পালাবদল এসেছে প্রকৃতিতে। বছর ঘুরে আবারও এসেছে জ্যৈষ্ঠ মাস। জ্যৈষ্ঠ মাসকে মধুমাসও বলা হয়ে থাকে। মধুমাসের এ সময়ে সারাদেশেই চোখে পড়ে গ্রীষ্মকালীন নানান ধরনের ফল। প্রতি বছরের মতো এবারও গ্রীষ্মকালীন মৌসুমী ফলে ছেয়ে গেছে কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন ফলবাজার।
সরেজমিনে কুমিল্লা নগরী ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি বাজারেই গ্রীষ্মকালীন মৌসুমী ফলের সমারোহ। এসব ফলের মধ্যে রয়েছে লিচু, কাঁঠাল, আম, তালের শ্বাস, আনারস ইত্যাদি। এছাড়া মৌসুম শেষ হওয়ায় বিদায়ের পথে থাকা বেল, বাঙ্গি ও তরমুজের মতো ফলও দেখা যাচ্ছে বাজারগুলোতে। এসব ফলের গন্ধ সুবাস ছড়াচ্ছে প্রতিটি বাজারে। গ্রীষ্মকালীন মৌসুমী ফলের মধ্যে বর্তমানে বাজারে ক্রেতাদের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে লিচু। এছাড়া নগরীর প্রায় প্রতিটি পাড়া-মহল্লায়ও ভ্যানে করে মৌসুমী ফল বিক্রি করছেন অনেকে। বাজারগুলো থেকে কিছুটা কম দামেই ফল বিক্রি হচ্ছে ভ্যানের ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতে।
নগরীর অন্যতম বৃহৎ ফলের বাজার টমছমব্রিজ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বিক্রেতারা ব্যস্ত সময় পার করছেন মৌসুমী ফল বিক্রিতে। তারা মূলদোকানের সামনের অংশে মৌসুমী ফল রেখে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন। এ বাজারে বেশি বিক্রি হচ্ছে লিচু। এছাড়া হিমসাগর, লেংড়াসহ বিভিন্ন জাতের আমও শোভা পাচ্ছে ফল দোকান গুলোতে। তবে লিচু পুরোদমে পরিপক্ব হলেও আম মাত্র আসতে শুরু করেছে বাজারে। ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা, আগামী সপ্তাহের মধ্যেই ফল বাজারের বেশির ভাগ অংশ থাকবে মিষ্টি ও রসালো আমের দখলে।
টমছমব্রিজ ফল বাজারের ব্যবসায়ী কাজী রাশেদ বাসসকে জানান, এ বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে লিচু। প্রকার ভেদে প্রতি একশ লিচু বিক্রি হচ্ছে আড়াইশ থেকে তিনশ টাকায়। গতবারের তুলনায় এবার দাম কিছুটা বেশিই মনে করছেন ক্রেতারা। অপর ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, আমের বেচাকেনা এখনো জমে উঠেনি। তবে লিচুর এখন ভরপুর মৌসুম। তাই লিচুর ব্যবসা জমজমাট। এছাড়া মৌসুমের শেষ দিকে হলেও এখনও বাজারে তরমুজ আছে। তিনশ থেকে ৫শ টাকা পর্যন্ত প্রতি পিস তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। আমের বেচাকেনা জমে উঠবে আগামী সপ্তাহ থেকে। এ বাজারে ফল কিনতে আসা মহিউদ্দিন বাসসকে বলেন, তিনশ টাকা দিয়ে একশ লিচু কিনেছি। বাজারে ভরপুর মৌসুমী ফল থাকলেও দাম চড়া। তবে প্রশাসনের উচিত নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা। যাতে সকল শ্রেণির ক্রেতারা এসব মৌসুমী ফল কিনতে পারে। পাশাপাশি ভোক্তাদের ফরমালিন মুক্ত ফল কেনা নিশ্চিত করতে হলে বাজারে অভিযান পরিচালনা করতে অনুরোধ জানান প্রশাসনকে।
নগরীর রাজগঞ্জ বাজারে গিয়েও দেখা গেছে নানান ধরনের ফলের সমারোহ। এ বাজারে ভারত সীমান্ত এলাকার পাহাড়ি কাঁঠাল ও আনারস বিক্রি জমজমাট। সীমান্ত এলাকার ব্যবসায়ীরা বাইসাইকেলে করে মৌসুমী ফল কাঁঠাল, আনারস ও কলা এনে এ বাজারে বিক্রি করছেন। রাণীর বাজার, নিউ মার্কেট, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা জেলখানা সড়ক এলাকাতেও বসে এই ফলের পসরা। মাঝারী আকারের একটি কাঁঠাল কিনতে ক্রেতাদের খরচ হচ্ছে পঞ্চাশ থেকে এক’শ টাকার বেশি। আনারসের হালি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া নগরীর প্রায় প্রতিটি এলাকায় তালের শ্বাস বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে। নগরীর হাউজিং এলাকায় ভ্যানে করে মৌসুমী ফল বিক্রি করেন রমজান হোসেন নামের এক যুবক। রমজান বলেন, আগে ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করতাম। এখন মৌসুমী ফলের চাহিদা বেশি। তাই ফল বিক্রি করছি। দাম কিছুটা বেশি হলেও মানুষ ফল কিনছেন। এতে আমাদের লাভও ভালো হচ্ছে।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো.আবু সাঈদ বাসসকে বলেন, গ্রীষ্ম মৌসুমের নানান ধরনের দেশীয় ফল এখন বাজারে এসেছে। এগুলো মানুষের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। আমরা চাই মানুষ যেন ফরমালিন মুক্ত নিরাপদ ফল খেতে পারেন। এজন্য ফলের বাজারগুলোতেও আমরা অভিযান পরিচালনা করবো। কোথাও অনিয়ম পেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।