রক্তদান মহৎ একটি উদ্যোগ। অন্যকে রক্ত দেওয়ার মাধ্যমে যেমন তার জীবন বাঁচানো যায়, ঠিক তেমনই রক্তদান করলে নিজের শরীরেরও উপকার হয়। অনেকেই ভেবে থাকেন, রক্তদান করলে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যায় ভুগতে হবে। ধারণাটি ঠিক নয়। কারণ রক্তদানের অনেক উপকারিতা আছে। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ও নিঃস্বার্থ উপহার হলো রক্তদান। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে বছরে ৮-৯ লাখ ব্যাগ রক্তের চাহিদা থাকলেও রক্ত সংগ্রহ হয় ৬-৬.৫ লাখ ব্যাগ। ঘাটতি থাকে তিন লাখ ব্যাগের বেশি।
এ ছাড়া সংগ্রহকৃত রক্তের মাত্র ৩০ শতাংশ আসে স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের থেকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এক ব্যাগ রক্ত দিতে সময় লাগে মাত্র ১০-১২ মিনিট। এই অল্প সময়ে চাইলেই একজনের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব। করা রক্ত দিতে পারবেন? ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সের মধ্যে শারীরিকভাবে সুস্থ নারী ও পুরুষ রক্ত দিতে সক্ষম। এক্ষেত্রে পুরুষের ওজন থাকতে হবে অন্তত ৪৮ কেজি এবং নারীর অন্তত ৪৫ কেজি। রক্তদাতাকে অবশ্যই ভাইরাসজনিত রোগ, শ্বাসযন্ত্রের রোগ এবং চর্মরোগ মুক্ত থাকতে হবে। সাধারণত ৯০ দিন পর পর, অর্থাৎ তিন মাস পর পর রক্ত দেওয়া যায়।
রক্ত দেওয়ার পর যা হয়: রক্ত দেওয়ার পর কিছুটা মাথা ঘোরাতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ সময় হাঁটাহাঁটি না করে অন্তত ১-২ ঘণ্টা বিশ্রাম নেওয়া উচিত। রক্তদাতা যদি ঘামতে থাকেন এবং অস্থির হন, তবে তাকে স্যালাইন খাওয়াতে হয়। সাধারণত প্রাপ্ত বয়স্ক সুস্থ মানুষ প্রতিবার ৪৫০ মিলিলিটার রক্ত দেওয়া হয়। রক্ত দেওয়ার পর লোহিত রক্তকণিকার মাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যেতে অন্তত এক থেকে দেড় মাস সময় লাগতে পারে। পাশাপাশি রক্ত বাড়ে এমন খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
নিয়মিত রক্তদানের মাধ্যমে শরীর যেভাবে উকৃত হয়- >> নিয়মিত রক্তদান করলে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে। >> বছরে তিনবার রক্ত দিলে শরীরে নতুন লোহিত কণিকা তৈরির হার বেড়ে যায়। এতে অস্থিমজ্জা সক্রিয় থাকে। দ্রুত রক্তস্বল্পতা পূরণ হয়। >> রক্তে কোলেস্টরেলের মাত্রা কমে যায়। এর ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। ফলে হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে যায়। >> শরীরে হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, জন্ডিস, ম্যালেরিয়া, সিফিলিস, এইচআইভি বা এইডসের মতো বড় রোগ সম্পর্কে জানা যায়। >> রক্তদাতার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। সূত্র: বিবিসি