করোনা ঠেকাতেই নাভিঃশ্বাস ওঠার দশা জেলা প্রশাসনের। এর মধ্যে অতিবৃষ্টিতে নতুন করে দেখা দিয়েছে বন্যার আশঙ্কা। প্লাবিত হতে শুরু করেছে দেশের নি¤œাঞ্চল। এতে করে সামনে আরও কর্মব্যস্ত দিন কাটাতে হবে প্রশাসনকে। আবহাওয়া অধিদফতর ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। চলছে কঠোর লকডাউন। ধারণা করা হচ্ছে, সাত জুলাইয়ের পরও বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়তে পারে। জেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে পুলিশের সঙ্গে মাঠে কাজ করছে বিজিবি ও সেনাবাহিনীও। টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বাড়ছে বিভিন্ন নদীর পানি। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও পদ্মা অববাহিকায় উজান থেকে আসা পানি বাড়ছে দ্রুত। অন্তত ২০টি জেলার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে। যমুনার পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে গেলেই সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, বগুড়া ও জামালপুরের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি)। এমন পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে বলেছে সরকার। তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটাতে এরই মধ্যে নগদ টাকা ও ত্রাণসামগ্রী পাঠানো হয়েছে। সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে প্রশাসকদের সঙ্গে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সমন্বয় করে কাজ করছে আবহাওয়া অধিদফতর ও বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের সঙ্গে। এ কার্যালয়গুলোর সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাখা হয়েছে ‘স্ট্যান্ডবাই’। অর্থাৎ জরুরি প্রয়োজনে যেন মুহূর্তে যে কাউকে কাজে লাগানো যায়। এ তথ্য জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।
তিনি আরও জানান, ‘এই মুহূর্তে বড় কোনও ঝুঁকি নেই। তবে আমরা প্রস্তুতি রেখেছি। আবহাওয়া অধিদফতরের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছি। জরুরি খাদ্য সরবরাহে পর্যাপ্ত টাকা ও খাদ্য-সামগ্রী জেলা প্রশাসকদের কাছে দেওয়া আছে।’
ডা. এনামুর আরও জানিয়েছেন, ‘করোনা নিয়ে এমনিতেই জেলা প্রশাসকরা ব্যস্ত। তারওপর বন্যা ধেয়ে এলে চাপ বাড়বে। কিন্তু কিছু করার নাই। জেলায় ডিসিরাই তো সরকারের প্রতিনিধি। আমরা মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সতর্কাবস্থায় রেখেছি, যাতে স্বল্পতম নোটিসে তাদের কাজে যুক্ত করা যায়। পানি বাড়তে থাকলে বন্যার্তদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার প্রস্ততিও আছে। ডিসিদের সেভাবে তৈরি থাকতে বলেছি। বন্যায় যাতে গবাদিপশু- বিশেষ করে কোরবানির পশুর কোনও ক্ষতি না হয় সেদিকে বিশেষ নজর রাখার অনুরোধ করেছি।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে দিনাজপুরের ডিসি খালেদ মোহম্মদ জাকি জানিয়েছেন, ‘করোনার পাশাপাশি বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুত জেলা প্রশাসন। যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে বন্যা হতেই পারে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রেখেছি। ইউনিয়ন পর্যায়েও খোঁজ খবর রাখছি।’
সূত্র জানিয়েছে, বরাবরের মতো এবারও উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয় বন্যা বিস্তৃত আকার নিতে পারে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের নিচু এলাকায় বন্যা দেখা দিতে পারে। এবারের বন্যা গতবারের মতো দীর্ঘস্থায়ী হবে না বলে আশা করা হচ্ছে। তবে কুড়িগ্রাম, সিলেট, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জেও বন্যার প্রভাব পড়তে পারে বলে জানিয়েছে এফএফডব্লিউসি। শুক্রবার (২ জুলাই) সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরের গাণিতিক মডেলের তথ্যানুযায়ী, আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গের, সিকিম, আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরার নানা জায়গায় ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এ সময় উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকা ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পার্বত্য অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি দ্রুত বেড়ে কয়েকটি স্থানে আকস্মিক বন্যা দেখা দিতে পারে। এফএফডব্লিউসি’র বুলেটিনে বলা হয়- বর্তমানে ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি স্থিতিশীল থাকলেও আগামী ২৪ ঘণ্টায় সমতলে পানি বাড়তে পারে। গঙ্গার পানি কমলেও পদ্মার পানি বাড়ছে। যা ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকবে। আপার মেঘনার পানি স্থিতিশীল আছে। কেন্দ্রটি আরও জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের অন্তত ছয়টি স্থানে সর্বনি¤œ ৪৬ এবং সর্বোচ্চ ১০৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ৬৪ মিলিমিটার, বগুড়ায় ৪৬ মিলিমিটার ও সাতক্ষীরায় ১০৩ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। অন্যদিকে, ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতেও ব্যাপক বৃষ্টি হচ্ছে। জলপাইগুড়িতে ৯৩ মিলিমিটার, চেরাপুঞ্জিতে ৯০ ও ধুবরিতে ৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।