বিবিএসের জরিপ
দেশে দানাদার খাদ্যশস্যগুলোর অন্যতম ধান, গম, ভুট্টা, বার্লি ও কাওন। ২০১৯ সালে এ খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৫ কোটি ৮১ লাখ ৪১ হাজার ২৪৪ টন। এর মধ্যে কৃষক নিজের জন্য ভোগ করেছেন ৩৫ দশমিক ৪২ শতাংশ। অন্যদিকে বিপণনযোগ্য উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্য ছিল ৩ কোটি ৭৫ লাখ ৫০ হাজার টন বা ৬৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এ সময়ে দানাদার খাদ্যশস্যের মূল্য সংযোজন হয়েছে প্রতি কেজিতে প্রায় ১১ টাকা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘সার্ভে অন গ্রস মার্কেটেড সারপ্লাসেস অব এগ্রিকালচারাল কমোডিটিস ২০১৯’ শীর্ষক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। দেশে উৎপাদিত ১৫০টি কৃষিপণ্যের ওপর এ জরিপ পরিচালনা করেছে সংস্থাটি। প্রথমবারের মতো পরিচালিত এ জরিপের ফলাফল গতকাল প্রকাশ করা হয়। মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি বাস্তবসম্মত করতে এ জরিপ করেছে বিবিএস। বর্তমানে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হিসাব করা হয় ২০০৫-০৬ ভিত্তিবছর ধরে। বিবিএসের এ জরিপে ২০১৫-১৬ অর্থবছরকে ভিত্তি ধরা হয়েছে। সেই সঙ্গে এখনকার বার্ষিক হিসাবের পরিবর্তে তিন মাস অন্তর হিসাব দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
জরিপের তথ্যমতে, কৃষকরা যে পরিমাণ ধান উৎপাদন করেন তার ৩৫ দশমিক ৪২ শতাংশ নিজেরাই ভোগ করেন। বাকি ৬৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ চাল বাজারে বিক্রি করার জন্য উদ্বৃত্ত থাকে। সবচেয়ে বেশি বাজারে আসছে ভুট্টা, যার পরিমাণ প্রায় ৯৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ। অন্যদিকে ডালজাতীয় শস্য উৎপাদন হয় ৩ লাখ ৮১ হাজার টন, যার ৮১ দশমিক ১০ শতাংশ বাজারে আনার জন্য কৃষকের কাছে উদ্বৃত্ত থাকে। তবে চাল বাদে দানাদার শস্যের ক্ষেত্রে কৃষকরা ভোগ করেন ১৮ দশমিক ৯০ শতাংশ। ফলে বাজারে বিক্রি করেন ৮১ দশমিক ১০ শতাংশ।
দেশে তেলজাতীয় শস্যের উৎপাদন ১০ লাখ ২১ হাজার টন। এর মধ্যে ২১ দশমিক ১৯ শতাংশ ভোগ করেন কৃষক। ৭৮ দশমিক ৮০ শতাংশ বিক্রির জন্য উদ্বৃত্ত থাকে। আঁশ বা তন্তুজাতীয় ফসলের উৎপাদন ১৬ লাখ ৬২ হাজার টন, যার ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ কৃষক ভোগ করেন। বাজারে যাওয়ার জন্য উদ্বৃত্ত থাকে ৯৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। দেশে ১ কোটি ২৯ লাখ টন সবজি উৎপাদন হয়, যার ২৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ কৃষকরা ভোগ করেন। বাজারে যাওয়ার জন্য উদ্বৃত্ত থাকে ৭০ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ।
মোট তিন লাখ টন উৎপাদিত শাকের ২২ দশমিক ৮১ শতাংশ কৃষকরা নিজেরাই ভোগ করেন। বাজারে বিক্রির জন্য উদ্বৃত্ত থাকে ৭৭ দশমিক ১৯ শতাংশ। ৩ লাখ ৫৬ হাজার টন উৎপাদিত মসলাজাতীয় ফসলের ১৩ দশমিক ৭২ শতাংশ ভোগ করেন কৃষকরাই। বাকি ৮৬ দশমিক ২৮ শতাংশ বাজারে নেয়ার জন্য উদ্বৃত্ত থাকে। ৪৭ লাখ ৮১ হাজার টন উৎপাদিত ফলের কৃষক ভোগ করেন ২০ দশমিক ১৮ শতাংশ। বাজারে নেয়ার জন্য উদ্বৃত্ত থাকে ৭৯ দশমিক ৮২ শতাংশ। দুই লাখ টন তামাকজাতীয় উৎপাদিত পণ্যের কৃষকরা ভোগ করেন ৮২ দশমিক ৯৫ শতাংশ আর বাজারে বিক্রির জন্য থাকে ১৭ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ।
গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিবিএস অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান তথ্য ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মোহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী। বিবিএসের মহাপরিচালক তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিবিএসের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মোহাম্মদ মেজবাহুল আলম ও অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) শশাঙ্ক শেখর ভৌমিক। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জরিপের প্রকল্প পরিচালক জিয়াউদ্দিন আহমেদ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ধান, গম, বার্লি ও কাওনজাতীয় শস্যের ক্ষেত্রে উৎপাদনের শতকরা হারে মূল্য সংযোজন হয় ৬৬ দশমিক ৪২ শতাংশ। ডালজাতীয় পণ্যের মূল্য সংযোজন হয় ৭৯ দশমিক ২০ শতাংশ। তেলবীজ-জাতীয় শস্যের মূল্য সংযোজন হয় ৭৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। তন্তুজাতীয় শস্যে তা ৮৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ। সবজিতে ৬৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ। শাকসবজির ক্ষেত্রে ৭৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ মূল্য সংযোজন হয়। এছাড়া মসলার ক্ষেত্রে ৭৭ দশমিক ৪২ শতাংশ, ফলের ক্ষেত্রে ৮৮ দশমিক ২২, তামাকের ক্ষেত্রে ৬২ দশমিক ৬৬, পানের ক্ষেত্রে ৮৪ দশমিক ৫৫ ও গোখাদ্যের ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজন হয় ৮৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
মূল প্রবন্ধে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশের অর্থনীতিতে এখনো কৃষি একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। এ খাতে প্রায় ৪১ শতাংশ শ্রমজীবী মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। স্বাধীনতার পর কৃষি খাতে ফসল উৎপাদনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। দেশের অর্থনীতিতে শিল্প ও সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি অনেকাংশে কৃষি খাতের বিপণিতে উদ্বৃত্তের ওপর নির্ভরশীল। বিপণনযোগ্য উদ্বৃত্ত যদি অপর্যাপ্ত হয়, তাহলে দেশ আমদানি করতে বাধ্য হয়।