রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৯ অপরাহ্ন

আবারও বাড়ল লকডাউন

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ৬ জুন, ২০২১

করোনাকালে কর্মী ছাঁটাই করেছে এসএমই’র ৪৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠান

করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসায় চলমান বিধিনিষেধ আরও ১০ দিন বাড়িয়েছে সরকার। ৬ জুন মধ্যরাত থেকে ১৬ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়িয়ে রোববার (৬ জুন) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনাভাইরাসজনিত রোগ (কোভিড-১৯) সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আগের সব বিধিনিষেধ আরোপের সময়সীমা আগামী ৬ জুন মধ্যরাত থেকে ১৬ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত বর্ধিত করা হলো। গতকাল রোববার মধ্যরাত থেকে চলমান বিধিনিষেধের মেয়াদ শেষ হচ্ছে।
মার্চের শেষের দিকে দেশের করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়। এতে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে যায়। মার্চের শুরু থেকে প্রথমে গণপরিবহন ও অফিস চালু রেখে লকডাউন দেওয়া হয়। পরে গত ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ৭ দিনের কঠোর লকডাউন শুরু হয়। পরে ৬ দফা লকডাউন বা বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়ানো হয়। গত ২৩ মে থেকে ৩০ মে রোববার মধ্যরাত পর্যন্ত বিধিনিষেধ বাড়িয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এ সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে আন্তঃজেলা বাস, লঞ্চ এবং ট্রেনসহ সব ধরনের গণপরিবহন চলার অনুমতি দেওয়া হয়। একইসঙ্গে হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো আসন সংখ্যার অর্ধেক মানুষকে বসিয়ে সেবা দেওয়ার অনুমতি পায়। বর্তমানে সরকারি বেসরকারি স্বায়ত্বশাসিত অফিস আদালত ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। তবে বিশেষ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ সরকারের নির্বাহী আদেশে সীমিত পরিসরে খোলা রয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বিধিনিষেধ বাড়ানো বা তুলে দেওয়ার বিষয়ে সরকার চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে।
করোনাকালে কর্মী ছাঁটাই করেছে এসএমই’র ৪৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠান: মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপে উৎপাদন ও আয় কমে যাওয়ায় ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পের (এসএমই) ৪৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাঁটাই করেছে। পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠান। আংশিক কার্যক্রম চালু রেখেছে ৫১ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং ৪৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি কার্যক্রম চালিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রিজম প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ২১৬টি প্রতিষ্ঠানের ওপর চালানো এ জরিপ চালানো হয়।
গতকাল রোববার ‘ইমপ্যাক্ট অব কোভিড-১৯ অন সিএমএসএমইস অ্যান্ড আন্ডারস্ট্যান্ডিং দেয়ার রিকোভারি : এভিডেন্স ফরম বিএসসিআইসি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেটস’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সেমিনারে জরিপ প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রিজম প্রকল্পের টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট কম্পোনেন্ট এবং ইকোনমিক রিপোটার্স ফোরাম (ইআরএফ) এই সেমিনারের আয়োজন করে। এতে মূল প্রবন্ধে জরিপের তথ্য তুলে ধরেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএল) রিসার্চ ডিরেক্টর মনজুর হোসেন।
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, করোনাভাইরাসের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত ৯০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান এখনো পুরোপুরি রিকভারি করতে পারেনি বা ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তবে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতি কাটিয়ে উঠেছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
জরিপের তথ্য তুলে ধরে মনজুর হোসেন জানান, প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মীদের থেকে শ্রমিক বেশি ছাঁটাই হয়েছে। সবচেয়ে বেশি কর্মী ছাঁটাই হয়েছে মেটাল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ বা সার্ভিস সেক্টরে। ২০২০ সালের মার্চ-মে লকডাউনের সময়ে এই খাতের ২২ দশমিক ২২ শতাংশ কর্মী ছাঁটাই হয়েছে। এছাড়া ২০২০ সালের জুন-সেপ্টেম্বর সময়ে ১১ দশমিক ১১ শতাংশ এবং অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ে ১১ দশমিক ১১ শতাংশ কর্মী ছাঁটাই হয়েছে। অপরদিকে ২০২০ সালের মার্চ-মে লকডাউনের সময়ে ৬৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে মেটাল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ বা সার্ভিস সেক্টরে। এছাড়া ২০২০ সালের জুন-সেপ্টেম্বর সময়ে ৫৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ে ৫৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে।
একইভাবে অ্যাগ্রো ফুড খাতে ২০২০ সালের মার্চ-মে লকডাউনের সময়ে ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ কর্মী ও ৫০ শতাংশ শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে। ২০২০ সালের জুন-সেপ্টেম্বর এখাতে কোনো কর্মী ছাঁটাই হয়নি। তবে ৫০ শতাংশ শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে। আর অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ে ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ কর্মী ও ৩৩ দশমিক ৩৩ শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে। ফুড ইন্ডাস্ট্রিতে ২০২০ সালের মার্চ-মে সময়ে ১১ দশমিক ৩৬ শতাংশ কর্মী ও ৪৩ দশমিক ১৮ শতাংশ শ্রমিক, জুন-সেপ্টেম্বর সময়ে ৯ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ কর্মী ও ৩৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ শ্রমিক এবং অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ে ৬ দশমিক ৮২ শতাংশ কর্মী ও ২২ দশমিক ৭৩ শতাংশ শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে।
টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে ২০২০ সালের মার্চ-মে সময়ে ৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ কর্মী ও ৫৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ শ্রমিক, জুন-সেপ্টেম্বর সময়ে ৩ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ কর্মী ও ৫৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ শ্রমিক এবং অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ে ৩ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ কর্মী ও ২৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে।
পাট ও পাট সংশ্লিষ্ট ইন্ডাস্ট্রিতে ২০২০ সালের মার্চ-মে সময়ে ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ কর্মী ও ৬১ দশমিক ৫৪ শতাংশ শ্রমিক, জুন-সেপ্টেম্বর সময়ে ৪৬ দশমিক ১৫ শতাংশ শ্রমিক এবং অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ে ৩০ দশমিক ৭৭ শতাংশ শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে।
প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং খাতে ২০২০ সালের মার্চ-মে সময়ে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ কর্মী ও ৭৫ শতাংশ শ্রমিক, জুন-সেপ্টেম্বর সময়ে ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ শ্রমিক এবং অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ে ৩১ দশমিক ২৫ শতাংশ শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে। চামড়া, রাবার ও প্লাস্টিক খাতে ২০২০ সালের মার্চ-মে সময়ে ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ কর্মী ও ৬৪ দশমিক ২৯ শতাংশ শ্রমিক, জুন-সেপ্টেম্বর সময়ে ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ কর্মী ও ৪২ দশমিক ৮৬ শতাংশ শ্রমিক এবং অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ে ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ কর্মী ও ২১ দশমিক ৪৩ শতাংশ শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে।
ওষুধ ও রসায়ন খাতে ২০২০ সালের মার্চ-মে সময়ে ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ কর্মী ও ৩৫ দশমিক ২৯ শতাংশ শ্রমিক, জুন-সেপ্টেম্বর সময়ে ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ কর্মী ও ২৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ শ্রমিক এবং অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ে ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ কর্মী ও ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে।
প্রকৌশল খাতে ২০২০ সালের মার্চ-মে সময়ে ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ কর্মী ও ৩০ দশমিক ৭৭ শতাংশ শ্রমিক, জুন-সেপ্টেম্বর সময়ে ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ কর্মী ও ৩৪ দশমিক ৬২ শতাংশ শ্রমিক এবং অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ে ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ কর্মী ও ২৬ দশমিক ৯২ শতাংশ শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে।
ইআরএফ সভাপতি শারমীন রিনভীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেনজি থ্রিংক উপস্থিত ছিলেন।
প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমান, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী এবং বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন আবুল কাসেম খান।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারির ফলে বৈশিক অর্থনীতি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে এসএমই খাতে উৎপাদন ও বিপণন সবচেয়ে বেশি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ খাতের হাজার হাজার মানুষের জীবন ও জীবিকা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। সরকার অনেকগুলো প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। তার মধ্যে এসএমই খাতের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হলে, সে প্যাকেজ থেকে দেশের অনেক অঞ্চলের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তরা ঋণ পান। সে কারণে সরকার পল্লী এলাকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে গ্রামীণ এলাকার ঋণদান কার্যক্রম স¤প্রসারণে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার নতুন প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।
তিনি বলেন, করোনার প্রভাব থেকে এসএমই খাত যাতে দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে পারে, সে জন্য অংশীজনদের পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমন্বয় বাড়িয়ে প্রণোদনা প্যাকেজের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা আর আমদানিকারক দেশ থাকতে রাজি নয়। আমাদের এখন রফতানিকারক দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে হবে। দেশে এখন বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশ বিরাজ করছে। শিল্প মন্ত্রণালয় শিল্পায়নের বিকাশে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় এসএমই নীতিমালা ২০১৯ প্রণয়ন করা হয়েছে এবং যুগোপযোগী উদ্যোক্তাবান্ধন নতুন শিল্পনীতি-২০২১ প্রণয়নে কাজ চলছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com