জীবিকা নির্বাহে প্রয়োজন চাহিদাসম্পন্ন কাজের। যোগ্যতার নিরিখে সে কাজ হয়ে থাকে ছোট বা বড়। কেউ পায় দেশের সর্বোচ্চ পদের চাকরি, আবার কেউ পায় সর্বনিম্ন পদের কাজ। শরিয়তের ভিত্তিতে উভয়ের কাজের শ্রমের কোনো তারতম্য হয় না। ইসলামে কাজ ও কর্মকে সুচারুরূপে সম্পন্ন করার জোর তাগিদ রয়েছে। ইচ্ছানুযায়ী কাজ বা দায়িত্বে অবহেলার সুযোগ ইসলামে নেই। প্রত্যেকেরই কর্মক্ষেত্রে চুক্তি অনুযায়ী শ্রম দেয়া আবশ্যক। কর্মক্ষেত্রে অবহেলা মারাত্মক গোনাহের কাজ। ইসলাম বিভিন্ন পর্যায়ে এর হারাম হওয়ার বিধান বর্ণনা দিয়েছে। সঠিকভাবে ও যথাযথ মাধ্যমে দায়িত্ব পালন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা, এটি এক ধরনের চুক্তিভিত্তিক দায়িত্ব। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে- ‘সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম কর্মী, যে শক্তিমান ও দায়িত্বশীল।’ (সূরা কাসাস, আয়াত-২৬)
প্রচলিত নিয়মানুসারে কোনো প্রতিষ্ঠানের চাকরিতে যোগ দেয়া মানে সে প্রতিষ্ঠানের নিয়ম মেনে মেধা, চিন্তা ও শ্রম ব্যয় করা। চাকরিতে নিয়োগকালে নিয়োগকর্তা কর্তৃক লিখিত বা মৌখিক অঙ্গীকার বা চুক্তি নির্ণয় করা হয়। মাসিক বেতনের বিনিময়ে তাদের এ অঙ্গীকার বা প্রতিশ্রুতি আদায় করা হয়।
যা পালন করা কর্মকর্তা-কর্মচারীর ওপর অবশ্য কর্তব্য। আর ইসলামের বিধানে অঙ্গীকার পূরণ করা ফরজ। কিয়ামতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এ প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হতে হবে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আর তোমরা অঙ্গীকার পূর্ণ করো। কেননা, অঙ্গীকার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হবে।’ (সূরা বনি ইসরাইল, ৩৪)
সরকারি কিংবা ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান দায়িত্বশীলদের ওপর আমানত হিসেবে দেয়া হয়। ইসলামের দৃষ্টিতে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন পবিত্র আমানত হিসেবে গণ্য। চাইলে সে আমানত রক্ষা করতে পারে কিংবা লোভের বশে দুর্নীতি করে খেয়ানতও করতে পারে। আমানত রক্ষায় ইসলাম জোর তাগিদ দিয়েছে এবং খেয়ানত থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদারগণ! খেয়ানত করো না আল্লাহ ও রাসূলের সাথে এবং খেয়ানত করো না নিজেদের পারস্পরিক আমানতে জেনেশুনে।’ (সূরা আনফাল, আয়াত-২৭)
অঙ্গীকার পূরণের সাথে ঈমানের সম্পর্ক আছে। যার ঈমানের ঘাটতি রয়েছে, সেই অঙ্গীকার ভঙ্গ করে।
আমানত পূর্ণাঙ্গভাবে আদায় না করা বা খেয়ানত ও বিশ্বাসঘাতকতা করা মারাত্মক গোনাহের কাজ। রাসূল সা: এটাকে মুনাফিক বা বিশ্বাসঘাতকের চিহ্ন বলেছেন। হাদিসের ভাষায়, হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘মুনাফিকের লক্ষণ তিনটি। তা হলো- মিথ্যা কথা বলা, অঙ্গীকার ভঙ্গ করা ও আমানতের খেয়ানত করা।’ (সহিহ বোখারি : ৩৩)
ইসলামে আমানতের পরিধি অনেক প্রসারিত। চাকরিজীবীদের কাজের সময়টুকুও আমানত হিসেবে গণ্য। সে সময় কাজ রেখে গল্প-গুজবে মেতে ওঠা, নিজের মতো মোবাইলে কথা বলা, অলসতার আশ্রয় নেয়া, ধোঁকাবাজি, প্রতারণা, বিলম্বে আগমন, সময়ের আগে প্রস্থান, মিথ্যা বলা, দুর্নীতি করা, শিক্ষকের কম পড়ানো, প্রাইভেট পড়ার প্রতি বাধ্যকরণ, সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসায় গুরুত্ব না দিয়ে প্রাইভেট চিকিৎসায় উৎসাহিত করা ইত্যাদি খেয়ানতের শামিল। এটি কবিরা গোনাহ। এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। হাদিসের ভাষায়, হজরত আনাস রা: বলেন, এমন খুব কম হয়েছে যে, মহানবী সা: ভাষণ দিয়েছেন, অথচ তাতে এ কথা বলেননি, ‘যার মধ্যে আমানতদারি নেই তার ঈমান নেই। আর যার মধ্যে প্রতিশ্রুতি রক্ষার নিয়মানুবর্তিতা নেই, তার ধর্ম নেই।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস-১২৪০৬)
দায়িত্বশীলতা ও আমানত পূর্ণাঙ্গভাবে রক্ষা করা প্রত্যেকের জন্য ফরজ। এ ক্ষেত্রে অবহেলা করলে কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। কর্মীর কাছ থেকে কর্তৃপক্ষ কাজ বুঝে না পেলে পরকালে অপরাধী হিসেবে শাস্তি পেতে হবে এবং পরকালে এ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। নবীজী সা: ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককে তার দায়িত্বের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে।’ (সহিহ বোখারি : ৮৪৪) লেখক : আলেম ও গবেষক