রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৮ অপরাহ্ন

সীমান্তবর্তী জেলায় করোনা পরিস্থিতির অবনতির কারণ অনিয়ন্ত্রিত যাতায়াত

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ৩১ মে, ২০২১

ভারত থেকে মহানন্দা নদী পার হয়ে চাপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করা যায় বাংলাদেশে। এই জেলার বেশিরভাগ সীমান্তই অরক্ষিত। তাই চোরাচালানকারীদের জন্য কিছুটা নিরাপদ রুট এই অরক্ষিত সীমান্ত এলাকা। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জেলার অভ্যন্তরীণ অবাধ যাত্রা। দুই মিলে অনিয়ন্ত্রিত যাতায়াতে অবনতি হয়েছে দেশের ৮টি জেলার করোনা পরিস্থিতি। চাঁপাইনবাবগঞ্জের পর এখন করোনার হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে সাতক্ষীরা। তাই চাপাইনবাবগঞ্জ ছাড়া ৭ জেলায় লকডাউন দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বিশেষজ্ঞ কমিটি। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। কেবল চাঁপাইনবাবগঞ্জ নয় সীমান্তবর্তী সবগুলো এলাকা নিয়েই এ ধরনের অভিযোগ এনেছে স্থানীয় প্রশাসন।
সীমান্তবর্তী কোন জেলার কী পরিস্থিতি: করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে খুলনা বিভাগের ভারত সীমান্তবর্তী সাতক্ষীরা জেলাকে লকডাউনের আওতায় আনার প্রস্তাব দিতে বলেছে খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। রবিবার খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যশোর জেলার এপ্রিল মাসের চেয়ে মে মাসে সংক্রমণের হার কমেছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন। তিনি জানান, এপ্রিলে এখানে সংক্রমণের হার ছিল ২৫ শতাংশের মতো, মে মাসে সেটা ১৫ থেকে ২০ শতাংশের মতো ছিল।
তিনি আরও বলেন, এখনও পর্যন্ত যশোর নিয়ে আমি সেভাবে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত নই। তবে পর্যবেক্ষণে রয়েছে এই জেলা। আগামী জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ না যাওয়া পর্যন্ত তার জেলাকে অ্যালার্মিং বলে ভাবছেন না তিনি।
নাটোর জেলা সিভিল সার্জন ডা. কাজী মিজানুর রহমান জানান, সেখানকার সংক্রমণের হার গত দুইদিন ২৫ শতাংশ। তবে ১৪ দিনের গড়ে তা দাঁড়িয়েছে ৩৫ শতাংশে। এটি কখনও বাড়ে আবার কখনও কমে যায়।
এদিকে নওগাঁর সিভিল সার্জন ডা. এ বি এম আবু হানিফ বলেন, সামগ্রিকভাবে এখানকার পরিস্থিতি অতটা খারাপ নয়। গত ১৪ দিনে সংক্রমণের হার ২৪ শতাংশের কাছাকাছি। গত দুই সপ্তাহ যাবত আমরা এইরকম একটা বৃদ্ধি দেখতে পারছি। নওগাঁয় নমুনা সংগ্রহের হার এমনিতেই কম। তাই ৭-৯ শতাংশের মধ্যেই থাকতো সংক্রমণের হার।
ভারত থেকে শিবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ সহজ: রাজশাহী জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ভারত থেকে মানুষ পদ্মা ও মহানন্দা নদী অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এর মধ্যে মহানন্দা প্রায় শুকিয়ে গেছে। এই দিক দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করা এখন খুব সহজ। আর শিবগঞ্জ উপজেলা সীমান্ত পুরোটা সুরক্ষিত নয়। তাই সংক্রমণ বাড়ার শুরুর দিকেই নজরদারি বাড়ানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে বিজিবি এবং পুলিশকে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিবগঞ্জের সীমান্ত অনেকটাই অরক্ষিত। এখানে দিয়ে মানুষের অবাধ যাতায়াত আছে। বিশেষ করে স্বর্ণ ও মাদক চোরাচালানকারীদের দৌড়াত্ম্য বেশি এই সীমান্ত এলাকায়। তাছাড়া বৈধভাবে যারা প্রবেশ করছে তাদেরও পরীক্ষার সুযোগ ছিল না।
বেনাপোল দিয়ে আসা ভারত ফেরত যাত্রীর কোয়ারেন্টিন সাতক্ষীরার হোটেলে: সাতক্ষীরাকে করোনার নতুন হটস্পট হিসেবে ধারণা করছেন স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্টরা। ২৪ ঘন্টায় জেলায় ৬৬ জনের মধ্যে ৩৭ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। শতকরায় তা ৫৬ শতাংশ। সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট আছে কিনা জানতে ৪ দিন আগে নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। সেটির ফলাফল এখনও পাওয়া যায়নি। স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, ভারত ফেরত ৩৩৭ জনের মধ্যে ১৭ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হলেও এখনও কারওর শরীরে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়নি। তাছাড়া বেনাপল দিয়ে আসা ভারত ফেরত যাত্রীদের কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা আছে সাতক্ষীরার হোটেলে।
সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. মো: হুসাইন শাফায়াত বলেন, ঈদুল ফিতরের পর থেকে দেশে সংক্রমণ বেড়েছে। ঈদেরও আগে থেকে ভারতফেরত পাসপোর্ট যাত্রীদের কোয়ারিন্টেনে রাখা হয়েছিল তখন কিন্তু এত করোনা শনাক্ত হয়নি। ঈদের সময় সরকারের বিধিনিষেধ না মেনে শপিং ও গ্রামের বাড়ি যাওয়ার ঘটনায় ঈদের পর আবারও সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে।এখানকার কেউ মাস্ক পরতে আগ্রহী না। দিন দিন জেলার পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। মানুষ এখনই সতেচন না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে।
তিনি আরও বলেন, ঈদের আগে জেলায় করোনার সংক্রমণের হার ছিলো ১৩ শতাংশ। তবে ঈদ পরবর্তী করোনার সংক্রমণের হার ১৭ শতাংশ বেড়ে যেয়ে ৪৫ শতাংশ হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে জেলার চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন। একারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রয়োজনে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে সাতক্ষীরাকে লকডাউনের আওতায় আনা হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতর যা বলছে: স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, সীমান্তবর্তী জেলাগুলো দিয়ে ভারতে মানুষের অবৈধ যাতায়াতই সংক্রমণ বাড়ার অন্যতম কারণ। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন একথা জানান। সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সংক্রমণ বাড়ার কারণ কী প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যেসব এলাকায় পাসপোর্ট নিয়ে ভারতে যাতায়াত হচ্ছে, তাদেরকে খুব ভালোভাবে স্ক্রিনিংসহ কোয়ারেন্টিনে নেওয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে করোনা শনাক্ত হলে তাদের আইসোলেশনে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এসব এলাকায় বৈধ ছাড়াও অবৈধভাবে অনেকে ভারতে যাতায়াত করেন।’
আমাদের চারদিকেই ভারত। তাদের সঙ্গে আমাদের যাতায়াত বা যোগাযোগ অনেকভাবেই বিদ্যমান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কিছুকিছু জায়গায় কেবলমাত্র নৌকায় করেও যাতায়াত হয়।’
অবৈধভাবে যাতায়াতের মাধ্যমেও সংক্রমণ ছড়িয়ে যেতে পারে জানিয়ে রোবেদ আমিন বলেন, ‘ইতোমধ্যে ঈদের সময় অনেকেই গ্রামে গিয়েছেন এবং তারা আবার ঢাকামুখী হয়েছেন। তাদের মাধ্যমেও এটা ছড়িয়ে যেতে পারে। আর এসব কারণেই সংক্রমণ বেড়েছে বলে মনে করি।
বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন: সরকারের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. আবু জামিল ফয়সাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট এবং ভারতের সঙ্গে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে মানুষের অবাধ চলাচলের কারনেই এসব জেলাতে সংক্রমণ ছড়িয়ে গেছে। সবকিছু মিলিয়েই এ এলাকাতে সংক্রমণ বেড়েছে, কোনও কারণকে এককভাবে দায়ী করার সুযোগ নেই এখানে।ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টেতো ছিলই, সেই সঙ্গে মানুষের স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা আজকের এই অবস্থার তৈরি করেছে।
অবৈধপথে যারা যাতায়াত করছে তাদের জন্য কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি জানিয়ে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ভারত থেকে আসা ট্রাকগুলো এখানে আসে, তাদের জন্যও ভালো ম্যানেজমেন্ট হয়নি। পণ্য আসার পর বাংলাদেশের শ্রমিকরা সেখানে কাজ করছে। সেখানে খুব একটা ডিসট্যান্স মেনে কাজ করা হয়না। সেইসঙ্গে রয়েছে গোলমেলে লকডাউনসহ হ য ব র লপ রিস্থিতি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সবকিছুতে হেলাফেলা করে আজ এই অবস্থা হয়েছে। সমন্বয়হীনতার কারণেই দেশের আজ এই অবস্থা বলেও মন্তব্য করেন অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।-বাংলাট্রিবিউন




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com