বর্তমান সময়ে ড্রাগন ফল চাষ অনেক সৌখিন মানুষের শখ ও পেশায় পরিণত হয়েছে। বিদেশি এ ফল চাষে আগ্রহ বাড়ছে প্রতিনিয়ত। নরসিংদির বেলাবতেও বিদেশি ড্রাগন ফল চাষ করে সফলতা পেয়েছেন মোঃ জাহাঙ্গীর আলম। গতানুগতিক ফুল ও ফল চাষের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসে নতুন নতুন জাতের এ ফল চাষে চাষে ইতোমধ্যে সফল উদ্যোক্তা ও সৃজনশীল কৃষক হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন উপজেলার বিন্নাবাইদের মোঃ জাহাঙ্গীর আলম। ২০১৬ সালে তিনি পাটুলী ইউনিয়নের ভাবলা গ্রামে মাত্র ১৫ শতাংশ জায়গার উপরে ৫০ টি ড্রাগন চারা রোপনের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করেন। মাত্র ১ বছরেই তিনি তার বাগানের ৪১ টি গাছে ফুল দেখতে পান এবং এ বছরই ফল পান। ফলগুলো ৪৫০-৫০০ টাকা দরে বিক্রি করেন। এরপর তিনি আরও বেশি জমিতে ফল চাষ করেন এবং বর্তমানে প্রায় ৫০০ টি ড্রাগন ফল গাছ রয়েছে তার ৬৫ শতক জায়গার উপরে। লাভজনক হওয়ায় ড্রাগন চাষ সম্প্রসারণ করেছেন। এখন ছড়িয়ে দিতে চান দেশব্যাপী। চাষি জাহাঙ্গীর আলম ক্রমাগত নতুন নতুন চাষে নিজের ভাগ্যের পরিবর্তনের পাশাপাশি তিনি কৃষকদের পথিকৃত হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।ড্রাগন চাষি ও সফল এ উদ্যোক্তা জানান, নানা কারণে সংসার চালাতে খুব হিমশিম খাচ্ছিলাম এক সময়। তারপর টেলিভিশনের প্রতিবেদন ও বন্ধুদের মাধ্যমে অবগত হয়ে ২০১৬ সালে প্রথমে পরীক্ষামূলক ড্রাগন চাষ করি। খরচ কম ও ভালো উৎপাদনে যথেষ্ট লাভবান হই। তাই আবারও আরও অধিক জমিতে এ ফল চাষ করি। বর্তমানে আমি অনেক সচ্ছল। ড্রাগনের উপর বিভিন্ন গবেষণা ও নতুন নতুন উদ্ভাবন গুলো লক্ষ্য করি এবং প্রয়োজনে নতুন চারা সংগ্রহ করি। আমার উৎপাদিত চারা কিনে মানুষ এখন বিভিন্ন এলাকায় এ ফলের বাগান করছে। এ ফল চাষে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয় খুবই কম। সাধারণত গোবর ও মুরগির বিষ্ঠা প্রয়োগ করা হয়। পাকা ফল ফ্রিজিং বাদেই ১৫ দিন ভালো থাকে। বর্তমানে স্থানীয় বাজার, পাশ্ববর্তী উপজেলা, জেলা থেকে ফল ও চারা নিতে আসেন মানুষ। ঢাকায় ড্রাগন ফলের চাহিদা বেশি। জানা যায়, বছরে ৫ থেকে ৬ বার একটি ড্রাগন গাছ ফল দেয়। জাহাঙ্গীর আলমের নিকট থেকে চারা নিয়ে উপজেলার টঙ্গীরটেক, হাড়িসাংগান, পোড়াদিয়া, বিন্নাবাইদ, উজিলাবতে আরো কয়েকটি ড্রাগন বাগান গড়ে উঠেছে। জাহাঙ্গীর আলম জানান এ ফলের প্রতি মানুষের আগ্রহও প্রবল। তবে আধুনিক পদ্ধতির এ ফল চাষে সরকারের চাষীদের পাশে থেকে ঋণ, প্রণোদনা ও সার্বিক সহযোগিতা করা প্রয়োজন। বেলাব উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজিম উর রউফ খান বলেন, বাংলাদেশে এ ফলের চাষ এখনো ব্যাপকভাবে এ ফলের চাষ শুরু হয়নি। উপজেলায় জাহাঙ্গীর আলমসহ বেশ কয়েকজন চাষি ক্যাকটাস প্রজাতির এ ফলের চাষ শুরু করেছেন। এই ফলটি লাল, হলুদ, গোলাপিসহ বিভিন্ন রঙের হয়। রঙের কারণে অধিক পুষ্টিগুণসম্পন্ন এ ফল চোখকে সুস্থ রাখে, শরীরের চর্বি কমায়, রক্তের কোলেস্টেরল কমায়, উচ্চ রক্তচাপ কমানোসহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে। এ ফলের গুণ অনেক। তাই আরও অধিক এ ফল উৎপাদনে আমার শতভাগ সহযোগিতা থাকবে। তিনি আরও জানান, ঢাকায় এ ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। স্থানীয় বাজারেও এ ফল বিক্রি শুরু হয়েছে। চাষিদের হটিকালচারের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ এবং ছাদ বাগানের বিষয়ে উৎসাহিত করা হয়। এ উপজেলায় সম্ভাবনাময় এ ফলের অধিক চাষে ব্যাপক ক্যাম্পেইন করব শীঘ্রই। বর্তমানে জাহাঙ্গীরের এ ড্রাগন বাগান শুধু আয়ের উৎস নয়, উৎসুক দর্শনার্থীদের আবেগ প্রশমনের স্থানও এটি। প্রতিদিন বিকেলে বিভিন্ন এলাকার মানুষ ড্রাগন বাগান দেখতে দূরদূরান্ত থেকে এখানে আসে।