আমি নারী; স্বাধীনতা চাই, তবে আমি নারীবাদী নই। ‘নারী স্বাধীনতা’ শব্দটা উচ্চারণ করলেই গায়ে লেগে যায় নারীবাদী নামক পদবির তকমা। কিন্তু কেউ জানতে চায় না নারী স্বাধীনতা বলতে কী বুঝি। আমি তো চাইনি সেই স্বাধীনতা, যেই স্বাধীনতায় ছেলে-মেয়েদের অবাদ মেলামেশা হয়। চেয়েছিলাম শুধু একটু বাকস্বাধীনতা। নিজের ব্যক্তিগত ব্যাপারে কিছু হওয়ার আগে একটুখানি মতামত প্রকাশ করতে। নারী বলে কেন সেই স্বাধীনতা হরণ করা হলো? হজরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রা: থেকে বর্ণিতÑ রাসূল সা: বলেছেন, ‘মেয়ে তার ব্যক্তিগত বিষয়ে অভিভাবকের চেয়ে অধিক হকদার।’ (মুয়াত্তা মালেক, মুসলিম, মুসনাদে আহমদ, আবু দাউদ, তিরমিজি)
শিক্ষা জীবনেও নারী কী বিষয়ে পড়বে তা ঠিক করে দেন অভিভাবকরা। যে পড়বে সে কী নিয়ে পড়তে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে তা জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন বোধটুকুও করেন না।
আল্লøাহ তায়ালা বলেন, ‘আল্লøাহ কোনো সত্তাকে তার সামর্থ্যরে অধিক কষ্ট দেন না’ (সূরা বাকারা, আয়াত-২৮৬)।
আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কন্যাসন্তানদের দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত করার পাশাপাশি জেনারেল শিক্ষায় শিক্ষিত হতে দেয়া হয় না। কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয় ইসলামকে। অথচ ইসলামই কত সুন্দর করে শিখিয়েছে প্রয়োজন অনুপাতে শিক্ষা অর্জন করার জন্য। ইসলামকে যতটা কঠিন করে উপস্থাপন করা হয় তাদের সামনে ঠিক তার চেয়েও কিন্তু সহজ ইসলাম।
ইলম শিক্ষা করা (জ্ঞানার্জন করা) প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর প্রতি ফরজ (কর্তব্য)’ (উম্মুস সহিহাইন-ইবনে মাজাহ শরিফ)। আজকাল দেখা যায় দ্বীনি শিক্ষাতেও অভিভাবকরা কমতি রেখে দেন। ভুল পথে পরিচালিত করেন। পরকালে মুক্তি লাভের পথ না দেখিয়ে, দেখানো হয় চিরস্থায়ী কারাবাসের পথ।
‘হে আমাদের রব! আমরা আমাদের অভিভাবক ও বড়দের অনুসরণ করেছি, তারা আমাদের বিপথগামী করেছে। হে আমাদের প্রভু! আপনি তাদের দ্বিগুণ শাস্তি দিন এবং মহা অভিশাপ করুন’ (সূরা আহজাব, আয়াত : ৬৭-৬৮)।
আমি তো চাইনি সুশীল সমাজের সেই নারীবাদীদের স্বাধীনতা; যারা নিজের বাড়িতে কাজের মেয়েকে অত্যাচার করে। কাজ শেষ করার হুমকি দিয়ে বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে রাস্তায় নেমে ‘নারীমুক্তি গণজাগরণ’ নামক রেলিতে অংশগ্রহণ করার জন্য। শুরু হয় বেহায়াপানায় মত্ত হওয়া।
চেয়ে ছিলাম তো ছেলেসন্তানের মতো মাথা উঁচু করে খোলা আকাশের নিচে মুক্ত বাতাসে প্রাণ খুলে শ্বাস নিতে।
আমি তো চাইনি সেই স্বাধীনতা যে স্বাধীনতায় সন্তান মা-বাবার সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে বেহায়াদের মতো নাচানাচি করছে।
চেয়েছিলাম তো নিজেকে পর্দায় আবরণ করে জান্নাতি সাজে সেজে মা-বাবার সম্মান বৃদ্ধি করতে। স্বাধীনভাবে ইসলামকে অনুসরণ করতে। আর তারা কী করল?
নারী বলে ১২১টি শিকল পরিয়ে দিলো!
আমি তো চাইনি জাহেলিয়াতের মেয়েদের মতো স্বাধীনতা, আমি তো চেয়েছিলাম জান্নাতের সবুজ পাখি হওয়ার স্বাধীনতা। ১৫ বছর পার হতে না হতেই শুরু হয়ে যায় পাড়া প্রতিবেশীদের কটূক্তি। মেয়ের তো বয়স হয়েছে বিয়েশাদি দেবে না? সারা জীবন কি নিজেদের কাছেই রেখে দেবে নাকি? পরে এই মেয়েকে কে বিয়ে করবে? ইত্যাদি ইত্যাদি। আশপাশে থেকেও ঘটক চাচারাও চলে আসে ৩৫+ বছরের প্রাবাসী বা কোনো সরকারি কর্মরত পাত্রের সম্বন্ধ নিয়ে। এরপর মেয়ে দেখার জন্য চলে আসে পাত্রপক্ষের দল। মেয়ের বিয়েতে সম্মতি আছে কি না তা জানার প্রয়োজন বোধটুকুও না করে পাত্রপক্ষের কাছে বাবা বিয়ের কথা দিয়ে দেন এরপর সব ঠিকঠাক বিয়ের দিন আসন্ন এমন সময় মা-বাবা এসে জিজ্ঞেস করে মেয়েকে এই বিয়েতে কি রাজি?
তখন মেয়ের হ্যাঁ বা না বলাতে কিচ্ছু যায় আসে না। হজরত আবদুল্লøাহ বিন আব্বাস রা: থেকে বর্ণিতÑ রাসূলুল্লøাহ সা: বলেছেন, ‘মেয়ে তার ব্যক্তিগত বিষয়ে অভিভাবকের চেয়ে অধিক হকদার।’ (মুয়াত্তা মালেক, মুসলিম, মুসনাদে আহমদ, আবু দাউদ, তিরমিজি) হজরত সালামা বিনতে আবদুুর রহমান রা: থেকে বর্ণিতÑ তিনি বলেন, একদিন এক মেয়ে রাসূল সা:-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা, কতইনা উত্তম পিতা। আমার চাচাত ভাই আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলো আর তিনি তাকে ফিরিয়ে দিলেন। আর এমন এক ছেলের সাথে (আমাকে) বিয়ে দিতে চাইছেন যাকে আমি অপছন্দ করি।
এ ব্যাপারে রাসূল সা: তার পিতাকে জিজ্ঞেস করলে (মেয়েটির) পিতা বলে, মেয়েটি সত্যই বলেছে। আমি তাকে এমন পাত্রের সাথে বিয়ে দিচ্ছি যার পরিবার ভালো নয়। তখন রাসূল সা: বললেন, ‘এ বিয়ে হবে না, (মেয়েটিকে বললেন) তুমি যাও, যাকে ইচ্ছে বিয়ে করে নাও’ (মুসান্নাফে আবদুুর রাজ্জাক, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা)।
মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে পরিবার তাকে বিয়ে দিয়ে পাঠিয়ে দেয় শ্বশুরবাড়িতে। কিন্তু তারা এটুকু চিন্তা করে না মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে মেয়েকে বিয়ে দিলে সে তার স্বামী, শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে কিভাবে আপন করে নেবে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় মেনে নিতে না পেরে শ্বশুরবাড়ির সবার সাথে মেয়েটি নিন্দনীয় আচরণ করে। এই আচরণের হাত থেকে বেচারা স্বামীও রেহাই পায় না। এই নিন্দনীয় আচরণের ফল যে কতটা ভয়াবহ তা যদি বাবা-মা বুঝত তাহলে টাকা পয়সার সুখের বিনিময়ে মেয়েকে জাহান্নামি করত না।
হজরত উম্মে সালমা রা: বর্ণনা করেন, রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, ‘যে মহিলা এমন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে যে, তার স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্ট, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’ (তিরমিজি শরিফ, হাদিস নং-১১৬১)।