেয়ার কারো কোনো অধিকার নেই :স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দেয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বললেন মির্জা ফখরুল

অসহায়কে অন্ন দান

মাওলানা মাহাথির মোবারক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৪ মে, ২০২১

ক্ষুধার্তকে খাবার দেয়া পুণ্যের কাজ-সহানুভূতি ও মানবিকতার পরিচয়। রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘তোমরা গরিব-দুঃখীদের, এতিমদের দেখাশোনা করো, কেননা আমি নিজে এতিম ছিলাম।’ রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘আমি নিজেকে ভালোবাসি আর যারা এতিমদের, গরিব-দুঃখীদের ভালোবাসে তারাও হলো আল্লাহ তায়ালার চোখে উত্তম ব্যক্তি। আল্লাহ তায়ালাও তাদের ভালোবাসেন। ইসলামের দৃষ্টিতে ক্ষুধার্ত ব্যক্তিকে খাবার দেয়া গুরুত্বপূর্ণ কাজ। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে এ ব্যাপারে অত্যধিক গুরুত্ব ও উৎসাহ দেয়া হয়েছে। হাদিসে বলা হয়েছে, মানুষের কল্যাণসংশ্লিষ্ট যত কাজ আছে, তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম হচ্ছে দরিদ্র ও ক্ষুধার্তকে খাবার দান করা’ (বুখারি-১২)। পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে মহান আল্লাহ ক্ষুধার্ত ব্যক্তিকে খাবার দেয়ার আদেশ দিয়েছেন। বিভিন্নভাবে উৎসাহ দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি তাকে দুটি পথ প্রদর্শন করেছি। অতঃপর সে ধর্মের ঘাঁটিতে প্রবেশ করেনি। আপনি জানেন, সে ঘাঁটি কী? তা হচ্ছে দাসমুক্তি অথবা দুর্ভিক্ষের দিনে এতিম আত্মীয় অথবা ধূলি-ধূসরিত মিসকিনকে অন্ন দান’ (সূরা বালাদ, আয়াত : ১০-১৬)।
তাই ক্ষুধার্ত দরিদ্র ব্যক্তিকে খাবার দানের মাধ্যমে আমরা মহান আল্লাহর নির্দেশ পালনকারী বান্দা হিসেবে গণ্য হতে পারি। হাদিস শরিফে এসেছে মহান আল্লাহ তায়ালা কাল কিয়ামতের দিন বান্দাদেরকে প্রশ্ন করবেন দুনিয়াতে আমি অভাবে ছিলাম কিন্তু তোমরা আমাকে কেন দেখনি? আমার সাহায্য প্রয়োজন হয়েছিল কিন্তু তোমরা আমাকে সাহায্য করোনি, আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম কিন্তু তোমরা আমাকে খাবার দাওনি কেন? তখন বান্দা উত্তর দেবেনÑ হে আল্লাহ! আপনাকে কোথায় পাবো কিভাবে? সাহায্য করব? আপনি তো সব কিছু থেকে অমুখাপেক্ষী। কিভাবে আপনাকে আমরা খাবার দেবো? তখন আল্লাহ তায়ালা বলবেন, ‘তোমাদের প্রতিবেশীদের মাঝে অনেকে অভুক্ত থেকেছে। অনেকের সাহায্যের প্রয়োজন পড়েছে কিন্তু তোমরা তাকে সাহায্য করোনি, অনেকে না খেয়ে রাত যাপন করেছে কিন্তু তোমরা তার খোঁজ নাওনি। অনেকে অসুখের যন্ত্রণায় ভুগেছে কিন্তু তোমরা তার সেবা করোনি যদি তাদেরকে তোমরা সাহায্য করতে তাহলে সেটা আমাকে সাহায্য করা হতো’ (সহিহ মুসলিম)। অন্য এক জায়গায় মহানবী সা: বলেন, ‘দয়াশীলদের ওপর দয়াময় আল্লাহ দয়া করে থাকেন। তোমরা জমিনবাসীদের ওপর দয়া করো, আসমানবাসী (আল্লাহ) তোমাদের ওপর দয়া করবেন’ (তিরমিজি-১৯২৪; আবু দাউদ-৪৯৪১)। অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি অনুগ্রহ করে না, তার প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ বর্ষিত হয় না’ (বুখারি, হাদিস : ৭৩৭৬; মুসলিম, হাদিস : ২৩১৯)। রাসূল সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো গরিবের চলার পথ সহজ করে দেয়, দুনিয়া-আখিরাতে মহান আল্লাহ তার চলার পথ সহজ করে দেবেন’ (আবু দাউদ-২৫৯৪; তিরমিজি,-১৭০২)। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিনরা আল্লাহর প্রতি তাদের ভালোবাসার খাতিরে ক্ষুধার্ত এতিম, মিসকিন ও কয়েদিদের খাবার দান করে। রাসূল সা: আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সাহায্যে থাকবে, আল্লাহ তার সাহায্যে থাকবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিনে একটি বড় বিপদ দূর করে দেবেন’ (বুখারি-২৪৪২; মুসলিম-২৫৮০)। ক্ষুধার্তকে খাবার দান করার মাধ্যমে মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করা হয়। এতে আমরা মহান আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করতে পারি। আবার তাদের কষ্ট লাঘবের কারণে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন বিভিন্ন কষ্ট লাঘব করে দেবেন। হাদিস শরিফে পাওয়া যায় হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাতু সালাম কখনো তিনি মেহমান ছাড়া খাবার খেতেন না কোনো একজন মেহমানকে বা ক্ষুধার্ত ব্যক্তিকে নিয়ে তারপর খাবার খেতেন। গরিব, অসহায় ও ক্ষুধার্তকে খাবারদানকারী রাসূল সা:-এর আনুগত্যকারী বলে গণ্য হবেন। রাসূল সা: ক্ষুধার্তকে খাবার দান করতে কঠোর নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা ভিক্ষুক (ক্ষুধার্তকে) কিছু না কিছু দাও, আগুনে পোড়া একটা খুর হলেও’ (আহমাদ-১৬৬৯৯; নাসায়ি-২৫৬৫)। ক্ষুধার্ত ব্যক্তিকে খাবার দেয়ার চমৎকার একটি উপমা হজরত ফাতেমা রা:। তার ঘরে তিন দিন যাবত চুলায় আগুন জ্বলে না। ক্ষুধার যন্ত্রণায় সকালে ভুগছেন ঠিক সেই মুহূর্তে হজরত আলী রা: কিছু আটা নিয়ে এলেন যা দিয়ে তিনি রাতের বেলা রুটি বানালেন।
চমৎকার একটি উপমা: রাতে যখন রুটি খেতে যাবেন ঠিক ওই মুহূর্তে একজন এতিম এসে বলতে লাগল, মা আমি আজ সারা দিন কিছু খাইনি, সুতরাং আপনি আমাকে কোনো কিছু খেতে দেন। তখন যে কয়েকটি রুটি বানিয়ে ছিলেন সব তাকে দিয়ে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। পরদিন তিনি আবার তিনটি রুটি বানালেন। বানানোর পর প্রথম দিনের মতো একজন মহিলা এসে বলতে লাগল, মা আমি আজ সারা দিনে এক গ্লাস পানিও খাইনি। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। ঘরে কোনো কিছু খাবার থাকলে আপনি কিছু আমাকে খাবার দিলে খুশি হবো। হজরত ফাতেমা রা: তায়ালা আনহা মহিলার কষ্ট দেখে নিজের কষ্টের কথা ভুলে গিয়ে তাকে রুটি কলা দিয়ে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। তৃতীয় দিনও ওই একই রকম ঘটনা ঘটল। যখন তিনি রুটি খেতে যাবেন এমন সময় একজন অন্ধ ব্যক্তি এসে বলল, মা আমি কোনো কাজ করতে পারি না বিধায় কোনো কিছু খেতে পারি না। আপনি আমাকে কিছু সাহায্য করুন। তখন হজরত ফাতেমা রা: নিজের কষ্টের কথা ভুলে গিয়ে সেই অন্ধ ব্যক্তিকে সব খাবার দিয়ে আজও না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। এ ছিল আমাদের আগেকার যুগের সোনালি ইতিহাস, যা আজ আমরা মুসলমানরা অনুসরণ করি না। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সঠিক বুঝ দান করে সঠিক পথে ফিরিয়ে দিন। আমীন। লেখক : আলেম ও ইসলামী গবেষক




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com