মোংলা সমুদ্র বন্দরের পশুর চ্যানেলে ড্রেজিং প্রকল্পের বালু ডাম্পিং’র ইস্যুতে ত্রিমুখী অবস্থানে বন্দর, চিনা কোম্পানী ও গ্রামবাসী। রাতের অন্ধকারে বালু ভরাটের নামে সরকারী রেকডিও খাল ও কয়েকশ একর মৎস্য চিংড়ী ঘের ভরাট করার অভিযোগ উঠেছে এ চিনা কোম্পানীর বিরুদ্ধে। সরকারী খাল আর কৃষি জমি ও মৎস্য ঘের ভরাট করায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। তারা বলছেন-মৎস্য ঘের, ফসলি জমি ও জলাভূমির শ্রেনী বিন্যাশে হুমকির মুখে পড়বে জীববৈচিত্র্যসহ স্থানীয়দের জীবন-জীবিকা। তাদের দাবী-বন্দর কর্তৃপক্ষ ও চীনা কোম্পানি পূর্ব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকারী খাল, ফসলি জমি ও মৎস্য ঘেরে বালু ডাম্পিংয়ের কারনে পানি বন্ধী ও ক্ষতির মুখে তিন গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্র জানা যায়, মোংলা বন্দরে দেশী-বিদেশী বানিজ্যিক জাহাজ আগামন-নির্গমনে বড় বাধা হচ্ছে চ্যানেলে ডুবো চর। আর এ ডুবে চরে আটকাপড়ে সিডিউল মোতাবেক বিদেশী জাহাজ আর্ন্তজাতীক বন্দরে পৌছাতে না পাড়ায় পন্য খালাস-বোঝাইয়ে বাঁধা সৃষ্টি হয়। ফলে অনেক জাহাজ মালিক মোংলা বন্দরে বানিজ্যিক জাহাজ পাঠাতে অনিহা প্রকাশ করে। যার ফলে ৯০ দশকে এ বন্দরে জাহাজ আগামনের আসংঙ্কাহারে কমে যায়। তাই মোংলা সমুদ্র বন্দরকে সচল করতে বিভিন্ন উন্নয়ন মুলক প্রকল্প গ্রহন করে বর্তমান সরকার। তার মধ্যে প্রথম পর্যায় ৭শ কোটি টাকা ব্যায় আউটার বার (বঙ্গোপসাগর ও হিরোন পয়েন্ট মোহনা) ড্রেজিংয়ের কাজ সম্পন্ন করে। বন্দরের গতিশীল ও উন্নয়নের জন্য এবার ৭শ’ ৯৪ কোটি টাকা ব্যয়ে মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের ইনার বার ড্রেজিং প্রকল্প গ্রহন করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। আর ড্রেজিং প্রকল্পের কাজের জন্য দুটি চীনা কোম্পানিকে নির্ধারন করা হয়। গত ১৩ মার্চ নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এ কাজের শুভ উদ্বোধন করেন। কিন্ত এ ড্রেজিংয়ের বালু ডাম্পিং করতে (ভরাটের জন্য) তাদের প্রয়োজন ১৫শ একর জমির। এখানে পশুর নদীর তীরবর্তি ৫শ’ একর সরকারি খাস জমি চিহিৃত করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। যেখানে বালু ডাম্পিং করতে কোন বাঁধা আসবে না বলে জানায় বন্দরের হারবার বিভাগ। তবে শুধু ৫শ একর জমিতে হবে না বলে জয়মনি এলাকায় স্থানীয়দের কাছ থেকে আরো এক হাজার একর জমির প্রয়োজন, যা মালিকানা ফসলী জমি। তাই নদী খননের বালু ডাম্পিং করার জন্য ১ হাজার একর ফসলি জমি ও মৎস্য ঘের এলাকা ক্ষতিপূরন দিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করে মোংলা বন্দর। এ জমির ৩শ একর রয়েছে পশুর চ্যানেলের পশ্চিম পাশে অর্থাৎ খুলনা জেলার বাজুয়া এলাকায়। সেখানে ফসলি জমি হুকুম দখল বা ১০ বছরের ক্ষতিপুরন দিয়ে বালু ভরাটের জন্য জমি দখলে গেলে এলাকাবাসীর বাধার মুখে তা ওই অবস্থাতেই রয়েছে বলে জানিয়েছে ওখানকার জমির মালিক অনেকেই। এদিকে, গত এপ্রিলে এ কাজের শুরুতে মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের ফসলি জমি ও মৎস্য ঘেরের ৭শ একর জমি হুকুম দখল বা ১০ বছরের ক্ষতিপুরন দেয়ার আশ্বাসে পশুর নদী ড্রেজিংয়ের বালু ভরাটের জন্য ডাইক (ভেরিকেট) নির্মান কাজ শুরু করে ওই দুই চিনা কোম্পানী। ফসলি-মৎস্য চাষের জমিতে নদী ড্রেজিংয়ের বালু ডাম্পংিয়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় জমির মালিক ও গ্রামবাসী। পরে গ্রামবাসীরা এ বিষয় আপত্তি জানালে-১০ বছরের ক্ষতিপূরন দেয়ার আশ্বাস দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ, কিন্ত আজও এর কোন শুরাহা হয়নি। যাদের ফসলী জমি বা মৎস্য ঘেরের ক্ষতিপুরন না দিয়ে চিনা কোম্পানী তাদের ড্রেজিংয়ের বালু ভরাট করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ভূক্তভোগীরা। এরই মধ্যে চিনা কোম্পানীর দেশীয় কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তারা রাতের অন্ধকারে গত তিন দিন যাবত ভেরীকেট ছুটিয়ে দিয়ে শড়কীর খাল নামে একটি সরকারী খালে প্রায় ৩ কিলোমিটার ও পার্শবর্তী চিংড়ী ঘের বালু ভরাট করে পানিতে তলীয়ে দিয়েছে। বালু ভরাটে সরকারী ওই খাল বন্ধ হওয়ায় পানি বন্ধী হয়ে পরেছে তিন গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। যাতে লবন পানি ঢুকে মারা গেছে ঘেরের মাছ, নষ্ট হয়েছে পুকুরের মিষ্টি পানি, ব্রিজ, মানুষের চলাচলের রাস্তা ও বিদ্যুতের পুল। স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ লুৎফর রহমান জানায়, নদী খনন করতে গিয়ে তো খাল ভরাট করতে বলেনি সরকার। ফসলী জমিতে গ্রামবাসী চাষাবাদের মাধ্যমে ধান উৎপাদন করেন, সেই একই জমিতে মৎস চাষ করে পরিবার পরিজন নিয়ে সংসার চালাতে হয় তাদের। তাই ধান উৎপাদন ও মাছের চাষ বন্ধ হলে বেকারত্ব সহ পথে বসতে হবে অসংখ্য পরিবারের। এ ছাড়া বালু ভরাটের কারেন আগামী ৫০ বছরের জন্য চরম দূরাবস্থা এবং আর্থিক ক্ষতির সম্মুক্ষিন হতে হবে স্থানীয় বাসিন্দাদের। এছাড়া, সরকারী খাল ভরাট হয়ে গেছে,এ খালের মাছের উপর অনেক জেলে পরিবারের সংসার ও ছেলে মেয়ের লেখা-পড়ার খরচ চলে। সরকারের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কয়েক হাজার লোক পথে বসতে হবে। নদী ড্রেজিংয়ের বালুতে সরকারী খাল ভরাটের বিষয় মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রজেক্ট ডাইরেক্টর প্রকৌশলী মোঃ শওকাত আলী জানান, ওই এলাকার মোট জমির মধ্যে মাত্র ১৩০ একর জমি হুকুম দখল করা হয়েছে। আরো ১২০ একর জমি হুকুম দখলের প্রক্রিয়া চলছে এবং ক্ষতিপুরন দেয়ারও প্রক্রিয়া চলমান। তবে খননকৃত পলি রাখার জন্য যদি সরকারী খাল বা কোন মালিকানা জমি নষ্ট হয়ে থাকে তা হলে খালের পানি অববাহিকা চলমান রাখতে সকল ব্যাবস্থা নেয়া হবে এবং ফসলী জমির ক্ষতিপুরন দেয়া হবে বলেও জানায় বন্দরের এ কর্মকর্তা। এ বিষয় মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমলেশ মজুমদার বলেন, ড্রেজিং প্রকল্পের বালু ডাম্পিং করার ফলে খাল ভরাট হয়ে যদি মানুষ পানি বন্ধী হয়ে পড়ে বা সরকারী কোন স্থাপনা নষ্ট হয় তবে তদন্ত করে দ্রুত ব্যাবস্থা নেয়ার আশ্বাস নির্বাহী কর্মকর্তার।