সেমি পাকা ভবনের বারান্দা থেকে কয়েক গজ দুরে চোখে পড়বে ভাঙনের ভয়াবহতা। তার অদুরে পানিতে ভাসছে নৌকা। সাঁতার কাটছে হাঁস। এই চিত্র কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীর পাইকেরছড়া ইউনিয়নের ২ নম্বর পাইকেরছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। একটা সময় এই বিদ্যালয়ের ছিল দ্বিতল ভবন, ছিল সবুজ মাঠ। যা এখন অতীত। কয়েক বছর আগে বিদ্যালয় এলাকায় ভয়াবহ নদী ভাঙন দেখা দেয়। এতে বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবন নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার আশংকা সৃষ্টি হলে নিরুপায় কর্তৃপক্ষ ভবনটি নিলামে বেঁচে দেন। সেবারের ভাঙনে নদী গর্ভে চলে যায় নিলামে বিক্রি হওয়া ভবনের জায়গা। গত বছরের বন্যায় পুনরায় নদীতে ভাঙন দেখা দিলে বিদ্যালয়ের অর্ধেক মাঠ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ভাঙনের তীব্রতা কমে যাওয়ায় সে যাত্রায় বেঁচে যায় অবশিষ্ট মাঠ ও বিদ্যালয়ের সেমি পাকা ভবন। ক’দিন বাদেই শুরু হবে বর্ষা। আর বর্ষা এলেই দেখা দেবে নদী ভাঙন। গত বছর ভাঙনের করাল গ্রাস থেকে বেঁচে যাওয়া বিদ্যালয়ের মাঠ ও সেমি পাকা ভবন এবছর অক্ষত থাকবে কিনা সেই দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ স্থানীয়দের। বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙন কবলিত তীর থেকে মাত্র কয়েক গজ দূরে বিদ্যালয়ের সেমি পাকা ভবন। বিদ্যালয়টিকে ভাঙনের কবল থেকে বাঁচাতে কর্তৃপক্ষ অদ্যাবদি দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এ পর্যন্ত মোট চারবার দুধকুমার নদের ভাঙনের কবলে পড়ে ১৯৫৭ সালে স্থাপিত বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদ জানান, গত বছর দুধকুমার নদের ভাঙনে বিদ্যলয়ের অর্ধেক মাঠ নদীতে চলে গেছে। দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে আসছে বর্ষায় ভাঙন দেখা দিলে বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরো জানান, বিদ্যালয়টিকে বাঁচানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে উপজেলা শিক্ষা অফিসে লিখিত আবেদন জানানো হয়েছে। বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মরিয়ম আক্তার মিতুও মাসুদুর রহমান জানায়, নদী যদি স্কুল ভেঙে নিয়ে যায় তাহলে আমাদেরকে অনেক দুরের স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করতে হবে। স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম ও রিনা বেগম জানান, স্কুলটি যদি নদীগর্ভে তলিয়ে যায় তাহলে এলাকার শিশুরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হবে। এছাড়া স্কুলটিকে বর্তমান স্থান থেকে অন্যত্র সরিয়ে নিলেও আমাদের সন্তানদের শিক্ষা অর্জনে সমস্যায় পড়তে হবে। স্কুলটিকে ভাঙন থেকে বাঁচানোর জন্য বাঁধ নির্মাণ ও মাটি ভরাট করা প্রয়োজন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার দেব শর্মা জানান, বিদ্যালয়টিকে ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কুড়িগ্রামকে অবহিত করা হয়েছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বক্তব্য ভিন্ন। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, ভাঙনের শিকার স্কুলটির বিষয়ে তিনি অবগত নন, স্কুলের বিষয়ে তিনি খোঁজ নেবেন। বিদ্যালয়টিকে ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী অভিভাবক সহ স্থানীয় এলাকাবাসী।