শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৩০ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
জব্দ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর রিট আরেক হত্যা মামলায় সাবেক বিচারপতি মানিককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে মানহানির মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান উৎপাদনে ফিরলো কর্ণফুলী পেপার মিল ২০৫০ সালের মধ্যে ৪ কোটি মানুষের মৃত্যু হবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণে দিল্লিতে মেয়ের সঙ্গে থাকছেন শেখ হাসিনা, দলবল নিয়ে ঘুরছেন পার্কে পিআইবির নতুন ডিজি ফারুক ওয়াসিফ, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি এম আবদুল্লাহ ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পোশাক শিল্প আইন আপনার হাতে তুলে নেয়ার কারো কোনো অধিকার নেই :স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দেয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বললেন মির্জা ফখরুল

কম্বোডিয়ায় চীনকে ব্ল্যাংক চেক দিয়ে রেখেছেন হুন সেন

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৬ জুন, ২০২১

কম্বোডিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলীয় শহর সিহানুকভিল। দেশটির একমাত্র গভীর সমুদ্রবন্দর এখানেই অবস্থিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যও খ্যাতি রয়েছে শহরটির। বন্দর ও পর্যটন স্পটগুলোকে বাদ দিলে স্থানীয়দের জীবনযাত্রা বরাবরই ছিল শান্ত-নিস্তরঙ্গ। তবে সবকিছু বদলে যেতে থাকে ২০১৮ সাল থেকে। ওই সময়ের পর থেকে এ পর্যন্ত শহরটিতে একের পর এক বড় প্রকল্প নিয়ে হাজির হয়েছে চীন। উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রকল্পসংশ্লিষ্ট এসব বিনিয়োগ রীতিমতো চায়না টাউন বানিয়ে তুলেছে সিহানুকভিলকে।
সিহানুকভিলে গত তিন বছরে চীনা বিনিয়োগ ও পৃষ্ঠপোষকতায় অনেকগুলো আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠেছে। শহরের আনাচকানাচে গড়ে উঠেছে চীনা রেস্তোরাঁ ও জুয়ার আখড়া। স্থানীয় দোকানপাটগুলোয় আগে সাইনবোর্ড-ফেস্টুন দেখা যেত শুধু খেমার ও ইংরেজি ভাষার। এখন সেখানে জায়গা করে নিচ্ছে ম্যান্দারিন। এমনকি নগরের পর্যটন খাতেও প্রাধান্য পাচ্ছে চীনা আগন্তুকরা। গোটা কম্বোডিয়ায় শুধু সিহানুকভিলেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে প্রায় ৪২০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ করেছে চীন। বিআরআই প্রকল্পে সিহানুকভিলকে দেখা হচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীনা বাণিজ্যতরীর প্রথম পোর্ট অব কল (জাহাজের বিরতিস্থল হিসেবে ব্যবহূত বন্দর) হিসেবে। বন্দর নগরীটির সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ উন্নত করতে প্রায় ২০০ কোটি ডলার ব্যয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে নমপেন-সিহানুকভিল এক্সপ্রেসওয়ে। মহাসড়কটির নির্মাণকাজের মেয়াদ ২০২৩ সাল পর্যন্ত ধরা হলেও তা শেষ হচ্ছে নির্ধারিত সময়ের আগেই। আগামী বছরেই এটি চালু করা যাবে বলে দেশটির সরকারের পক্ষ থেকেও ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
শুধু সিহানুকভিল নয়, বিআরআই প্রকল্পের অধীনে গোটা কম্বোডিয়ায়ই বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করছে চীন। বেইজিংয়ের অর্থায়নে গড়ে তোলা হচ্ছে নতুন মহাসড়ক, জাতীয় সড়ক, বিদ্যুৎকেন্দ্র, বিমানবন্দর ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড)। এছাড়া কম্বোডিয়ার সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়নে প্রায় ১০ কোটি ডলার অনুদানেরও ঘোষণা দিয়েছে চীন।
কম্বোডিয়ায় চীনের এ বিপুল বিনিয়োগ দেশটিতে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি করেছে। অন্যদিকে পশ্চিমা বিশ্লেষকরাও বলছেন, কম্বোডিয়া এখন বিপুল পরিমাণ ঋণের ফাঁদে জড়িয়ে পড়ছে। এর পাশাপাশি বেশ দ্রুতগতিতেই চীনের অর্থনৈতিক উপনিবেশ হয়ে উঠছে দেশটি।
তাদের ভাষ্যমতে, কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিজেকে বরাবরই দেশটির সার্বভৌমত্বের রক্ষক হিসেবে দাবি করেছেন। কিন্তু তার প্রত্যক্ষ সমর্থন ও সহযোগিতায়ই দেশটিকে রীতিমতো উপনিবেশ বানিয়ে তুলছে চীন। কম্বোডিয়ায় বেইজিংকে রীতিমতো ব্ল্যাংক চেক দিয়ে রেখেছেন তিনি। বর্তমানে নমপেনের ওপর বেইজিংয়ের প্রভাব এখন এতটাই গভীরে ছড়িয়েছে, প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে কম্বোডিয়ার সার্বভৌমত্বের বিষয়টিও।
২০১৯ সালে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে (ডব্লিউএসজে) প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বেশ হইচই ফেলে দেয়। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, চীনের সামরিক বাহিনীকে সিহানুকভিলের রিয়াম নৌঘাঁটির ৬২ একর জায়গা ৩০ বছরের জন্য ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে কম্বোডিয়া। এ নিয়ে স্বাক্ষরিত চুক্তির ভিত্তিতে ঘাঁটিটিতে সৈন্য, সমরাস্ত্র ও যুদ্ধজাহাজ সমাবেশ করতে পারবে চীন।
ওই প্রতিবেদনের বক্তব্য সত্য হলে দক্ষিণ চীন সাগর অঞ্চলেই বেইজিং অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে মালাক্কা প্রণালির ওপর চীনের কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ রীতিমতো দুর্ভেদ্য হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা করছে পশ্চিমা মহল। বেইজিংয়ের দক্ষিণ চীন সাগর দিয়ে আমদানীকৃত জ্বালানি তেলের ৯০ শতাংশই আসে মালাক্কা প্রণালি দিয়ে।
কম্বোডিয়ায় চীনের উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কার সূত্রপাত ২০০৮ সালে। ওই সময়ে চীনের তিয়ানজিন ইউনিয়ন ডেভেলপমেন্ট গ্রুপকে ৯৯ বছরের জন্য কম্বোডিয়ার উপকূলের বড় একটি অংশ ইজারা দেয়া হয়। এক্ষেত্রে প্রতি হেক্টরের ইজারামূল্য ধরা হয়েছিল মাত্র ৩০ ডলার করে। বর্তমানে সেখানে ৪৫ হাজার একর এলাকাজুড়ে একটি পর্যটনকেন্দ্র তৈরি করছে চীন। তৈরি হচ্ছে নতুন নৌ ও বিমানবন্দর। গোটা প্রকল্পে চীনের বিনিয়োগ প্রায় ৩৮০ কোটি ডলার।
অভিযোগ রয়েছে, রীতিমতো আইন লঙ্ঘন করে চীনের হাতে এ বিপুল পরিমাণ জায়গা তুলে দেয়া হয়েছে। দেশটির ভূমি আইনে জমির সর্বোচ্চ ইজারা সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ হাজার হেক্টর। কিন্তু শুধু প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের অনুমতির ভিত্তিতেই এ বিপুল পরিমাণ জমি ইজারায় পেয়েছিল চীনা প্রতিষ্ঠানটি।
ইজারাকৃত জমির মধ্যে বোটুম সাকর ন্যাশনাল পার্কের বনাঞ্চলও রয়েছে। দীর্ঘদিন ওই সংরক্ষিত বনাঞ্চলসংলগ্ন এলাকায় কোনো ধরনের অবকাঠামো নির্মাণের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। পরে এক রাজকীয় ফরমানের মাধ্যমে ওই জমি ইজারা বা বিক্রির সুযোগ করে দেয়া হয়।
দারা সাকোর বিচসাইড রিসোর্ট শীর্ষক প্রকল্পটির অধীনে নির্মাণ করা হচ্ছে কম্বোডিয়ার সবচেয়ে বড় বিমানবন্দর। চীনারা দাবি করছে, শুধু বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্যই বিমানবন্দরটি নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু স্যাটেলাইট ইমেজে উঠে আসা বিমানবন্দরটির ১১ হাজার ফুট দীর্ঘ রানওয়ে পর্যবেক্ষকদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে। তারা বলছেন, বাণিজ্যিক উড়োজাহাজের ফ্লাইট পরিচালনার জন্য এত দীর্ঘ রানওয়ে অপ্রয়োজনীয়। বরং বিমানবন্দরটিকে চীন যদি নিজস্ব বিশালাকায় ফাইটার জেট, গোয়েন্দা উড়োজাহাজ ও সামরিক পরিবহন উড়োজাহাজ উড্ডয়ন-অবতরণে কাজে লাগাতে চায়, শুধু সেক্ষেত্রেই রানওয়ের এ বিশাল দৈর্ঘ্যের যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া যায়।
কম্বোডিয়ায় ব্যাপক বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছে প্রকল্পটি। অন্যদিকে চীনা বিনিয়োগকেই কম্বোডিয়ার উন্নয়নের চাবিকাঠি দাবি করে এর স্বপক্ষে অনড় থেকেছেন প্রধানমন্ত্রী হুন সেন। তবে তার এ বক্তব্যে আস্থা রাখতে পারেননি প্রকল্পের বিরোধিতাকারীরা। ব্যাপক সমালোচনা ও বিরোধিতা চালিয়ে গিয়েছেন তারা।
অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্পের বিরোধিতাকারীদের ওপর ব্যাপক দমনপীড়ন চালিয়েছে হুন সেন সরকার। এমনকি কয়েক বছর আগে দেশটির প্রধান বিরোধী দলকে বিলুপ্ত করে দেয়ার পেছনেও প্রকল্পের স্বার্থ মুখ্য ভূমিকা রেখেছে বলে গুজব রয়েছে। এশিয়া টাইমসে ওই সময়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ সে সময় কম্বোডিয়াকে সহায়তা দেয়া বন্ধ বা স্থগিত করে দেয়ার হুমকি দিয়েছিল। এমনকি অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপেরও কথা উঠেছিল। ওই সময়ে দেশটির জাতীয় বাজেটের বড় একটি অংশ অনুদান বা সহায়তানির্ভর হলেও এসব হুমকিতে কর্ণপাত করেননি হুন সেন। এ বিষয়ে তার যুক্তি ছিল, পশ্চিমারা বিনিয়োগ ও সহায়তা প্রত্যাহার করার পাশাপাশি অবরোধ আরোপ করলেও কিছু যায় আসে না। সেক্ষেত্রে চীনের অর্থনৈতিক সমর্থনের ওপরে নির্ভর করেই এগিয়ে যাবেন তিনি।
ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছিল, চীনা কোম্পানির লোকজন প্রকল্প এলাকার স্থানীয়দের সঙ্গেও বিরোধে জড়িয়েছে বারবার। স্থানীয়দের অভিযোগ, তাদের দমনে স্থানীয় সামরিক পুলিশের সহায়তা নিয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কোম্পানি। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা জোরপূর্বক তাদের বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করেছে। এমনকি কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠনের বরাতে স্থানীয়দের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়ার কথাও দাবি করা হয়।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com