রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০৪ অপরাহ্ন

সালাত

মুহাম্মাদ নুরুল ইসলাম:
  • আপডেট সময় সোমবার, ৭ জুন, ২০২১

অধুনা জুমার নামাজে মুসল্লিদের উপস্থিতি, সমাগম দেখে মনে হয়- জুমার নামাজই কেবল মুসলমানদের জন্য ফরজ। জুমার নামাজকে এতটা গুরুত্ব দেয় যে- মদখোর, সুদখোর, গাজাখোররা পর্যন্ত উপস্থিত হয়। মনে হয় যেন ওয়াক্তিয়া নামাজগুলো না পড়লে কাল কিয়ামতের দিনে কোনো ধরা-পাকড়াও হবে না। অনেকে জুমার নামাজ পড়ে এসে জোর আওয়াজে ঢেঁকুর তোলে। অথচ ওয়াক্তিয়া নামাজের কোনো খবর থাকে না। আবার অনেকে বেহুদা সময় ব্যয় করে, কিন্তু প্রতি ওয়াক্ত নামাজের জন্য ১০ মিনিট ব্যয় করার সময় হয় না। অনেকের নামাজের প্রতি এত অনীহা যে, দুনিয়াবি ও ব্যক্তিগত কাজ শেষ করে সামান্যটুকু সময় পেলে মসজিদে যায়। অথচ, নামাজ হলো সবার উপরে। অনেক সময় দেখা যায়- দোকানে, আড্ডাখানায় বসে গল্প জুড়ে দেয়, আড্ডা দেয়। এ দিকে মুয়াজ্জিন তার সুমধুর স্বরে আজান ফুকারে; সে দিকে তার কোনো খেয়ালই নেই। আড্ডাজুড়ে থাকে গিবত, হাসি-ঠাট্টা, বেহুদা কথোপকথন, ঠাট্টার ছলে অন্যকে অপদস্ত, লাঞ্ছিত করা ইত্যাদি। কিন্তু নামাজের জন্য তাদের সময় হয়ে ওঠে না।
অধুনা আমাদের সকালে ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার সময় হলো ১০টা। প্রত্যুষে ওঠা কেমন যেন অসভ্যতা প্রকাশ পায়। ১০টার পরে উঠলে নিজেকে সভ্য ঘরের সন্তান বলে মনে হয়। যদি ভোর ৪টায় কোনো সফরের প্রোগ্রাম হয়, এতে কত প্রস্তুতি! আগের দিন রাতে কাপড় চোপড় সব গুছানো। মোবাইলে অ্যালার্ম দিয়ে রেখেছে সাড়ে ৩টায়। মাকেও বলে দেয়, আমাকে সাড়ে ৩টায় ডেকে দিতে হবে। অথচ সফরে বের হবে ৪টায়।
অথচ এই প্রস্তুতি নেয়ার কথা ছিল নামাজের জন্য। তাদের আচার আচরণে বোঝা যায়, নামাজ গুরুত্ব দেয়ার মতো তেমন বিষয় নয়। ইচ্ছে হলে পড়লাম, না হয় ছেড়ে দিলাম। অথচ নামাজ আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য হাদিয়া, উপহারস্বরূপ। যা আল্লাহ তায়ালা রাসূল সা:-এর সম্মানার্থে উম্মতে মুহাম্মদির জন্য দিয়েছেন।
আপনাকে কোনো এক প্রিয় বন্ধু একটি মিসওয়াক হাদিয়া দিলো নবীর সুন্নত পালন করার জন্য। এখন যদি আপনি এই মিসওয়াককে আলমারিতে রেখে দেন তো হাদিয়াকারী কতটা কষ্ট পাবে? আরো সহজ করে বলি- আপনার স্ত্রী একটি জামা উপহার দিয়েছে। বলেছে, ‘আমাদের বিবাহ বার্ষিকীতে তুমি এটা পরবে।’ এখন আপনি যদি বিবাহ বার্ষিকীতে ওই জামা না পরেন এমতাবস্থায় আপনার স্ত্রী আপনার উপর কতটা আক্রোশ দেখাতে পারে?
তদ্রুপ সালাতের ক্ষেত্রেও। সালাত, সেটা তো খোদা প্রদত্ত একটি নিয়ামত, উপহার। যা আল্লাহ তায়ালা উম্মতে মুহাম্মদির জন্য দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা চান আমরা যেন তাঁর কাছে প্রতিদিন পাঁচবার নত হই। আল্লাহ তায়ালা চান আমরা নামাজের মধ্যে আল্লাহর কাছে আমাদের প্রয়োজনের কথা বলি। আমরা যেন আল্লাহর কাছে আবদার করি। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-
‘হে মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন’ (সূরা বাকারা-১৫৩)।
একজন প্রিয়তম অধীর আগ্রহে চেয়ে থাকে কখন প্রিয়তমা একটি আবদার করবে? তদ্রুপ আল্লাহ তায়ালাও চেয়ে থাকেন, বান্দা কখন এসে তাঁর দরবারে হাত দুটি তুলে বলবে, হে আল্লাহ! আমার গুনাহগুলো মাফ করে দিন!
যদি আমরা আল্লাহর দেয়া উপহারের যথোপযুক্ত কদর না করি, আল্লাহ তায়ালা কতটা রাগান্বিত হবেন? এরপরও আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ছাড় দেন। আল্লাহ তো রাহমানুর রাহিম (অতি দয়ালু)।
আমরা আল্লাহ তায়ালার এত নাফরমানি করা সত্ত্বেও আল্লাহ আমাকে আপনাকে অভাবে রাখছেন না। সুযোগ দিচ্ছেন বারবার। আপনার প্রিয় মানুষ আপনাকে কখনো কি দেবেন এত সুযোগ? অথচ আমরা প্রিয় মানুষকে খুশি রাখার কত কিছুর আয়োজন করি! আর আল্লাহর রেজামন্দির প্রতি অনীহা!
রাসূলে আকরাম সা: আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের সুবাদে উপঢৌকন হিসেবে ৫০ ওয়াক্ত নামাজ দেন। উপঢৌকন নিয়ে আসতেই দেখা হয় মূসা সা:-এর সাথে। কথোপকথন ও পরামর্শক্রমে আবার ফিরে যান আল্লাহর দরবারে। কমিয়ে দেয়া হয় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। এভাবে ৯ বার হয় এবং পাঁচ ওয়াক্ত করে কমিয়ে দেয়া হয়। আর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ বাকি থাকে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে, তাকে ৫০ ওয়াক্ত নামাজের সওয়াব দেবেন’ (সহিহ বুখারি-৩০০)।
নামাজ পড়লে মন প্রফুল্ল থাকে। আর মন প্রফুল্ল থাকলে কাজে মন বসে। নামাজ হলো আত্মার খোরাক। যদি কখনো শরীর ও আত্মাকে পৃথক করা যেত, তাহলে মানুষ শঙ্কিত থাকত। আত্মাকে দেখা মাত্রই মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত হতো। কারণ, শরীর থাকত ২০ বছরের যুবকের মতো সুস্থসবল। আত্মা থাকত ৬০ বছরের কুঁজো বুড়োর মতো অতি দুর্বল। নিজ পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা অসম্ভব হয়ে যেত।
আমরা শরীরকে চাহিদার অধিক খাদ্য ভক্ষণ করাচ্ছি। কিন্তু, আত্মার ব্যাপারে উদাসীন। আমরা ক্ষুধার্ত অনুভব করতেই ক্ষুধা নিবারণে ছুটে চলি। যার নিমিত্তে শরীর থাকে সুস্থ সবল। কিন্তু, আত্মার ক্ষুধা নিবারণে আমরা বেখেয়াল।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com