সম্প্রতি চিত্রনায়িকা পরীমণিকে ঢাকা বোট ক্লাবে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ নিয়ে দেশব্যাপী হৈচৈ পড়ে যায়। ওই ঘটনায় মামলার পর অভিযুক্ত দুই আসামিসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। বোট ক্লাবে পরীকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমিকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে সাভার মডেল থানায় জিজ্ঞাসাদ শেষে আদালত তাদেরকে জামিন দিয়েছে। যদিও গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে মাদক দ্রব্য উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশের আরেকটি মামলায় জামিন না হওয়ায় আপাতত তারা কারাগারেই আছেন। এ দিকে পরীমণি যখন বোট ক্লাবে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে গণমাধ্যমে আলোচনায় এসেছেন, এরপরই গভীর রাতে গুলশান ক্লাবে গিয়ে ভাঙচুর ও হট্টগোল করার অভিযোগে পরীর বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়। বিষয়টি এখনো বিনোদন পাড়া ও মিডিয়া পাড়ার আলোচনা-পর্যালোচনার অন্যতম ইস্যু।
এ প্রসঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এক সময়ের অভিনেত্রী ও টিভি উপস্থাপিকা এ্যানী খান বলেন, কুমিরের খাঁচায় গিয়ে বলব, আমাকে স্পর্শ করো না, তা হয় না। এ্যানী খান দীর্ঘ ২৩ বছর ছোট পর্দায় কাজ করেছেন। গত বছর মার্চ মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশেও করোনাভাইরাস মহামারী শুরুর দিকে মিডিয়াকে গুড বাই জানান তিনি। এরপর ধর্ম-কর্মে নিজেকে ব্যস্ত রাখেন সাবেক এই অভিনয় শিল্পী। এ্যানী খান বলেন, আমি আগে থেকেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তাম। ২০২০ সালের মার্চে অভিনয় থেকে বিদায় নিয়েছি। তখন আমার হাতে কাজ ছিল না, ব্যাপারটি এমন নয়। আমি যখন অভিনয় ছেড়েছি, তখন আমি ১০টি সিরিয়ালে কাজ করতাম। কিন্তু আমার জীবনে কোনো দিন বারে-ক্লাবে যাইনি। ‘২৩ বছর বিনোদন জগতে কাজ করেছি। কোনো দিন কোনো ক্লাবে যাইনি। কোনো বারে যাইনি। বার বা ক্লাবগুলোতে কী হয় তা কে না জানে! আমি কুমিরের খাঁচায় গিয়ে বলব- আমাকে স্পর্শ করো না, তা হয় না।’ কথাগুলো বলছিলেন একসময়ের ছোট পর্দার তুমুল জনপ্রিয় অভিনয় শিল্পী এ্যানী খান।
অভিনয় জগত থেকে নিজে গুটিয়ে নেয়ার পর নামাজ, রোজা, কুরআন তেলাওয়াত, হাদিস ও ইসলামি বই-পুস্তক অধ্যয়নে মনোযোগী হন এ্যানী খান। এরই মধ্যে তিনি বাসায় কুরআন, হাদিসসহ ইসলামি সাহিত্যের ছোট একটি পাঠাগার তৈরি করেছেন। তার ওই পাঠাগারে প্রায় দেড় শ’ বই রয়েছে। এ দিকে গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে অনলাইনে ব্যবসা শুরু করেন এ্যানী। ‘শূন্য পুঁজি’ দিয়ে তার এই ব্যবসা শুরু হলেও এরই মধ্যে দেশ-বিদেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ফেসবুক কেন্দ্রিক তার এই ব্যবসা। বিভিন্ন ডিজাইনের বোরকা, হিজাব ও থ্রি-পিস অনলাইনে অর্ডার নিয়ে বিক্রি করেন তিনি। ধর্মীয় কাজের পাশাপাশি ব্যবসা কেন্দ্রিক কাজে এখন ব্যস্ত সময় কাটে তার।
এ্যানী বলেন, দুবাই ও চীন থেকে বেশিরভাগ পণ্য আনা হয়। কিছু কাজ আছে দেশের কারখানায় করানো হয়। তবে তিনি ব্যক্তিগত কোনো কারখানা করেননি। বাইরের কারখানায় কাজ করিয়ে পণ্য কিনে তিনি বিক্রি করেন। আর তিনি সম্পূর্ণ পেমেন্ট আগে নিয়েই পণ্য বিক্রি করেন বলেও জানান।
এসব কাজের ফাঁকে তিনি ইউটিউবে বিখ্যাত স্কলারদের ধর্মীয় আলোচনা শুনেন। নিজেও ইউটিউবে একটি চ্যানেল খুলেছেন। যেখানে হাদিসের আলোচনা করছেন তিনিই। এরই মধ্যে তার ইউটিউব চ্যানেলটি থেকে কিছু আয় হচ্ছে। এ্যানী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ইউটিউব চ্যানেল থেকে যা আয় হবে, পুরোটাই তিনি দ্বীনি বা ধর্মীয় কাজে ব্যয় করবেন। এ সময়ের জনপ্রিয় ও আলোচিত বাংলা চলচ্চিত্রের দুই অভিনেত্রী পরীমণি ও মাহিয়া মাহি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এ্যানী খান বলেন, মাহির আবার কী হয়েছে? তার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে পরীমণি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জানি না ওর সাথে কী করা হয়েছে। তবে আমি কুমিরের খাঁচায় গিয়ে বলব, আমাকে স্পর্শ করো না, তা হয় না। আমি আমার অভিনয় জীবনে কোনো দিন কোনো ক্লাবে কিংবা বারে যায়নি। কে না জানে ওখানে কী হয়! মদ আল্লাহ হারাম করেছেন। মদ খেয়ে মাতলামি করবেন, গভীর রাতে বারে যাবেন, নাইট ক্লাবে যাবেন- তাহলে যা হওয়ার তাই তো হবে।
এ্যানী খান বলেন, পরীমণি বা মাহি আর আমার কাজের ক্ষেত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমি সব সময় নাটকে অভিনয় করেছি। টিভিতে উপস্থাপনা করেছি। তারা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। কিন্তু কেউ যখন ভালো কিছু দিয়ে মনুষকে আকৃষ্ট করতে পারে না তখন নেগেটিভ বিষয়গুলোতে ঝুকে পড়ে। আর জানেনই তো, আমাদের বাঙালিরা নেগেটিভ জিনিসগুলো বেশি পছন্দ করে। কিন্তু একজন অভিনয় শিল্পীর উগ্র হওয়ার সুযোগ নেই। আপনি যতবেশি উগ্র হবেন, তত দ্রুত পতন হবে। … হয়েছেও তাই।
এ্যানী খানের দৃষ্টিতে, আগে যারা চিত্রনায়িকা ছিলেন, যেমন শাবানা, ববিতা, সূচরিত …তারা নিজেদেরকে আড়াল করে রাখতেন। তাদেরকে মানুষ দেখারও সুযোগ পেত না। তারা প্রত্যেকে একজন গুরু মানতেন। কিন্তু এখন কী হচ্ছে? অভিনয় জগতে ফেরার ন্যূনতম আর কোনো সম্ভাবনা নেই জানিয়ে এ্যানী বলেন, পেছনের জীবনের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়েছি। অনেকে বলেন, ইউটিউবে আমার অভিনিত আগের নাটক দেখা যায়। এখানে আমার কোনো হাত নেই। আল্লাহ ক্ষমা করেছেন বা করবেন কি না তা তো এখন বুঝার সুযোগ নেই। মৃত্যুর পরই তা জানা যাবে। তবে আল্লাহর ওপর আমি আস্থা রাখি। আল্লাহ ক্ষমা করবেন নিশ্চয়ই। আপনারাও দোয়া করবেন যেন বাকি জীবন ধর্মীয় ও ভালো কাজের মাধ্যমে অতিবাহিত করতে পারি।