পেশা বদলে মাছ চাষ করে সাবলম্বী হচ্ছেন রৌমারীর পেনকালচার মাছ চাষিরা। কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার শৌলমারী ইউনিয়নের ছড়ার বিল এলাকার রাজ মিস্ত্রী সহিবর রহমান(৪৫), কলা বিক্রেতা আব্দুর রশিদ(৫৫), পান বিক্রেতা আব্দুল খালেক(৩৫), কৃষক আছকের আলী(৬০), জেলে নায়েব আলী(৪০), মৎস্য জীবি স্বাধিন রাম দাস(৫৩), তারা তাদের পেশায় কোনো রকমে সংসার চালাতেন। কিন্তু তারা এখন সচ্ছল মাছচাষি। কয়েক বছর ধরে তারা ৬০ সদস্যের একটি ছড়ার বিল সমবায় সমিতির মাধ্যমে প্রায় ১৫০ হেক্টর আয়াতনের জলাশয়ে মাছ চাষ করছেন। মৌসুমে খরচ হয় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা। আর মাছ বিক্রি করে পান প্রায় বিশ লাখ টাকা। কয়েক বছর ধরে মাছের চাষ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। ছোট ছোট ডোবা, নালায়, খালে বিলে নেট জালের প্যান্ডেল ও বাঁধ দিয়ে তৈরি জলাশয়ে (পেনকালচার) ও পুকুরে পোনা ছেড়ে মাছ চাষ করছেন এলাকার লোকজন। এসব পেনকালচারে ও পুকুরে রুই, কাতল, কালবাউশ–, ব্রিগহেড, সিলভারর্কাপ, পুঁটি, বাটা, মিররর্কাপ ও গ্রাসর্কাপ, শিং, মাগুর, পাবদা, গোলসা, কৈ, মনোসেক্স, গিপ্ট তেলাপিয়া জাতীয় মাছের চাষ হচ্ছে। ব্যক্তিগত ও যৌথ উদ্যোগে গড়ে ওঠা মাছের খামার উপজেলার অর্থনৈতিক অগ্রগতির নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে বলে মনে করেন মৎস্য কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা। রৌমারী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় বর্তমানে ১৪৮০টি মালিকা পুকুর,উপজেলা পরিষদের ২টি, প্রাতিষ্ঠানিক ৭ টি, ২৭ টি জলাশয় তার মধ্যে ১১ টিতে পেনকালচার রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৫শ’ হেক্টর জলাশয়ে মাছ উৎপািদত হয়ে আসছে। মাছচাষিরা ছড়ার বিল মৎস্য চাষি সমবায় সমিতির সভাপতি রশিদ, সাধারণ সম্পাাদক সহিবর রহমানসহ অনেকে বলেন, রৌমারী উপজেলা মাছ চাষের উপযোগী হলেও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, রেণু পোনার অভাবসহ নানা অসুবিধার কারণে স্থানীয় লোকজন মাছ চাষে উৎসাহী ছিল না। কয়েক বছর আগেও সবাই ব্রহ্মপুত্র, জিনজিরাম, হলহলী, সোনাভরি নদী ও কালাপানির বিলের মাছের ওপর নিভরশীল ছিল। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বদিউজ্জামান রানা জানান, রৌমারী উপজেলার কমন বেনিফিসারিজ গ্রুফ (সিবিজি) ও ব্যক্তি পর্যাযয়ে মাছের খামার গড়ে উঠেছে। এতে জড়িত হয়েছেন পাঁচ শতাধিক ব্যক্তি। রৌমারী উপজেলার ’সিপিজি মৎস্য চাষ সম্প্রসারণ প্রকল্পের’ আওতায় মাছ চাষের প্রতি লোকজনকে আকৃষ্ট করা, তাঁদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়াসহ পুকুর ও পেনকালচার নির্মাণ করে দেওয়ার কার্যক্রম চলছে। রৌমারী উপজেলার বাতার গ্রাম এলাকার বাসিন্দা আদম আলী(৫০), কয়েক বছর ধরে রেণু পোনার চাষ করছেন। আগে মাছ চাষ করলেও চাহিদা বাড়ায় রেণু থেকে পোনা উৎপাদন করে চাষিদের কাছে বিক্রি করছেন। আদম আলী বলেন, উপজেলায় মাছ চাষের প্রচুর সম্ভাবনা আছে। উপজেলার ছোট ছোট খালে বাঁধ দিয়ে প্যান্ডেল তৈরি করে আরও অনেক বেশি জায়গাজুড়ে মাছ চাষ করা যাবে। প্রতিবছর মাছ চাষের পরিমাণ বাড়ছে উল্লেখ করে সহিবর রহমান জানান, তিনি বছরে ১শ’ কেজি রেণু থেকে পোনা উৎপাদন করেন। তারপরও স্থানীয় চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয় না। তার মত আরও অনেকে রেণু থেকে পোনা উৎপাদন করেন, তারপরেও অনেক চাষিকে উপজেলার বাইরে থেকে পোনা আনতে হয়। শৌলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান হাবিল বলেন, মাছ চাষ সম্প্রসারণে মৎস্য বিভাগ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। চাষিদের দলভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেওয়ায় উৎপাদন বাড়ছে। এখন মাছ চাষ করে অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন। তবে মাছ চাষে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা গেলে মাছ চাষের পরিমাণ আরও বাড়ানোযেত। আর চাষিদের দলভিত্তিক জাল দেওয়া হলে উৎপাদন খরচও কমানো সম্ভব হবে।