রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫১ পূর্বাহ্ন

কুষ্টিয়ার আদালতে মামলা করেছে গণপূর্ত বিভাগ তারপরও গাছ কেটে ভবন নির্মাণের পাঁয়তারা করছে সড়ক বিভাগ

আব্দুল মান্নান কুষ্টিয়া :
  • আপডেট সময় রবিবার, ২০ জুন, ২০২১

কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাসে সড়ক বিভাগের ফাঁকা জমিতে প্রস্তাবিত নতুন সড়ক ভবন সাইন বোর্ড ও নির্মানের প্রস্তাবনা থাকা সত্ত্বেও সড়ক ও জনপথ বিভাগ পরিবেশ ভারসাম্যের উপর কুঠারাঘাত হেনে বেঁচে থাকার মূল প্রাণশক্তি অক্সিজেন নামের ৩০ বছরের গাছগুলি কেটে শহরের সাদ্দাম বাজার মোড়ে চতুর্থ তলা ভবন নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের সম্মুখে প্রায় দুই বিঘা জমির উপর চতুর্থ তলা বহুতল নির্মাণের জন্য সড়ক বিভাগ ইতিমধ্যে ৪ কোটি ১০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ভবনের দরপত্র আহ্বান করেছে। আগামী ৭ জুলাই এই দরপত্রটি উন্মুক্ত করা হবে। কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ অফিসের যে স্থানে ৪র্থ তলা ভবনটি নির্মিত হতে যাচ্ছে, উক্ত জায়গাটি নিয়ে বিজ্ঞ আদালতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে। মামলাটি করেছে ওই করিডোরের মধ্যেই আরেকটি সরকারী অফিস গণপূর্ত বিভাগ। গাছ ও পরিবেশ একে অন্যের পরিপূরক এদের মধ্যে রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। গাছ মানুষের পরম বন্ধু, কিন্তু কতটুকু যতœশীল বন্ধুর প্রতি? আমরা সামান্য কারণ দেখিয়ে বন উজাড় করে ফেলি। বৃক্ষ যে মানুষের প্রাণ চালনা শক্তির মূল উপাদান তা বোধ হয় সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তাগন জানেন না। যদি জেনেই থাকতেন তাহলে সাদ্দাম মোড়ের সড়ক ও গণপূর্ত অফিসের সামনে অক্সিজেন নামের বৃক্ষের উপর কুঠারাঘাত না করে চৌড়হাসের নিজস্ব জমির উপর চতুর্থ তলা ভবন নির্মাণ করতেন। আজ সেই অতি মূল্যবান আমাদের পরমবন্ধু গাছ কেটে ভবন নির্মানের প্রস্তুতি চলছে কুষ্টিয়া সড়ক বিভাগের উদ্যোগে। সড়ক ভবনের সম্মুখে প্রায় দুই বিঘা জমির উপর বিভিন্ন প্রজাতির ঔষধি গাছ রয়েছে। কুষ্টিয়া শহরের মধ্যে একমাত্র এখানেই বিভিন্ন প্রজাতির গাছ একত্রে বেড়ে উঠেছে। এই স্থানে গাছের প্রাচুর্যতা থাকায় শহরের অন্যান্য স্থানের তুলনায় এই জায়গার তাপমাত্রা তুলনামূলক কম। কিন্তু এই সকল গাছগুলোকে এখন আর বাঁচিয়ে রাখা যাবে না প্রকারন্তরে গাছগুলোকে আর বাঁচতে দেয়া হবে না। কারণ এই স্থানে এসকল মূল্যবান গাছ কেটে কুষ্টিয়া সড়ক বিভাগ কর্তৃক সুরম্য ভবন নির্মাণের সকল আয়োজন সম্পন্ন করেছেন ইতিমধ্যে। প্রকৃতির এই নির্মল পরিবেশ নষ্ট করে এখানে এই ভবনটি নির্মিত হলে কুষ্টিয়া শহরবাসীর অপরিমেয় ক্ষতি হয়ে যাবে। এই স্থানে বিদ্যমান বিভিন্ন গাছসমূহের গড়পরতা বয়স প্রায় ৩০। সড়ক বিভাগ একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান হয়েও এই বাধ্যবাধকতা প্রতিপালন তো করছেই না, বরং করছে উল্টোটা। উন্নয়নের নামে সাবাড় করা হচ্ছে বৃক্ষ। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-এসডিজি পূরণে বনভূমির পরিমাণ দেশের মোট ভূখন্ডের ১৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করতে হবে। কিন্তু উল্টোপথে হাঁটছি আমরা। কুষ্টিয়ার সচেতন নাগরিক মহল মনে করেন বিদ্যমান বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান এই গাছসমূহ না কেটে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচীর মাধ্যমে এই স্থানে আরো অধিক পরিমাণে গাছ লাগানো প্রয়োজন। তাতে এখানকার পাখিদের আবাসস্থল নিরাপদ হওয়ার পাশাপাশি উন্নত পরিবেশ বজায় থাকবে। জাতির পিতা আজীবন সবুজ সোনার বাংলা কে ভালোবেসেছেন। জাতির পিতার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য সমাজ গড়ে তুলতে গাছ লাগানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: শাকিরুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি মোবাইল রিসিভ করেন নাই। অন্যদিকে কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোহাম্মদ আতাউর রহমানের মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, গাছ কেটে ভবন নির্মান এটি সরকারের বিষয়, তবে গাছ কাটলে পরিবেশের উপর প্রচন্ড চাপ পড়বে অক্্িরজেনের অভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়বে বলে আমি মনে করি। গাছ কাটার বিষয়ে কুষ্টিয়া বন বিভাগ অফিসের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সালেহ মো: শোয়াইব খান বলেন, কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগ আমাদেরকে এখনো কোন প্রকার অবগতি এবং কোন প্রকার চিঠিও প্রদান করেন নাই। তবে আমাদের অনুমতি না নিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ কোন ভাবেই গাছ কাটতে পারবে না। অপরদিকে কুষ্টিয়া গণপূর্ত অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলৗ মো: জাহিদুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি বলে, কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ অফিসের যে স্থানে ৪র্থ তলা ভবনটি নির্মিত হতে যাচ্ছে, উক্ত জায়গাটি নিয়ে মাননীয় বিজ্ঞ আদালতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। মামলার রায় তাদের পক্ষে গেলে উক্ত দপ্তর ভবন নির্মান করতে পারবেন। তবে আমি যে টুকু জেনেছি ভবনটি নির্মান হওয়ার কথা কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাসে সড়ক বিভাগের ফাঁকা জমিতে এই জমিতে প্রস্তাবিত সড়ক ভবনের সাইনবোর্ড টানানো রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এখানে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, সরিসৃপ, কাঠবিড়ালী, বেজী সহ প্রাণীদের আবাসস্থল হওয়াতে কুষ্টিয়ার পরিবেশবিদদের মতে সড়ক ভবনের সম্মুখ স্থানের গাছপালা কেটে ফেললে প্রাণীকূলের খাদ্যশৃংখলে বিগ্ন ঘটাসহ জীববৈচিত্র মারাত্ক ভাবে হুমকির মুখে পড়বে। দেশের জীব বচৈত্র্য, প্রতিবেশ ও পরিবেশন সংরক্ষণে সরকারি জমিতে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গাছ সংরক্ষণ করতেই ‘বৃক্ষ সংরক্ষণ আইন, ২০১২’আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে। সে বিবেচনায় কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের এর নাকের ডগায় কিভাবে এতোগুলো গাছ কাটার পাঁয়তারা চালাচ্ছেন তা আমার বোধগম্য নয়। অন্যদিকে কুষ্টিয়ার পরিবেশবাদীরা তাদের চরম উৎকণ্ঠা ও উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে কুষ্টিয়ার বিশিষ্ঠ পরিবেশ গবেষক, লেখক ও কলামিষ্ট গৌতম কুমার রায় বলেন, দেশে যে মহামারী আসছে যুগে যুগে তার প্রধান কারণ হচ্ছে অক্সিজেনের শূন্যতা। গাছ না থাকার কারনে অন্যদিকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর পরিমাণ বেশি হয়ে গেছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী সহ দেশের প্রধান প্রধান গুণীজন ফাঁকা জায়গায় গাছ লাগানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছি সেই সাথে বিভিন্ন স্থানে গাছ লাগাচ্ছে, বিশেষ করে তালগাছ সহ আরো অন্যান্য গাছ লাগাইতে হবে, কারণ বজ্রপাতে মানুষ মানুষ মারা যাচ্ছে। ঠিক সেই সময় ৩০ বছরে তিল তিল করে গড়ে ওঠা হওয়া গাছ নিধন করা হচ্ছে প্রাণী হত্যার শামিল এবং মারাত্মক অপরাধ। দেশের মোট জমির মধ্যে ২৫ শতাংশ বনায়ন থাকা প্রয়োজন, বনায়ন না থাকার কথা না হলেও মানুষের আয়ু বাড়ে না আমাদের আছে ৯ শতাংশের কম। সুতরাং হওয়া গাছ কাটায় কোন সুযোগ নাই। এমনকি ব্যক্তিগত পর্যায়েও গাছ কাটতে দেওয়া যাবে না। অতএব, সরকারের কিছু তুঘলকি ব্যক্তি আছে তারা নিজেদের সিদ্ধান্ত নিয়ে কখনও কখনও জ্ঞানের অভাবে কখনো কখনো নিজেদের স্বার্থের কারণে বড় বড় গাছগুলো কেটে ফেলছে এটার বিরুদ্ধে কঠোর ও তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। প্রয়োজন বোধে এ বিষয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com