শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩:০৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
বিশ্বমানের টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসতে হবে : রাষ্ট্রপতি রাসূল (সা.)-এর সীরাত থেকে শিক্ষা নিয়ে দৃঢ় শপথবদ্ধ হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে—ড. রেজাউল করিম চৌদ্দগ্রামে বাস খাদে পড়ে নিহত ৫, আহত ১৫ চাহিদার চেয়ে ২৩ লাখ কোরবানির পশু বেশি আছে : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী রাজনীতিবিদেরা অর্থনীতিবিদদের হুকুমের আজ্ঞাবহ হিসেবে দেখতে চান: ফরাসউদ্দিন নতজানু বলেই জনগণের স্বার্থে যে স্ট্যান্ড নেয়া দরকার সেটিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার মালয়েশিয়ার হুমকি : হামাস নেতাদের সাথে আনোয়ারের ছবি ফেরাল ফেসবুক হামাসের অভিযানে ১২ ইসরাইলি সেনা নিহত আটকে গেলো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের অর্থ ছাড় গাজানীতির প্রতিবাদে বাইডেন প্রশাসনের ইহুদি কর্মকর্তার লিলির পদত্যাগ

বন্ধুত্ব ও শত্রুতার মানদণ্ড

মুফতি আবুল কাসেম :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৫ জুন, ২০২১

যারা ঈমানের নিয়ামত ও ইসলামের সুশীতল ছায়া থেকে বঞ্চিত তাদের কাছে বর্ণ, বংশ, ভাষা, ভূখণ্ড সংস্কৃতি, মতবাদ রাজনৈতিক দল ও দর্শন ইত্যাদি বিভিন্ন মানদ-ের ভিত্তিতে জাতীয়তা নির্ধারিত হয়। আর এ জাতীয়তাই তাদের কাছে বন্ধুত্ব ও সম্পর্কচ্ছেদ এবং পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতার মানদ- হয়ে থাকে। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে এটি সুস্পষ্ট গর্হিত কাজ। ইসলামী শরিয়ায় বর্ণ, বংশ, ভাষা ও ভূখ- নির্বিশেষে সব মুমিন এক জাতি।
ইসলামে বন্ধুত্ব পোষণ-বর্জনের মানদ- ঈমান আর পরস্পর সহযোগিতার মানদ- ভালো কাজ ও খোদাভীরুতা। মুমিন হিসেবে আল্লাহর সব মুমিন বান্দার সাথে আমার থাকবে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা। তা সে যে বর্ণের, যে ভাষার, যে বংশের বা যে দেশেরই হোক না কেন। মুমিনের সাথে আমার এই বন্ধুত্ব ঈমানের কারণে এবং আল্লাহর জন্য, সা¤প্রদায়িক চেতনা থেকে নয়। এ কারণে আল্লাহর নাফরমানির ক্ষেত্রে না তার সঙ্গ দেবো, না তার সাহায্য করব। সে যদি কোনো অমুসলিমের ওপরও জুলুম করে তার সহযোগিতা করব না; বরং সাধ্যমতো তাকে জুলুম থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করব।
আর যে অমুসলিম তার সাথে আমার আল্লাহর জন্যই বিদ্বেষ। কারণ সে আমার, তার ও গোটা জগতের রব আল্লাহ তায়ালার দুশমন। আর যেহেতু এই শত্রুতা শুধু আল্লাহর জন্য, কোনো সা¤প্রদায়িক চেতনা থেকে নয়, এ কারণে আমি তার সাথে কখনো বেইনসাফি করব না; বরং যদি দেখি সে মজলুম হচ্ছে আর তাকে জুলুম থেকে মুক্ত করার সামর্থ্য আমার আছে তা হলে জুলুম থেকে মুক্ত করতেও আমি কার্পণ্য করব না। দু’জন লোকের মাঝে হয়তো ভাষা, ভূখ-, বর্ণ, গোত্র, আত্মীয়তা ও রাজনৈতিক পরিচয় সব বিষয়ে অভিন্নতা আছে। কিন্তু এদের একজন মুসলিম অন্যজন অমুসলিম, তো এসব অভিন্নতার কারণে মুসলিমের ওপর অমুসলিমের যেসব হক সাব্যস্ত হয়, তা ওই মুসলিমকে অবশ্যই আদায় করতে হবে; কিন্তু এদের মাঝে বন্ধুত্বের সম্পর্ক হতে পারে না; বরং মুসলিম তাকে আল্লাহর জন্য দুশমনই মনে করবে, যে পর্যন্ত না সে ঈমান আনে ও ইসলাম গ্রহণ করে। ইরশাদ হচ্ছে, ‘তোমাদের জন্য ইবরাহিম ও তাঁর অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। যখন তাঁরা তাদের স¤প্র্র্রদায়কে বলেছিলেন, তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদত করো তার সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদেরকে মানি না। তোমাদের ও আমাদের মধ্যে সৃষ্টি হলো শত্রুতা ও বিদ্বেষ চিরকালের জন্য; যদি না তোমরা এক আল্লাহতে ঈমান আনো।’ (সূরা মুমতাহিনা-৪) মোটকথাÑ বন্ধুত্ব ও শত্রুতার মানদ- দ্বীন ইসলামের অতি গুরুত্বপূর্ণ নীতি। ইসলামে মানদ- হচ্ছে ঈমান আর শত্রুতার ভিত্তি শিরক ও কুফর।
যে কেউ মুসলিম উম্মাহর অন্তর্ভুক্ত সে শুধু ঈমান ও ইসলামের কারণেই, অন্য কোনো বৈশিষ্ট্য ছাড়াই বন্ধুত্ব স্থাপনের হকদার এবং শরিয়তসম্মত সব অধিকার তার প্রাপ্য। আর যে শিরক বা অন্য কোনো ধরনের কুফর অবলম্বন করেছে তার সাথে বন্ধুত্ব হারাম; বরং তা কুফরের চিহ্ন। অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই যে, বন্ধুত্ব ও বর্জনের এই নীতিতে অন্যদের কথা তো বলাবাহুল্য, স্বয়ং মা-বাবাও ব্যতিক্রম নয়। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আমি তো মানুষকে তার মা-বাবার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। মা সন্তানকে কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে গর্ভে ধারণ করে এবং তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে। সুতরাং আমার প্রতি ও তোমার মা-বাবার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। প্রত্যাবর্তন তো আমারই কাছে। তোমার মা-বাবা যদি তোমাকে পীড়াপীড়ি করে আমার সমকক্ষ দাঁড় করাতে, যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তুমি তাদের কথা মেনো না। তবে পৃথিবীতে তাদের সাথে বসবাস করবে সদভাবে এবং যে বিশুদ্ধচিত্তে আমার অভিমুখী হয়েছে তার পথ অবলম্বন করো। অতঃপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন আমারই কাছে এবং তোমরা যা করতে সে বিষয়ে আমি তোমাদের অবহিত করব।’ (সূরা লোকমান : ১৪-১৫) সাধারণ মুমিন তো দূরের কথা, কোনো উঁচু মর্যাদাসম্পন্ন নবী ও মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারে না। ইরশাদ হচ্ছেÑ ‘আত্মীয়স্বজন হলেও মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা নবী এবং মুমিনদের জন্য সঙ্গত নয়, যখন এটি সুস্পষ্ট হয়ে গেছে যে, নিশ্চয় এরা জাহান্নামি।’ (সূরা তাওবা-১১৩)। অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের আপনজন ছাড়া অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা তোমাদের ক্ষতি করতে ত্রুটি করবে না; যা তোমাদেরকে বিপন্ন করে তা-ই তারা কামনা করে। তাদের মুখে বিদ্বেষ প্রকাশ পায় এবং তাদের হৃদয় যা গোপন রাখে তা আরো গুরুতর। তোমাদের জন্য নিদর্শনগুলো বিশদভাবে বিবৃতি করেছি, যদি তোমরা অনুধাবন করো।’ (সূরা আল ইমরান-১১৮)
এখানে কিছু অবুঝ মুসলমানের ভুল ধারণাও সংশোধন করা হয়েছে, যারা সামাজিক সৌজন্যের নামে ধর্মীয় ক্ষেত্রে চরম শিথিলতার শিকার হয় এবং বলে, তারা অমুসলিম হলেও তো আমাদের ভাই বা বন্ধু। নিঃসন্দেহে এটি চরম নির্বুদ্ধিতা। কেউ যদি বুঝে-শুনে এমন কথা উচ্চারণ তা হলে এটিই তার মুনাফিক হওয়ার স্পষ্ট নিদর্শন। আফসোস! আমাদের তরফ থেকে তো এই নির্বুদ্ধিতা যে, এদের প্রতি প্রীতি ও ভালোবাসা পোষণ করতে থাকব অথচ তারা তাদের ভ্রান্ত ধর্ম বা মতবাদে এতটাই কট্টর যে, আমাদের প্রতি ভালোবাসা তো দূরের কথা, আমাদেরকে তারা হীনতম শত্রু মনে করে এবং আমাদেরকে যন্ত্রণা দেয়ার ক্ষেত্রে দেশে দেশে আমাদের ভাইবোনদের ব্যাপক হত্যা-নির্যাতনের ক্ষেত্রে কোনো অপচেষ্টাই বাদ রাখে না।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের বোঝার ও আমল করার তাওফিক দান করুন। লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া হামিদিয়া বটগ্রাম, সুয়াগাজী, সদর দক্ষিণ, কুমিল্লা




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com