সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ভিন্ন মত দমনের অংশ হিসাবে সরকার ঠুনকো অজুহাতে অন্যায়ভাবে বাংলাদেশ ফেডরেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি ও দৈনিক সংগ্রামের চীফ রিপোর্টার রুহুল আমিন গাজী ও দৈনিক সংগ্রামের ভারপ্রাপ্ত বার্তা সম্পাদক সাদাত হুসাইনকে সাত মাস ধরে জেলে আটকে রাখা হয়েছে। দিন দিন তাদের শারিরিক অবস্থার অবণতি ঘটছে। মানবিক দিক বিবেচনা করে সরকারের উচিত তাদের মুক্তি দেওয়া। কিন্তু সরকার সেটা না করে নানা অজুহাতে আটক রাখাকে দীর্ঘ করছে। অবিলম্বে নি:শর্ত মুক্তি না দিলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
গত মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক এসোসিয়েশন (বিআরজেএ) আয়োজিত বিএফইউজের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক সংগ্রামের চীফ রিপোর্টার রুহুল আমিন গাজী ও দৈনিক সংগ্রামের ভারপ্রাপ্ত বার্তা সম্পাদক সাদাত হুসাইনের নিঃশর্ত মুক্তি ও সকল সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেসে নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। বি আরজেএ’র চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন ইবনে মঈন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএফইউজের সভাপতি এম আবদুল্লাহ, মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, ডিইউজের সাবেক সভাপতি কবি আব্দুল হাই শিকদার। সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক নেতা মুদাব্বের হোসেন, আমিরুল ইসলাম কাগজী, সরদার ফরিদ আহমদ, শাহীন হাসনাত, আবু ইউসুফ, রাশেদুল হক, দিদারুল আলম, আলমগীর হোসেন, ডি এম আমিরুল ইসলাম অমর, ওয়াসিয়ার রহমান, এরশাদুর রহমান প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বি আরজেএ’র মহাসচিব মুহাম্মদ আবু হানিফ।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বাংলাদেশে এখন কেউ নিরাপদ নয়। জালিম সরকারকে দেশকে মনুষ্য বসবাসে অযোগ্য করে তুলেছে। বাঁচতে হলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের বিকল্প নেই। নিকট অতীতে প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম তার জলন্ত উদাহরণ। সম্মিলিত আন্দোলনের কারণে সরকার তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছে। রুহুল আমিন গাজী ও সাদাত হুসাইনসহ আটক সাংবাদিকদের মুক্ত করতে হলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সরকারের জুলুম থেকে মুক্তি পেতে রাজপথে নামতে হবে। মুক্তির আন্দোলনকে হাইকোর্টের গেটে এমনকি প্রয়োজন হলে বিচারপতির দরজায় নিয়ে যেতে হবে। জনগণের দুর্দশা এজেন্ডা হিসাবে নিয়ে এ আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। সরকারের চলমান জুলুম থেকে রক্ষার প্রতিশ্রুতি নিয়ে আন্দোলন করলে জনগণ অবশ্যই তাদের অধিকারের ব্যাপারে সচেতন হবে।
তিনি বলেন, সাংবাদিকদের উপর যে নির্যাতন শুরু হয়েছে সরকারের সাথে ঐক্য করে মুক্তি মিলবে না। সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে এক প্লাটফর্মে না আসলে নির্যাতন বন্ধ হবে না। কিছু লোক হয়তো সরকারের কাছ থেকে অবৈধ সুযোগ সুবিধা নিতে পারবেন। যেভাবে সাগর-রুনি আন্দোলনকে বিকিয়ে দিয়ে কেউ কেউ সুবিধা নিয়েছেন। এদের একদিন জবাব দিতে হবে।চিরদিন অন্ধকার থাকবে না। সুদিন অবশ্যই ফিরবে। সেই সুদিনের সাক্ষি হতে মানুষের মুক্তির আন্দোলনে এখনই শরিক হওয়ার শ্রেষ্ঠ সময়। তিনি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে সকল প্রকার অন্যায় অবিচার জুলুম নির্যাতন রুখে দেওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো আন্দোলন বৃথা যায় না। যারা মনে করছেন এ আন্দোলন করে সরকারের পরাজিত করা সম্ভব নয় তারা ভূল পথে হাটছেন। আন্দোলনকারীরা কখনো পরাজিত হন না। জয় আমাদের হবেই।
এম আব্দুল্লাহ বলেন, সাংবাদিকদের অধিকার আদায় আন্দোলনের আপোষহীন নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন গাজীকে অন্যায়ভাবে সাত মাস জেলখানায় বন্দি করে রাখা হয়েছে। সাংবাদিকদের ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নের আন্দোলন থেকে শুরু করে সকল প্রকার অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সাহসী কণ্ঠস্বর। সরকার বিরোধী মতকে সহ্য করতে না পেরে তাকে ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় আটক করে এখন নানা অজুহাতে জামিন প্রলম্বিত করছে। তিনি বলেন, রুহুল আমিন গাজী ও সাদাত হুসাইনকে অবিলম্বে মুক্তি না দিলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। আন্দোলন আর প্রেসক্লাবে থাকবে না। আন্দোলন প্রয়োজনে হাইকোর্টের গেটে নিয়ে যাওয়া হবে। অনতিবিলম্বে মুক্তি না দিলে আমরা বিচারপতির গেটে গিয়ে আন্দোলন করবো।
নুরুল আমিন রোকন বলেন, সাংবাদিকদের কাজ হলো দেশের স্বার্থে জনগণের সাথে লেখালেখি করা। আমাদের অফিসে থাকার কথা ছিল। কিন্তু পেশার ওপর আঘাত আসায় আমরা আজ রাজপথে আন্দোলন করছি। রুহুল আমিন গাজী ও সাদাত হুসাইনের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়বো না। চলমান আন্দোলনের মাধ্যমে অবশ্যই সুদিন ফিরে আসবে।
কামাল উদ্দিন সবুজ বলেন, স্বাধীন সংবাদ মাধ্যম ও সাংবাদিকতা আজ ক্যান্সারে আক্রান্ত। এখন ক্যামোথেরাপী দিয়ে বাচিয়ে রাখা হয়েছে। এভাবে কতদিন বাঁচিয়ে রাখা যাবে সেটাই আজ বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। সাংবাদিকদের কলম থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আর সেই বড় কলমটি হলো সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী। তিনি বলেন, সাংবাদিকতা পেশাকে সম্মানের জায়গায় নিয়ে আসতে হলে দরকার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। আর সেই আন্দোলনের মাধ্যমে অবশ্যই রুহুল আমিন গাজী ও সাদাত হুসাইনরা মুক্ত হবে।
কাদের গণি চৌধুরী বলেন, বর্তমানে সাংবাদিকরা যে নির্মমতার শিকার তা গত ৫০ বছরে এমন নজির নেই। এ রকম নির্যাতন শুধু ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলেই হয়ে থাকে। মিডিয়ার কণ্ঠরোধ করে ফ্যাসিবাদী শাসন বেশি দিন টিকিয়ে রাখা যাবে না। তিনি সরকারের উদ্যোশ্যে বলেন, সাংবাদিকদের উপর নির্যাতন বন্ধ করুন। অবিলম্বে আটক সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজী ও সাদাত হুসাইনসহ সকল সাংবাদিকের মুক্তি দিন। অন্যথায় কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
আব্দুল হাই শিকদার বলেন, বর্তমান সরকার স্বাধীনতার দূষমণ। জনগণের দূষমণ। স্বাধীনতার চেতনাকে পায়ের নীচে পিষ্ঠ করছে। দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার মাধ্যমে আপষহীন সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজীকে মুক্ত করে মিথ্যা মামলার জবাব দেওয়া হবে।
শহিদুল ইসলাম বলেন, মিথ্যা মামলায় অন্যায় ভাবে সাংবাদিকদের প্রিয় নেতা রুহুল আমিন গাজীকে ৭ মাস ধরে জেলে আটকে রাখা হয়েছে। তিনি অবিলম্বে রুহুল আমিন গাজী ও সাদাত হুসাইনের নামে ভিত্তিহীন ও মিথ্যামামলা প্রত্যাহার করে মুক্তির দাবি জানান। একইসাথে সাংবাদিকদের উপর নির্যাতন বন্ধের আহবান জানান।