লকডাউনের খবরে সুস্বাদু হাঁড়িভাঙ্গা আমের বাজারে ধস নেমেছে, দিশেহারা হয়েছে আম ব্যবসায়ীরা। ক্রমাগত দাম নি¤œমুখী হওয়ায় আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত পড়েছে। এই সুযোগে পরিবহনের নামে কুরিয়ার সার্ভিসগুলো প্রতি কেজি আম রংপুরের বাইরে পাঠাতে অস্বাভাবিক মূল্য আদায় করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আম চাষিরা লোকসানের মুখে পড়লে আমকে ঘিরে এ অঞ্চলের গতিশীল অর্থনীতি হোঁচট খেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মঙ্গলবার (১ জুলাই) সকাল থেকে বেলা পর্যন্ত রংপুুুর নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। আম ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বোলছে, লকডাউনের কারণে বাহির থেকে আম ব্যবসায়ীরা আসতে পারছে না। আমাদের বাগানের আম বাহিরের জেলার পাটাতে সমস্যা হচ্ছে। জানাযায়, গত ২০ জুন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে রংপুরে হাঁড়িভাঙ্গা আম পারা ও বাজারজাত শুরু হয়। ঝড় বাদলে কিছুটা ক্ষতি হলেও ফলন ভালো হয়েছে। পরিবহন ও বাজারজাত নিশ্চিত হলে শুধু হাড়িভাঙ্গা আম বিক্রি করে রংপুরের চাষিরা ২০০ কোটি টাকার ওপর ঘরে তোলার আশা করেছিল। প্রথম অবস্থায় প্রতি কেজি আম ৪০ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি হলেও লকডাউনে যানবাহন চলবে না, পাইকাররা আসছেন না, এমন অজুহাতে আমের দাম নেমে এসেছে প্রকার ভেদে ১৫ থেকে ২৫ টাকা কেজিতে। এ অবস্থা চলতে থাকলে চাষি ও ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা লোকসান হবে। শ্যামপুরের আম চাষি সামছুজ্জামান বলেন, তিনি তার বাগান আগাম বিক্রি করেছেন এক লাখ টাকায়। ক্রেতা অগ্রিম দিয়েছে ৬০ হাজার টাকা। আমের দাম কমে যাওয়ায় বাকি টাকা দিতে পারবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। ফলে তার লোকসান হচ্ছে ৪০ হাজার টাকা। পদগঞ্জের আম চাষি রায়হান ও নূরুল ইসলাম জানান, অনেক আশা ছিল আম বিক্রি করে লাভের মুখ দেখবেন। কিন্তু বাজারে হঠাৎ দাম কমে যাওয়া তারা চোখে মুখে অন্ধকার দেখছেন। খোড়াগাছ ইউনিনের তেকানি গ্রামের আমজাদ হোসেন জানান, বাবার আমল থেকে হাঁড়িভাঙ্গা আমের ওপর নির্ভর করছে আমাদের জীবন-জীবিকা। করোনার কারণে গত বছর খুব একটা লাভ হয়নি। এবার লকডাউনের কারণে ঢাকা এবং অন্যান্য স্থানের পাইকাররা আম কেনার জন্য আসতে পারছেন না। তাই আমের দাম কম। এ অবস্থা চলতে থাকলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে। এদিকে আমা চাষি ও খুচরা ক্রেতারা অভিযোগ করেন, রংপুরের বাইরে ঢাকায় প্রতি কেজি আম পাঠাতে ১৫ থেকে ১৮ টাকা গুণতে হচ্ছে। ঢাকার বাইরে অন্য জেলায় এক এক কেজি আম পাঠাতে পড়ে যাচ্ছে ২০ টাকার মতো। রংপুর কৃষি অফিসের মতে, এবার দেড় হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে শুধু হাঁড়িভাঙ্গা আমের আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ১০ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়েছে বলে মনে করছেন কৃষি বিভাগ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি ঢাকার অতিরিক্ত উপ-পরিচালক আবু সায়েম জানান, কৃষি অফিস বিষয়টি মনিটরিং করছে। সরকারিভাবে আম পাঠানোর চিন্তা রয়েছে।