রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৪ অপরাহ্ন

হাসপাতালে অক্সিজেন সংকটে মৃত্যুর ঘটনায় তোপে স্বাস্থ্যমন্ত্রী

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ৩ জুলাই, ২০২১

জাতীয় সংসদে আবারও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের লক্ষ্যবস্তু হলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সাতক্ষীরা ও বগুড়ায় অক্সিজেনের অভাবে মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনায় মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের সমালোচনা করেন তাঁরা। এক সংসদ সদস্য মন্ত্রীকে লজ্জাহীন উল্লেখ করে তাঁর পদত্যাগ দাবি করেন। গতকাল শনিবার সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী দিনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে সংসদ সদস্যরা মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের সমালোচনা করেন। এ সময় স্পিকার শিরীন শারমীন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় সংসদে ছিলেন। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে অধিবেশনকক্ষে দেখা যায়নি।
পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে অক্সিজেন সংকটের কথা প্রথম তোলেন বগুড়ার বিএনপির সংসদ সদস্য জি এম সিরাজ। তিনি বলেন, অক্সিজেনের অভাবে বগুড়ায় ২ দিনে ২৪ জন মারা গেছেন। কোভিডের জন্য নির্ধারিত মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল ২৫০ বেডের। এর মধ্যে আইসিইউ বেড আছে আটটি। কিন্তু হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা আছে মাত্র দুটি। ফলে বাকি আইসিইউ বেড কোনো কাজেই লাগছে না। তিনি জানান, বগুড়ায় ৩টি হাসপাতালের ৪৫০টি বেড রোগীতে ঠাসা। নতুন রোগী ভর্তি হতে পারছেন না। প্রতিটি হাসপাতালে ২০টি হাই ফ্লো অক্সিজেন সরবরাহের দাবি জানান তিনি।
বিরোধী দলের উপনেতা জাতীয় পার্টির জি এম কাদের দাঁড়িয়ে সার্বিক বিষয়ে বক্তব্য দেন। তবে তিনি শুরুতেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অব্যবস্থাপনার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বছর আগে যে অবস্থায় ছিল, এখনো সেখানেই আছে। কোনো উন্নতি হয়নি। তিনি তাঁর নিজ এলাকার হাসপাতালের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য যেসব চিঠি দিয়েছেন, সংসদে বক্তব্য দিয়েছেন, সেগুলো পুনরুল্লেখ করেন। তবে এগুলোর বাস্তবায়ন হয়নি বলে জানান। জি এম কাদের বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে তিনি ছয়-সাতবার ফোন দিলেও ধরেননি। মন্ত্রীর সহকারীদের ফোন করার পর মন্ত্রীকে জানানোর কথা বলি। কিন্তু মন্ত্রী ফোন করেন না। ভারতের স্বাস্থ্যব্যবস্থা আমাদের চেয়ে ভালো। এরপরও তারা নাজেহাল হয়েছে। আমাদের দেশে ভারতীয় ভেরিয়েন্ট সেভাবে ছড়িয়ে পড়লে আশঙ্কা করার অনেক কারণ আছে বলে তিনি মনে করেন।
বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, গত বুধবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী সংসদে যে বক্তব্য দিয়েছেন, এর মাধ্যমে গোটা হাউসকে অপমান করা হয়েছে। মন্ত্রী বলেছিলেন যে সংসদ সদস্যরা জেলা হাসপাতালের চেয়ারম্যান। তাঁরা দায়িত্ব পালন করেন না। মন্ত্রীর এই বক্তব্য ঠিক নয়। এই বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করা দরকার।
হারুনুর রশীদ আরও বলেন, সংসদে ৯০ ভাগ সংসদ সদস্য সরকারি দলের। তাহলে কি সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন না? তিনি বলেন, আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। অক্সিজেন সংকট দেখা দিয়েছে। এটা দেখতে হবে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে খাদ্যসহায়তা দিতে হবে।
জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন। তিনি বলেন, উনি (স্বাস্থ্যমন্ত্রী) যে কী মানুষ? লজ্জা-শরম নেই। তিনি এক দিনও কোনো হাসপাতালের ভেতরে গিয়ে দেখেননি কী হচ্ছে? তিনি শুধু জুম মিটিং করেন। মুজিবুল হক আরও বলেন, মন্ত্রী আমেরিকার সঙ্গে তুলনা করেছেন। আমাদের দেশে আমেরিকার চেয়ে কম লোক মারা যায়। এটা কি তাঁর কৃতিত্ব? এক বছর মন্ত্রী কী করলেন? ৩৭টি জেলায় অক্সিজেন নেই। মানুষ মারা যাচ্ছে।
জাপার কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘সাতক্ষীরায় অক্সিজেনের অভাবে এক ঘণ্টায় সাতজন ছটফট করে মারা গেলেন। নার্স, ওয়াড র্বয় ও চিকিৎসকেরা কী করলেন? তিনি বলেন, আইসিইউ, এসডিইউতে রোগী গেলে কোনো চিকিৎসা হয় না। সেখানে কী হয়, কেউ জানে না। মানুষের মৃত্যুর কি কোনো দাম নেই? একটা তদন্ত কমিটি করুন। এর প্রতিবেদন প্রকাশ করুন।’
জাপার রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, বুধবার মাস্কের দুর্নীতির কথা বলার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী মাস্ক কেনা হয়নি বলে দাবি করেন। অথচ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি প্রকল্পের পরিচালক নিজে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে বলেছেন, একটি সার্জিক্যাল মাস্ক কেনা হয়েছে ৩৫৬ টাকায়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী এই সত্য জিনিসটা এড়িয়ে গেলেন কেন? তিনি সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরার বিষয়টি নিশ্চিত করার দাবি জানান।
এদিকে অন্য এক খবরে প্রকাশ,হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা সঙ্কটে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে বৃহস্পতিবার ১৩ ঘণ্টায় সাত রোগীর মৃত্যুর পর এগিয়ে এসেছে এস আলম গ্রুপ। সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল ও শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে সঙ্কটাপন্ন রোগীদের জন্য ২০টি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা (উচ্চ মাত্রার অক্সিজেন সরবরাহ যন্ত্র) প্রদান করেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় এ ব্যবসায়ী গ্রুপ। গতকাল শনিবার (৩ জুলাই) দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে চিকিৎসা সরঞ্জাম বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এ টি এম নুরুজ্জামান সঞ্চয় এবং শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মোহসিনের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এসময় বগুড়া জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগিবুল আহসান রিপুসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এস আলম গ্রুপের পক্ষে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের বগুড়া অঞ্চলের প্রধান আব্দুস সোবহান এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের রাজশাহী অঞ্চলের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সেলিম উল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
ডা. এটিএম নুরুজ্জামান বলেন, ‘সরঞ্জামগুলো সঙ্কটাপন্ন রোগীর জীবন রক্ষায় সহায়ক হবে। সরঞ্জামগুলো আজকের মধ্যেই সংযোজন করতে প্রকৌশলীরা কাজ শুরু করেছেন। আগের দুটিসহ এখন নতুন ১০টি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার সংযোজন করা গেলে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের মোট সংখ্যা হবে ১২টি। এতে আইসিইউ ইউনিটটি স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। এর আগে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে আট শয্যার আইসিইউ ইউনিটে মাত্র দুটি ন্যাজাল ক্যানোলা ছিল। এতে রোগীদের চাহিদা অনুযায়ী উচ্চ মাত্রার অক্সিজেন সরবরাহ সম্ভব হচ্ছিল না।
মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক শফিক আমিন কাজল বলেন, ফেস্ক মাস্ক দিয়ে একজন করোনা রোগীকে প্রতি মিনিটে মাত্র পাঁচ লিটার অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব। অন্যদিকে রিব্রিদার মাস্ক দিয়ে প্রতি মিনিটে ১৫ লিটার অক্সিজেন সরবরাহ করা যায়। আর হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা দিয়ে একজন রোগীকে প্রতি মিনিটে ৬০ লিটার অক্সিজেন দেয়া যায়। যাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯০ এর ওপরে কেবল তাদের ফেস্ক মাস্ক দিয়ে অক্সিজেন সরবরাহ করে সারিয়ে তোলা সম্ভব। আর যাদের অক্সিজেনের মাত্রা ৮৭ এর নিচে তাদের জন্য অবশ্যই উচ্চমাত্রার অর্থাৎ হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার অক্সিজেন প্রয়োজন। তাছাড়া তাদের বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ে।
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ জানান, নতুন করে ১০টি হাই হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার সংযোজন হলে হাসপাতালের মোট ২২টি শয্যায় উচ্চ মাত্রায় অক্সিজেন সরবরাহ সম্ভব হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com