গত বছর বাজেটে কালো টাকা বিনিয়োগের ঘোষণার পর প্রতিদিনই উত্থান হচ্ছিল শেয়ার বাজারের। বিনিয়োগকারীরা ধরে নিয়েছিলেন এবারের বাজেটেও কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ থাকবে। কিন্তু বৃহস্পতিবার (৩ জুন) জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল যে বাজেট উপস্থাপন করেছেন, সেখানে কালো টাকার বিষয়ে পরিষ্কার করে কিছু বলা নেই। তবু উচ্ছ্বসিত বিনিয়োগকারীরা। তারা মনে করেন, নতুন বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য যেসব সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তাতেই বাজার তরতর করে এগিয়ে যাবে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, ‘কালো টাকার ঘোষণা দেওয়ার দরকার নেই। লিস্টেড কোম্পানির করপোরেট কর ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ২২ শতাংশ করার প্রস্তাব ও পুঁজিবাজার চাঙা করতে অর্থমন্ত্রী যে প্রস্তাব রেখেছেন, বিনিয়োগকারীরা তাতেই খুশি।’ তার মতে, শেয়ার বাজার ভেতর থেকে বদলে যাচ্ছে। বাজেটে যেসব প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তাতে এই বাজার সব সময়ই স্থিতিশীল থাকবে। প্রসঙ্গত, পুঁজিবাজার চাঙা করতে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর করপোরেট কর আড়াই শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সরকার পুঁজিবাজারকে গতিশীল ও উজ্জীবিতকরণের লক্ষ্যে নানাবিধ সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। স্টক এক্সচেঞ্জকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার উদ্দেশ্যে এবং যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আরও কিছু পদক্ষেপ শিগগিরই বাস্তবায়ন করা হবে।’ বাজেট প্রস্তাবকালে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছেÍপুঁজিবাজারে ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন চালু করা, আধুনিক পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইনস্ট্রুমেন্ট যথা সুকুক, ডেরিভ্যাটিবস অপশনের লেনদেন চালু করা, ওটিসি বুলেটিন বোর্ড চালু করা, ইটিএফ চালু করা, মেয়াদি মিউচ্যুয়াল ফান্ড (ওপেন অ্যান্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ড) তালিকাভুক্ত করা ইত্যাদি। এছাড়াও করপোরেট কর হার কমানোর বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে, যা বাস্তবায়িত হলে অধিক সংখ্যক ভালো শেয়ার পুঁজি বাজারে আসবে।’
তিনি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের করহার পুনর্র্নিধারণ করা সময়ের দাবি। বর্তমানে বিরাজমান ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের সঙ্গে একটি প্রতিযোগিতামূলক করহার দেশের বাণিজ্যের প্রসারে ও শিল্পায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ও ব্যবসায়ী মহলের প্রত্যাশা পূরণকল্পে ও ব্যবসা বাণিজ্যের দ্রুত প্রসারের লক্ষ্যে লিস্টেড কোম্পানির করপোরেট কর ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ২২ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি।’ এদিকে সরকারের বিধিনিষেধের মধ্যে বেশ চাঙা হয়ে উঠেছে দেশের শেয়ার বাজার। গত সপ্তাহে প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন ৬ হাজার কোটি টাকার ওপরে বেড়েছে। এতে লকডাউনের আট সপ্তাহে বাজার মূলধন বেড়েছে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গেলো সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে চার কার্যদিবসই শেয়ার বাজার ঊর্ধ্বমুখী ছিল। এতে সপ্তাহজুড়ে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। সেই সঙ্গে বেড়েছে সবকটি মূল্য সূচক। পাশাপাশি লেনদেনের গতিও বেড়েছে।
গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৮ হাজার ৯৪৭ কোটি টাকা। আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে যা ছিল ৫ লাখ ২ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ৬ হাজার ২০৪ কোটি টাকা। এর আগের সাত সপ্তাহেও বড় অঙ্কের মূলধন বাড়ে বাজারটিতে। আগের সাত সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ৪৩ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা। এ হিসাবে লকডাউনের আট সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বাড়লো ৪৯ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা। গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৬৭ দশমিক ৬১ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ১৩ শতাংশ। আগের সাত সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৭৩১ দশমিক শূন্য ৪ পয়েন্ট। টানা আট সপ্তাহের উত্থানে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক বেড়েছে ৭৯৮ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট। গত সপ্তাহজুড়ে বেড়েছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচকও। গেলো সপ্তাহে এই সূচকটি বেড়েছে ১৩ দশমিক ৮৫ পয়েন্ট। আর ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক গত সপ্তাহে বেড়েছে ৮ দশমিক ১৬ পয়েন্ট। তথ্য বলছে, গত সপ্তাহে দাম বেড়েছে ১৯২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার। দাম কমেছে ১৩০টির। আর ৪৯টির দাম অপরিবর্তিত ছিল। সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৫১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ১ হাজার ৯২০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ১৩০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। আর গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ১০ হাজার ২৫৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।